ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ নুরুজ্জামান;###;আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ২০১৫

রেকর্ডময় বিশ্বকাপ ও সাঙ্গা-মাহেলার বিদায়

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

রেকর্ডময় বিশ্বকাপ ও সাঙ্গা-মাহেলার বিদায়

২০১৫ সালে বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচিত ঘটনার মধ্যে রেকর্ডময় বিশ্বকাপ অন্যতম। ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শিরোপা পুনরুদ্ধার করে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলে সহযোগী আয়োজক নিউজিল্যান্ড। তার আগে জানুয়ারিতে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরিরর রেকর্ড গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স। বছরজুড়ে শতাধিক সেঞ্চুরিও ছিল আলোচিত। এ বছরই অভিষেকের পর থেকে টানা টেস্ট খেলার নতুন রেকর্ড গড়েন নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। আলোচনায় ছিল লঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের বিদায় ফেব্রুয়ারিতে বসেছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। নিজেদের মাঠে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপাটাও ঘরে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়াই। রানবন্যার এই বিশ্বকাপ দেখেছে বেশ কয়েকটি রেকর্ড। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি, টানা চার সেঞ্চুরি, দ্রততম ফিফটিসহ বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে এবার। বিশ্বকাপে টানা চার সেঞ্চুরি রেকর্ডটা গড়েন কুমার সাঙ্গাকারা। বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটেই টানা চার সেঞ্চুরির নজির দ্বিতীয়টি নেই। এছাড়া আগের দশ আসরে কোন ব্যাটসম্যান যেটি করে দেখাতে পারেননি সেই ডাবল সেঞ্চুরি এবারের বিশ্বকাপে দুবার দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব! গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৫ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং-দানব ক্রিস গেইল। সেদিন ১৩৮ বলের ডাবল সেঞ্চুরিটি ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও। আর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ডাবল সেঞ্চুরি করেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল। খেলেন অপরাজিত ২৩৭ অতিমানবীয় এক ইনিংস। বিশ্বকাপে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন ব্রেন্ডান ম্যাককুলাম। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন কিউই অধিনায়ক। এ ছাড়া দ্রুততম ১৫০ রানের (৬৪ বলে) রেকর্ড গড়েন এবি ডি ভিলিয়ার্স। বিশ্বকাপ তো বটেই ওয়ানডে ক্রিকেটেই দ্রততম ১৫০ রানের রেকর্ড এটি। এই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিরও রেকর্ডও হয়েছে। এই আসরে মোট ৩৮টি সেঞ্চুরি দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৪টি সেঞ্চুরি হয়েছিল। বিশ্বকাপটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্যও। নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে টাইগাররা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিও আসে এই আসরেই। তাও আবার একটি নয়, টানা দুটি সেঞ্চুরি করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেটে পুরো বছরই স্বপ্নের মতো কেটেছে মাশরাফি ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। বিশ্বকাপের পর টেস্ট ক্রিকেট থেকেও অবসর নেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সাঙ্গা। আর আগেই পাঁচদিনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন জয়া। তবে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সাঙ্গা-জয়ার একসঙ্গে বিদায় নেয়া সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। বিশ্বকাপে টানা চার সেঞ্চুরির কীর্তিগাথার পর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শেষ ম্যাচ খেলেন সাঙ্গাকারা। জয়াবর্ধনেও এদিন শেষবার ব্যাট হাতে নামেন। ম্যাচটিতে ম্যাচের মাঝপথে যে বৃষ্টির ফোটা ঝরেছিল, সেটা বুঝি দুই গ্রেটের বিদায়ের অশ্রু হয়েই এসেছিল! ম্যাচ শেষে সেই বৃষ্টির চেয়েও করুণ হয়ে উঠেছিল জয়া-সাঙ্গার মুখ। বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন দুই বন্ধু, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সফরই শেষ। কথা রেখে তল্পিতল্পা গুছিয়ে নেন তারা। সবশেষ এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারও ছিলেন মাহেলা-সাঙ্গাকারা। বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে জয়াবর্ধনের নামের পাশে ছিল ৪৪১ ম্যাচ। আর সাঙ্গাকারার নামের পাশে ৩৯৭ ম্যাচ। বিশ্বকাপেই ৪০০তম ম্যাচের মাইলফলক অতিক্রম করেন সাঙ্গা। ম্যাচটি তিনি স্মরণীয় করে রাখেন অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। বিদায়ের ম্যাচটি ছিল সাঙ্গাকারার ৪০৪ আর জয়াবর্ধনের ৪৪৮তম। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেট দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ডটা হয়েছে এ বছরই। বছরের শুরুতেই রেকর্ডটি গড়েন এবি ডি ভিলিয়ার্স। জানুয়ারিতে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে মাত্র ৪৪ বলে ১৪৯ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। ওয়ান্ডাররার্সে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন মাত্র ১৬ বলে, আর সেঞ্চুরি ৩১ বলে। ডি ভিলিয়ার্স ভেঙে দেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসনের করা ৩৬ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড। এ ছাড়া প্রোটিয়া অধিনায়ক ছুঁয়েছিলেন রোহিত শর্মার এক ইনিংসে ১৬ ছক্কার রেকর্ডও। সেদিন ডি ভিলিয়ার্স তো সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনে নেমে। তার আগে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো ও হাশিম আমলাও ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার। আর এই তিনজনের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ করেছিল ২ উইকেটে ৪৩৯ রান। ব্যাটসম্যানদের জন্য এ বছরটা ছিল বেশ পয়মন্ত। বছরের শুরু থেকেই ওয়ানডে ক্রিকেট রানবন্যায় ভেসেছে। তাই তো এই প্রথমবারের মতো এক বছরে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি দেখেছে ওয়ানডে ক্রিকেট। বিরল এই রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও। আরও স্পষ্ট করে বললে মুশফিকুর রহিমের নাম। নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মুশফিকের করা সেঞ্চুরিটিই ছিল এ বছর ওয়ানডে ক্রিকেটের শততম সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে অনেক রংই দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। তবে গত নবেম্বরে যেটা দেখেছে, সেটা রীতিমতো বিপ্লব! প্রথম কোন টেস্ট খেলা হয়েছে লাল বল ছাড়া। প্রথম কোন টেস্ট খেলা হয়েছে দিবারাত্রির। গত ২৭ নবেম্বর এ্যাডিলেড ওভালে ইতিহাসের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল দুই প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আর খেলা হয়েছে গোলাপি বলে। যেখানে লাঞ্চ সেশন বলেও কিছু ছিল না, চা-বিরতির পর একেবারে ডিনার সেশন। ইতিহাস গড়া ম্যাচটি অবশ্য তিন দিনেই জিতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দিন দিন টেস্ট ক্রিকেটে দর্শকশূন্যতা বেড়ে যাচ্ছে। টেস্টে দর্শক ফিরিয়ে আনতেই তাই দিবারাত্রির টেস্টের এই বৈপ্লবিক চিন্তা। ২০০৪ সালে হ্যামিল্টনে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের। ১১ বছর পর সেই হ্যামিল্টনেই অনন্য এক ইতিহাস গড়েছেন নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যান। যে রেকর্ড আবার টেস্ট ইতিহাসেই প্রথম! অভিষেক থেকে সবচেয়ে বেশি টানা টেস্ট খেলার রেকর্ড এখন তারই। গত ১৯ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এই রেকর্ড গড়েন ম্যাককুলাম। অভিষেক থেকে এটা তার টানা ৯৯ টেস্ট। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে (৯৮ টেস্ট)। এবার অভিষেক থেকে টানা শততম টেস্ট খেলার অপেক্ষায় কিউই অধিনায়ক।
×