ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যবিত্তরা খুঁজে বেড়িয়েছেন ছোট ফ্ল্যাট

রেকর্ড সংখ্যক প্লট-ফ্ল্যাট বুকিং

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

রেকর্ড সংখ্যক প্লট-ফ্ল্যাট বুকিং

আবাসন মেলার শেষ দিনেও বিক্রি বেড়েছে অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিহ্যাবের আবাসন মেলার শেষ দিনেও মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শকদের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পছন্দের বাড়ির সন্ধানে তারা স্রোতের মতো মেলায় গিয়েছেন। নিজেদের পছন্দের ফ্ল্যাট কেনার দিকেই ছিলেন বেশি ব্যস্ত। শেষ দিনে মেলায় এসে ঢুঁ মেরেছেন অনেকে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলায় এবার বিক্রির পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। মেলায় এসে গতকালই অনেকে বুকিং দিয়েছেন। মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টলের কর্মকর্তারা জানান, আগের কয়েকটি মেলার চেয়ে এবার ক্রেতাদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পেয়েছেন। এবার রেকর্ড সংখ্যক প্লট-ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন ক্রেতারা। জানা গেছে, রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী শীতকালীন আবাসন মেলার শেষ দিন ছিল রবিবার। শেষ দিনে মেলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, রবিবার শেষ দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রবেশ পথ ধরে পুরো মেলা প্রাঙ্গণে ছিল ক্রেতা-দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। এদিন সকাল থেকেই মেলায় মানুষের ভিড় ছিল বেশি। শেষ মুহূর্তে অনেক ক্রেতাই মেলায় এসে প্লট ও ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারপত্র নিয়ে গেছেন। এদিকে সারাদিনই ক্রেতাদের সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন বিক্রয় কর্মীরা। মেলায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টলেও ছিল বেজায় ভিড়। এ প্রসঙ্গে রিহ্যাব সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া জানান, মেলায় দর্শক সমাগম গতবারের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। স্টলগুলোতে ফ্ল্যাটের বুকিং দেয়ার জন্য তাদের আগ্রহ ছিল প্রচুর। গত চার দিনে যারা মেলায় এসে বিভিন্ন কোম্পানির ফ্ল্যাটের তুলনা করেছেন তাদের অনেকেই গতকাল ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছেন। ব্যস্ততার কারণে সময় করতে পারেননি আসিফ হাসান। রবিবার শেষ দিনে মেলায় এসে আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ড প্রোপ্রাইটিজের ফ্ল্যাটের জন্য বুকিং দিয়েছেন। তিনি জানান, আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল ফ্ল্যাট কেনার। মেলায় এসে পছন্দের পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। রিহ্যাবের মেলায় একসঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প দেখার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়েছে। এদিকে আবাসন কোম্পানির ফ্ল্যাটের ভিড়ে মানুষ হিমশিম খেলেও দাম বেশি বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক ক্রেতা। তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত পছন্দের ফ্ল্যাট না কিনে ফিরে গেছেন। রবিবার মেলায় বুকিং দিয়ে বেশ উৎফুল্লু ছিলেন একটি বেসরকারী কোম্পানিতে কর্মরত সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, মেলা শুরুর পর আগেও এসেছেন দু’বার। রবিবার নিজের জন্য একটি ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় অনামিকা কনকর্ড প্রকল্পে। স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ওঠার সিদ্ধান্ত থেকে এবার মেলায় বুকিং দিয়েছেন বলে তিনি জানান। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ যে কোন আকারের প্লট বুকিং দিলেই মোট দামের ৩৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে মেলায়। প্রতিষ্ঠানের বিপণন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামান বলেন, মতিঝিলে এ প্রকল্পের প্লট নিতে চাইলে তা মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে হস্তান্তর করা সম্ভব। রাজউক অনুমোদিত এ প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার প্লটের বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। বাকিগুলোর মধ্যে মেলায় অনেকেই বুকিং দিয়েছেন। রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শীতকালীন মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৭৪টি ফ্ল্যাট এবং ৪১২টি প্লট বিক্রি হয়েছে। এসব ফ্ল্যাট ও প্লটের আনুমানিক মূল্য ৩৯৭ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ওই মেলায় আগত ক্রেতাদের কাছ থেকে ৫২১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্থান (কমার্শিয়াল স্পেস) কেনার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। রিহ্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের এই পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাবে এবারের মেলায়। তারা জানান, প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি ও ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় এবার বেড়েছে। জানতে চাইলে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এবারের মেলায় ছোট ফ্ল্যাটের চাহিদা ছিল বেশি। এ ধরনের চাহিদা কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি। তিনি বলেন, আমাদের অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠান ৭০০-৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট তৈরি করেছে। এবার মেলায় এ ধরনের ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছেন বেশি ক্রেতারা। সামগ্রিকভাবে মেলা নিয়ে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আগের মেলাগুলোতে দর্শনার্থীরা বেশি এলেও এবার প্রকৃত ক্রেতা ছিলেন বেশি। তাই আশা করছি, ক্রেতাদের যে পরিমাণ সাড়া পাওয়া গেছে, তার অধিকাংশই ফ্ল্যাট বা প্লট কিনবেন। তিনি জানান, আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে রিহ্যাবের গ্রীষ্মকালীন আবাসন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। রিহ্যাবের সহসভাপতি (অর্থ) প্রকৌশলী সরদার মোহাম্মদ আমিন বলেন, আমরা এবারের মেলায় সমাগম যতটা প্রত্যাশা করেছি, তার চেয়ে বেশি হয়েছে। এর কারণ গত কয়েক বছর এ খাতের মন্দা ছিল, এখনও চলছে। এতে কোম্পানিগুলোর হাতে অনেক অবিক্রীত প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে। আর গ্রাহকদের চাহিদাও রয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এখন ফ্ল্যাট কেনার একটি উপযুক্ত সময়। দীর্ঘদিনের মন্দার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিনা লাভে বা নামমাত্র লাভে এখন পণ্য বিক্রি করছে। তবে গ্রাহকদের চাহিদা বাড়লেই এর দাম বেড়ে যাবে।
×