ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় বছর এবং নয় ম্যাচ পর এই আসরে আবারও এলো জয়, বাংলাদেশ ৩-০ ভুটান

সান্ত¡না- আক্ষেপ বাড়ানো জয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

সান্ত¡না- আক্ষেপ বাড়ানো জয়

রুমেল খান, ত্রিবান্দ্রাম, কেরল থেকে ॥ শুধুই সান্ত¡না- জিতেও কোন লাভ হলো না বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের। এ জয়ই আক্ষেপই বাড়াল কেবল! তারপরও সেই পুরনো প্রবাদটি মনে করে কিঞ্চিৎ আত্মপ্রসাদ লাভ করা যেতেই পারে- ‘শেষ ভাল যার, সব ভাল তার।’ সাফ সুজকি কাপে ‘বি’ গ্রুপ থেকে শেষ চারে যেতে না পারলেও প্রথম দুই ম্যাচে লজ্জাকর হারের জ্বালা কিছুটা হলেও জুড়িয়েছে সোমবারের ম্যাচে। বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছে ভুটানকে। সাখাওয়াত হোসেন রনি জোড়া গোল করেন। অপর গোল করেন তপু বর্মণ। গ্রুপে চার দলের মধ্যে তৃতীয় হয়েছে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ দল। পয়েন্ট ৩। আর সমান ম্যাচে ভুটানের কোন পয়েন্ট নেই। ফলে এই সাফ থেকে রিক্ত হস্তেই বিদায় নিতে হলো ‘ড্রাগন বয়েস’ দলকে। ভাবা যায়, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের এই ‘সবেধন নীলমণি’ জয়টা এসেছে পাক্কা ছয় বছর বিশ দিন এবং নয় ম্যাচ পর! সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ শেষবার জিতেছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেবার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে এনামুল হকের জোড়া গোলে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। এরপর সেমিতে ভারতের কাছে ১-০ গোলে সেই যে পরাভূত হয়, তারপর থেকে ২০১১, ২০১৩ এবং চলমান আসর মিলিয়ে টানা নয় ম্যাচে কাক্সিক্ষত জয়ের মুখ দেখেনি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। অবশেষে ভুটান বধে মিলল সেই অধরা সাফল্য। সাফ সুজকি কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আগেই। সাফে ব্যর্থতার কারণে বাফুফে এর কারণ খুঁজতে গঠন করেছে তদন্ত কমিটি। কোচ মারুফুল হক পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। অধিনায়ক হিসেবে মামুনুল খেলে ফেলেছেন তার শেষ ম্যাচটি। এক যুগ আগে (২০০৩) সর্বশেষ সাফে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন খান খান হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ভুটানকে হারিয়ে একমাত্র জয় কুড়িয়ে ইজ্জতটা নিয়ে কোনমতে দেশে ফেরার। সেটা করতে পেরেছে ভালমতোই। কিন্তু তারপরও ভুটানের বিপক্ষে এই স্কোরে জেতাতে মন ভরেনি ফুটবলপ্রেমীদের। কেননা, দশজনের ভুটানের বিপক্ষে অন্তত সাত-আট গোলে জেতা উচিত ছিল বলে অভিমত তাদের। ফিফার র‌্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য ভুটানের চেয়ে বাংলাদেশই এগিয়ে। ভুটান ১৮৮, বাংলাদেশ ১৮২। পাঁচ ম্যাচের মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় চারটি, বাকি ম্যাচ ড্র। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৪-০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে ৩-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। পক্ষান্তরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে ভুটান হারে নেপালের কাছে ৩-১ এবং আফগানিস্তানের কাছে ৩-০ গোলে। শুধু সাফ ফুটবলের জন্যই দায়িত্ব পেয়েছিলেন মারুফুল হক। বাফুফে তখন বলেছিল সাফের শিরোপা জিতলে দায়িত্বের মেয়াদ বাড়বে, নইলে বিদায়। শেষমেষ নিজ থেকেই ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন মারুফুল। তবে বিদায়ের আগে ভুটানকে হারিয়ে সান্ত¡নার জয় উপহার দিতে পারলেন তিনি। সোমবারের ম্যাচে ৬ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে রনির পাস বক্সে পেয়েও তা থেকে গোল করতে পারেননি ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। ৮ মিনিটে অধিনায়ক মামুনুলের কর্নার থেকে বক্সে বল পেয়ে হেডে লক্ষ্যভেদ করে উল্লাসে মাতেন তপু (১-০)। ১৩ মিনিটে অপর ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবনের শট পোস্টের বাইরের জালে লেগে ফেরত আসে। ১৬ মিনিটে ভুটানের ফরোয়ার্ড চেঞ্চুর শট অল্পের জন্য খুঁজে পায়নি জাল। ২২ মিনিটে ভুটানের বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। কিন্তু পেনাল্টি সীমানায় তাকে অবৈধভাবে বাধা দেন জিগমি দর্জি। ভারতের রেফারি ব্যানার্জী প্রাঞ্জল পেনাল্টির নির্দেশ দেন। আরেক ডিফেন্ডার চিমি দর্জি এই সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে ব্যানার্জী প্রাঞ্জলকে ধাক্কা দেন। রেফারি লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন চিমিকে। রনি পেনাল্টি শট থেকে গোল করতে ভুল করেননি (২-০)। ৪০ মিনিটে রনির জোরালো শট আটকে দেন নেপালের গোলরক্ষক হরি গুরুং। ৪৭ মিনিটে বক্সের ভেতর কৌনিক শট নেন হেমন্ত। কিন্ত অল্পের জন্য জালে জড়ায়নি। ৬১ মিনিটে ভুটানের সেরিং দর্জির শট ছিল নিশ্চিত গোল। কিন্তু শহীদুল বল ঢুকতে দেননি জালে। ৬৬ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে দুই ডিফেন্ডারকে গতিতে হারিয়ে ভুটানের বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে গড়ানো শটে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন রনি (৩-০)। ৭৪ মিনিটে ডানদিক থেকে বদলি উইঙ্গার জাহিদ হোসেন যে গড়ানো ক্রসটি করেন, বক্সের ভেতরে থাকা জীবন তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন। ৭৭ মিনিট রনি গোল করলেও রেফারি সেটা অফসাইড বলে বাতিল করলে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন রনি। ৯০ বক্সে জাহিদের ক্রস থেকে বল পেয়ে রনির উঁচু শটটি ভুটানি গোলরক্ষক ফিস্ট করে দলকে বাঁচালেও ম্যাচে হারা থেকে বাঁচাতে পারেননি। এ জয়ে যেহেতু কোন লাভ হয়নি, তাই খেলা শেষে ভাবলেশহীন চেহারা নিয়েই মাঠ ছাড়তে দেখা যায় বাংলাদেশ দলকে।
×