ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর সড়ক

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজধানীর সড়ক

ঢাকার মরণদশা নিয়ে হরহামেশাই নানা কথা উচ্চারিত হয়। বাঁচার পথ বের করার তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়। বিদায়ী বছরে ঢাকা দু’জন পৌরপিতা পেয়েছে। উভয় মেয়র বাজেটও ঘোষণা করেছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ঢাকা দক্ষিণের বাজেট ২ হাজার ৮৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং ঢাকা উত্তরের বাজেট ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার দুই অংশের বাজেটেই সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য। এটিকে আমরা সুবিবেচনাপ্রসূতই বলব। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও অত্যন্ত ঘনবসতির কারণে ঢাকায় চলাচল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন কৌশলেই যেন কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। সেখানে রয়েছে নগরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বাধ্যতামূলকভাবে সন্ধ্যার পরে গৃহস্থালি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত সকল ময়লা-আবর্জনা গ্রহণ ও সরানোর কাজ করা। সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়নের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ব্যবস্থা নিয়ে আসা। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও পরিবেশবান্ধব এলইডি সড়ক বাতি সংযোজন করা। সড়কগুলো দখলমুক্ত করা। তবে ঢাকাবাসীর কাছে এই কর্মপরিকল্পনার যে বিষয়টি বেশি আগ্রহের বিষয় হবে বলে ধারণা করা যায় সেটি হলো, ৩০০ রাস্তা মেরামত বা সংস্কারের বিষয়টি। এই কাজ আগামী বর্ষার আগেই সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র। কিছুটা উচ্চাভিলাষী মনে হলেও সঙ্কল্প দৃঢ় হলে এটি অসম্ভব বা অবাস্তব কিছু নয়। রাজধানীর সড়ক নানা ধরনের ব্যাধির শিকার। প্রথমত মাত্রাতিরিক্ত ভারাক্রান্ত থাকা। যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে হয় ঢাকার প্রতিটি রাস্তাকে। ফলে রাস্তাগুলো ক্ষয় হয় তাড়াতাড়ি। ছোট খানাখন্দ বড় গর্ত হয়ে উঠতে সময় লাগে না। তার ওপর বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি তো রয়েছেই। সামান্য বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে রাস্তার ওপর আরেক দফা ধকল যায়। পৃথিবীর যে কোন আধুনিক নগরীতে রুটিন অনুযায়ী রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলে। ফলে নগরবাসী কোন সমস্যায় পড়েন না। আমাদের দেশে রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে ওঠে বছরজুড়ে। আর সেসব মেরামত বা সংস্কারের কাজটি করা হয় কালেভদ্রে। তাই বছর শেষ না হতেই যখন ৩০০ রাস্তা মেরামতের ঘোষণা আসে তখন আশাবাদী হতে হয়। তবে একটি কথা, দেশের জলবায়ুর বিষয়টি স্মরণে রাখতে হবে। আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান। অপরদিকে ঢাকা মহানগরীকে জনসংখ্যার মারাত্মক চাপ সামলাতে হয়। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তা সর্বক্ষণ ধুলায় ধূসরিত হয়ে থাকে। এই ধুলার বিষয়টি অবশ্যই পরিকল্পনায় রাখতে হবে। রাস্তার ধুলা পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয় নাগরিকদের, পথ চলার বিড়ম্বনা তো রয়েছেই। প্রাচীন ঢাকায় ভিস্তিঅলারা হররোজ নগরীর রাস্তায় রাস্তায় পানি ছিটাত। আধুনিক ঢাকায় ধুলা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। আমরা আশা করব, রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও বিড়ম্বনামুক্ত রাখার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।
×