ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

রাজাকার হওয়া সহজ হয়ে যাচ্ছে কঠিন হয়ে উঠছে মুক্তিযোদ্ধা থাকা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজাকার হওয়া সহজ হয়ে যাচ্ছে কঠিন হয়ে উঠছে মুক্তিযোদ্ধা থাকা

(২৮ ডিসেম্বরের পর) এরপরও যদি শহীদ পরিবারের কোন সদস্য খালেদাকে সমর্থন করেন তা’হলে বলতে হবে তারা মনুষ্যপদবাচ্য নয়, ভারবাহী পশু মাত্র। ৪. খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগ প্রায় একই রকম। যারা মুক্তিযোদ্ধা নয় অথচ অপরাধী তারাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। এর অর্থ কী? অপরাধী যদি আক্ষরিক অর্থেও বলি, তা’হলে দেখা যাবে, প্রত্যেক দলেই তা আছে। এটি বাস্তব এবং সত্য আর এ ধরনের সংখ্যা বিএনপিতে বেশি। গত নির্বাচনের আগে তারা সারাদেশে যে তা-ব চালিয়েছে, অপরাধীর দল না হলে তা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই এ ধরনের উক্তি অশিক্ষিতের উক্তি। এগুলো বিতর্কের বিষয়ও নয়। খালেদা অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধাপরাধী পালে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই আছে অনেক যুদ্ধাপরাধী। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলামের কথা বলেছেন। এ সম্পর্কে আমরাও শুনেছি। জেনেশুনে আওয়ামী লীগ তা করলে অবশ্যই অন্যায়। এই অপবাদের কারণে কিন্তু মওলানা আর আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা পাননি। আওয়ামী লীগ যেহেতু এখন সরকারী দল, তাই বিভিন্ন দলের মানুষজন আওয়ামী লীগ করে, এর মধ্যে দু’একজন মানবতাবিরোধী অপরাধী থাকতেও পারে। তাদের পরিচয় পেলে অবশ্যই দল ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বাস সবারই। কিন্তু বিএনপি নিজেই তো যুদ্ধাপরাধীদের দল। বিএনপির দু’জন মন্ত্রী আবদুল আলীম আর সাকাচৌর দ- হয়েছে ট্রাইব্যুনালে, সাকাচৌর দ- কার্যকর করা হয়েছে। হাসিনার আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী কেউ আছে বলে জানা নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৯৭১ সালে রাজাকার হওয়ার চান্স কোথায়? নুরুল ইসলাম খালেদার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমি ছিলাম জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার প্রগলদীঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার স্কুলের অনেক ছাত্রই যুদ্ধে গিয়েছিল। অনেক সময় আমার ছাত্ররা রাতে আমার বাড়িতে আসত। আমি ওদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করতাম। তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাই। বিএনপি মহাসচিব আব্দুস সালাম তালুকদার আমার কাছে পরাজিত হয়। তার পরে সেই থেকে খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আমাকে রাজাকার বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে। তিনি বলেন, রাজাকার ছিল পাকিস্তানের একটা আধাসামরিক বাহিনী। তারা বেতনভুক্ত ছিল। আমি কখনও রাজাকার ছিলাম এটা কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। আমি রাজাকার ছিলাম, পারলে খালেদা জিয়া এটা প্রমাণ করুক বলে খালেদা জিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, আমার এলাকার প্রতিটি মানুষই জানে আমি কী ছিলাম। আমি রাজাকার-আলবদর ছিলাম কি-না, আমার এলাকার মানুষই বলবে। আমি ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সমর্থক ছিলাম। পরে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় হই। এরপর ’৯৬-তে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে সরিষাবাড়ি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন। [দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৩.১২.১৫] ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নুরুল ইসলাম যদি রাজাকার না হয়ে থাকেন তবে শুধু প্রতিবাদ নয়, আদালতেও যাওয়া উচিত তার। খালেদার এর পরের অভিযোগও মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নিয়ে। আওয়ামী লীগ আমলে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পায় না, বিএনপি আমলে পায়। আমার যদ্দূর মনে পড়ে, খালেদার আমলে আমি আর শাহরিয়ার কবির যৌথভাবে এক লেখায় বলি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ টাকায় করতে। বিএনপি আমলে তো অনেকেই আমাদের নিয়ে তখন হাসাহাসি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু সেই ভাতা এখন ১০,০০০ টাকা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদানের ব্যবস্থা শেখ হাসিনাই করেছেন। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা অভিধা হাসিনাই দিয়েছেন। খালেদা কিছু একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন নইলে যা বলেছেন তার কোন অর্থ খুঁজে পাই না কেন? তার মতে, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারা আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা। ক্ষমতায় গেলে এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।’ এর অর্থ কী? এই তারা কারা? যদ্দূর জানি, খালেদার আমলে ৩০ হাজার জাল মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তবে, পরের অভিযোগটি শুনে মনে হচ্ছে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তা হলো আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই, যারা আছে তারা ভুয়া, দেশের প্রতি তাদের মায়া নেই। স্বাধীনতাও তারা চাননি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা না চাইলে, নেতৃত্ব না দিলে বাংলাদেশ মুক্ত হতো? তিনি আজ একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে এসব অবাঞ্ছিত কথা বলতে পারতেন? কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন? তার স্বামী কীভাবে যুদ্ধ করেছিলেন? কার কমান্ডে? বেতন পেতেন কোত্থেকে? তিনি কি তা’হলে যুদ্ধ করেননি? করলে কি পাকিস্তান কমান্ডের অধীনে যুদ্ধ করেছেন? বেতন কি সেখান থেকে নিতেন? এ ধরনের বক্তব্য দিলে তো এসব প্রশ্ন উঠবে। আওয়ামী লীগকে তিনি ভাবছেন এ সব বক্তব্য দিয়ে ছোট করলেন। এতে তিনি নিজেকে তো বটেই, নিজের দলকে, স্বামীকে ছোট করলেন। কমনসেন্স শব্দটি কি অভিধান থেকে উঠে গেল? শেষ বক্তব্যে, বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি তা প্রমাণের জন্য একে খন্দকারের এবং তাজউদ্দীন কন্যার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। একে খন্দকারের বই নিয়ে এর আগে জনকণ্ঠে অনেক আলোচনা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। একে খন্দকার স্বাধীনতার ঘোষণা শোনেননি তাতে কী আসে-যায়। অনেকেই এই বক্তব্য জেনেছেন, বিদেশী পত্রিকাগুলো জেনে তা প্রকাশ করেছে। স্বাধীনতার ঘোষণা কে শুনেছে তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু বা বাংলাদেশ সরকারের কোন মাথাব্যথা ছিল না। স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই জেনারেল শফিউল্লাহ প্রতিরোধে নেমে গিয়েছিলেন আর তার সতীর্থ জিয়া পাকিস্তানীদের অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন এবং সব কিছু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণার পরেই। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত। আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, বিজয়ের পর যখন সংবিধান হয় তখন ২৬ মার্চের ঘোষণাকেই ভিত্তি ধরা হয়েছিল। না হলে ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করি কেন? ধরা যাক আমি হরিদাস পাল স্বাধীনতার ঘোষণা শুনিনি, তাতে কি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা দেয়া আটকে ছিল, না মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ ছিল। একে খন্দকার শোনেননি এ যেন ইতিহাসের এক বিরাট বিচ্যুতি! শরমিনের বইতেও ট্রান্সমিটারে ঘোষণার কথা আছে। আর একে খন্দকার আওয়ামী লীগের শুধু প্রিয় ছিলেন না, সব শাসনামলেই তিনি প্রিয় ছিলেন। প্রত্যেক আমলেই সরকারের উচ্চপদে ছিলেন। আসলে বেগম জিয়া যা বলতে চাইছেন তা হলো, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হয়নি। অন্তত বঙ্গবন্ধু করেননি। যদি স্বাধীনতার ঘোষণা কেউ করেই থাকে তা’হলে তা করেছেন জেনারেল জিয়া। স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলাদেশ সরকারকে আইনগত ভিত্তি দিয়েছিল; কারণ, তা দেয়া হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে এবং ঘোষণাটি স্বীকৃত হয়েছিল এ কারণে যে, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের নেতা সেটি দিয়েছিলেন। যে কারণে এটি গৃহযুদ্ধ না হয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ। বসনিয়া যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করে, এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন শাহরিয়ার কবির, তখন সার্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন করে এই বলে যে, বসনিয়ার এ ঘোষণা দেয়ার অধিকার নেই। আন্তর্জাতিক আদালত রায়ে বলে, এ অধিকার তার আছে কেননা যিনি দিয়েছেন তিনি সে দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রধান। মেজর জিয়ার মতো সামান্য মেজরের ঘোষণা হলে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আইনে বৈধতা পেত না। জিয়ার ঘোষণার কারণে তার কোর্ট মার্শালের কথা হয়েছিল এটি কি জানেন? কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে তা আর করা হয়নি। বেগম জিয়া আসলে নাকচ করতে চান ১৯৭১, তা’হলে বাংলাদেশের আইনগত ভিত্তি থাকে না, বাংলাদেশ যুক্ত হয় ১৯৪৭-এর সঙ্গে, পাকিস্তানে থেকে যায়। খালেদার স্বপ্ন পূরণ হয়। তার এই স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, ১৯৭১ সালের সরকার আর সংবিধান- এখানেই তার আপত্তি। ৫. অনেকে বলতে পারেন এগুলো রাজনৈতিক কথাবার্তা, এগুলোতে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। রাজনৈতিক কথাবার্তা মানে কি মূর্খের মতো কথা বলা, দেশের ভিত্তি ধরে টান দেয়া? তা তো হতে পারে না। বেগম জিয়া আলটপকা এগুলো বলে ফেলেছিলেন, বা কোন ঘোরের মধ্যে থেকে বলেছিলেন- এ যুক্তিও ধোপে টেকে না। আগেও তিনি ও তার নেতৃবৃন্দ এ ধরনের কথা বলেছেন। আমি মনে করি তিনি দু’কারণে খুব ভেবেচিন্তে এ কথা বলেছেন। এক. তিনি পাকিস্তানের হয়ে রাজনীতি করেন। তার স্থায়ী কমিটির সদস্য, পাকিস্তানের আইএস আইয়ের প্রতিনিধি সাকাচৌর ফাঁসি হয়েছে। জামায়াত পাকিস্তানের দল। তাদের মূল দল পাকিস্তানে। এখনও শাখা হিসেবে তারা কাজ করে। পাকিস্তানের মূল দলের প্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় দলের সমন্বয় করতেন সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। তারও ফাঁসি হয়েছে। দু’টি মূল্যবান ‘এ্যাসেট’ বা সম্পদ হারানোর জন্য পাকিস্তান ক্ষুব্ধ। সব ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী আচরণ করেছে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে। প্রকাশ্যে এও স্বীকার করেছে এরা তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী। বিএনপি-জামায়াত ও পাকিস্তানমনা ২০ দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়া। পাকিস্তানের পক্ষে তিনি কিছু না বললে পাকিস্তানের ইজ্জত থাকে না, তাদের বক্তব্যও যথার্থতা হারায়। সুতরাং পাকিস্তান যা ভাবে তিনিও তা ভাবেন এবং পাকি নির্দেশেই এই বক্তব্য রেখেছেন বিজয়ের মাসে। পাকিস্তান বিজয়ের মাস গ্রহণ করতে পারে না। সে কারণেই খালেদা পাকিস্তানকে সান্ত¡না দিয়েছেন এ মাসে এ ধরনের বক্তব্য রেখে। দুই. পৌর নির্বাচনে লড়াইটা ফের দাঁড়িয়ে গেছে স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষের শক্তিতে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় জামায়াত নির্বাচন করতে পারছে না। তারা বিএনপির ওপর খানিকটা ক্ষুব্ধ। জামায়াতসহ আরও কয়েকটি পাকিস্তানীমনা দল জোটীয় সভায় যোগ দেয়নি। খালেদা এ সব কথা বলে বিভিন্ন ফ্যাকশনে বিভক্ত পাকিস্তানী বাঙালীদের একত্রিত করতে চাইলেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে। তিনি বলতে চাইছেন, তিনি এখনও পাকি-বাঙালীদের নেতৃত্বে আছেন। মাভৈ! ভয় নেই। পাকি সৈনিকরা এগিয়ে চল। এ বক্তব্য রাষ্ট্র সমাজ মেনে নেবে কিনা বা মেনে নিচ্ছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। স্বাধীনতা পক্ষের শক্তিরা উচ্ছৃঙ্খল হলে পরের দিনই পাকি বাঙালীদের অর্থাৎ বিএনপির অফিস ঘেরাও করত, বিএনপির মতো ভাংচুরে নেমে যেত এবং তা খুব একটা অযৌক্তিক হতো না। কিন্তু নির্বাচন বা গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা সংযম দেখিয়েছে, সেটি প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এ ধরনের স্বাধীনতা, সংবিধানবিরোধী উক্তি তো খালেদা বার বার করবেন, করছেনও। তার সেদিনকার বক্তব্য, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌত্বের বিরোধী, আদালতের রায়বিরোধী, সংবিধানবিরোধী। অন্য দেশে এ ধরনের বক্তব্য কোন রাজনৈতিক নেতা দিলে তিনি রাজনীতি করার অধিকার হারাতেন তো বটে, কারাগারে থাকতে হতো। এরা যা করছে বা বলছে তা রাজনীতি নয়, এক ধরনের ইতরামি। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এধরনের বক্তব্য বার বার দেয়ার পরও এই মহিলা রাজনীতি করার অধিকার হারাননি। আমাদের প্রশ্ন- যিনি বাংলাদেশ স্বীকার করেন না, তার রাজনীতি করার অধিকার বাংলাদেশে আছে কিনা? গণতন্ত্রের নামে এ অনাচার চলতে দেয়া যায় কিনা? দেশের মৌলনীতির বিরুদ্ধে বলা রাজনৈতিক অধিকার কিনা? বিদেশী পয়সা খেয়ে যারা এনজিও করেন এবং মানবাধিকার বা গণতন্ত্র সম্পর্কে টিভি-রেডিওতে পরামর্শ দেন তাদের কিন্তু কখনও এ সব ইতরামি বা দেশের বিরুদ্ধে কেউ বললে প্রতিবাদ করতে দেখি না। হয়ত বিদেশী পয়সা খান দেখে দেশের বিরুদ্ধে কে কি বলল তাতে আসে যায় না। আমরা রাজনৈতিকভাবে এরকম ইতরামির রাজনীতি প্রতিহত করার কথা বলি। কিন্তু এ দেশে যতদিন স্বাধীনতা পক্ষের আর স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি থাকবে ততদিন এ ধরনের নোংরামির রাজনীতি থাকবেই। সে জন্য আমরা জঙ্গীবাদের মূল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে বলি। কিন্তু জঙ্গীবাদের এখন এজেন্সি একমাত্র জামায়াতের নয়, বিএনপিও এর দোসর। আমাদের বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা বিএনপি-জামায়াতকে এক বলতে রাজি নন। জামায়াতকে তারা গালাগাল করতে রাজি, নিষিদ্ধও, কারণ জামায়াত ১৯৭১ সালে যা করেছে তা কখনও স্মৃতি থেকে মোছা যাবে না। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে তো এখনও পাকিস্তানের জন্য খানিকটা জায়গা আছে। চলবে...
×