ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দাবি না মানলে ২ জানুয়ারি থেকে সব ভার্সিটিতে কাজ বন্ধ

পে স্কেলে বৈষম্য বন্ধের দাবিতে ভার্সিটি শিক্ষকদের আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

পে স্কেলে বৈষম্য বন্ধের দাবিতে ভার্সিটি শিক্ষকদের আল্টিমেটাম

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে মর্যাদাহানির অভিযোগ এনে বৈষম্য নিরসনের দাবি বাস্তবায়নে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি রবিবার একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি দিয়েছে, দলটি মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। হতে পারে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচী।’ শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ দাবি বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা প্রতারিত হয়েছি। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে রবিবার সকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি স্ব স্ব ক্যাম্পাসে একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে। তবে কেউ কেউ সমিতির বৈঠক ডেকে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানায়। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। সংবাদ সম্মেলনে পে স্কেল প্রস্তাবের পর থেকে টানা আট মাস ধরে চলা আন্দোলন ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে কথা বলেন ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালসহ শীর্ষ নেতারা। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে ফেডারেশন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর মতোই সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে। এ ছাড়া তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে জ্যেষ্ঠ সচিবদের যে জায়গায় রাখা হয়েছে সেই জায়গায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করা হবে। কিন্তু প্রকাশিত বেতন কাঠামোয় এর প্রতিফলন ঘটেনি বরং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হলে গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা আগের চেয়ে অর্ধেক কিংবা আরও নিচে নেমে আসতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সেটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের সরাসরি পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন শিক্ষক নেতারা। সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বলেন, আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে সুস্পষ্ট আশ্বাস পেয়েছিলাম কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিজেদের মর্যাদার প্রশ্নে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব নয়। এখন কঠোর আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান কঠোর আন্দোলন বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন? উত্তরে সভাপতি বলেন, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনটি দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বেতন কাঠামোর যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে তাতে প্রথম দুটিই প্রতিফলন ঘটেনি। অর্থমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু রাখেননি। উনার মতো বয়োজ্যেষ্ঠ এক মন্ত্রীর কথায় মূল্য না থাকলে আমরা আর কার ওপর আস্থা রাখব? মহাসচিব অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কয়েক দিন আগে সভা করে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। মাকসুদ কামাল শিক্ষকদের দাবি তুলে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আট মাসব্যাপী এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন আজ ধৈর্যচ্যুতির শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এরূপ বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চলমান স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা বিতর্কিত পরিপত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই ধরনের পরিপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়গণকে আমাদের পাঠানো পত্রের প্রেক্ষিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করছি। চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। জাতির জনকের সৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এ কোন অশুভ হস্তক্ষেপ না করার অনুরোধ করছি। মহাসচিব বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সকল আশা-আকক্সক্ষার প্রতীক। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে বরাবরের মতো আমরা তাঁর দ্রুত হস্তক্ষেপ ও শুভাশিস কামনা করি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাজমা শাহীন, অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভূইয়া, অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমদ, অধ্যাপক লাফিফা জামাল প্রমুখ। ছয় দিনের কর্মবিরতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ॥ দাবি বাস্তবায়নে জরুরী বৈঠক ডেকে আজ থেকে ছয় দিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, বেতন কাঠামোতে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণ না হওয়ায়, বৈষম্য দূরীকরণ ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে কর্মবিরতি চলবে। সভায় আশা প্রকাশ করে যে, অতিসত্বর এ সকল অসঙ্গতি দূর করে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়িত না হলে উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতির জন্য শিক্ষকরা কোন দায়ভার গ্রহণ করবে না। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণœ হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে ৫ দফা দাবি তুলেছে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির আহ্বানে বেলা ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষকরা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মোঃ সেকেন্দার আলী প্রধানমন্ত্রী বরাবর শিক্ষকদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। অষ্টম বেতন স্কেলে শিক্ষকদের হেয় করা হয়েছে বলে দাবি করেন অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা জানান, শিক্ষকদের যুক্তিসঙ্গত দাবি মানা না হলে ২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের বৈঠকে কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড ও মর্যাদা রক্ষা করে সুস্পষ্ট ঘোষণাসংবলিত গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (রাবিশিস)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম শিক্ষক সমিতির দাবি তুলে ধরেন। দাবি পূরণ না হলে লাগাতার কর্মবিরতিরও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাতিল সিরাজ, সমিতির সদস্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান, অধ্যাপক আনসার উদ্দীন, সৈয়দা নুসরাত জাহান ও আবদুল আলীম প্রমুখ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি অর্থমন্ত্রী বরং তাদের অমর্যাদা করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলাম প্রমুখ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বেতন কাঠামোসংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেটের সংশোধন এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় এবং আর কোন প্রকার শিথিলতা প্রদর্শন না করা চবি শিক্ষকদের অবস্থান বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অবস্থান জানান শিক্ষক নেতারা। দাবি তুলে ধরেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরসহ শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারী কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের দাবি ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারী কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স শাখার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারী কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ। রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মহাসমাবেশে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। শিক্ষক পরিষদের সভাপতি কাজী মোঃ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশের ৪৯৪টি বেসরকারী কলেজে ৫ হাজার ৫০০ জন শিক্ষক রয়েছেন। দীর্ঘ ২৩ বছরে এই কোর্সের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত না করায় এবং শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের পরিমাণ নির্ধারণ না করায় একদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের ন্যূনতম বেতনও দিচ্ছে না। অপরদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের খেয়াল খুশিমতো শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাসিক বেতন আদায় করছে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই বঞ্চিত হচ্ছে। মহাসমাবেশে শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় সরকারী কোষাগারে জমা নিয়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করে বঞ্চনার হাত থেকে বাঁচানোর আবেদন জানিয়েছেন।
×