ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠ্যপুস্তক উৎসবের প্রস্তুতি শেষ ॥ বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পাবে সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

পাঠ্যপুস্তক উৎসবের প্রস্তুতি শেষ ॥ বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পাবে সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে সাড়ে ৩৩ কোটি নতুন পাঠ্যবই। উপজেলা ও স্কুলপর্যায়ে পৌঁছে গেছে মোট বইয়ের শতভাগ। নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবারই স্কুল খোলা রেখে সূচনা হবে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের। সপ্তাহব্যাপী উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থী বিনামূল্যের ঝকঝকে নতুন বই পাবে বলে সকলকে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। জানা গেছে, গেল বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ভালভাবে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে ছাপা হয়েছে চাহিদার তুলনায় অন্তত ৫ শতাংশ বেশি বই। কোথাও সঙ্কট দেখা দিলে অতিরিক্ত এ বই সেখানে সরবরাহ করা হবে। বছরের প্রথম দিন মিরপুর সরকারী ন্যাশনাল বাংলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এবং গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করবেন। বই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা শোনা গেলেও মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নিজ দফতরে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেনকে পাশে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি নতুন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে। এখন কেবল উৎসবের অপেক্ষা। বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মধ্য দিয়ে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে এসব বই বিতরণের সকল আয়োজন শেষ হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১ জানুয়ারি সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করা হবে। ওই দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হবে। এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০টি বই এবং বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করবে সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করছে। ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যের বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ এবার একটু দেরিতে শুরু হয়েছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা ১০ শতাংশের মতো অর্থ দেয় এ কাজে। তারা শর্ত দিয়েছিল যা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় কাজ দেরিতে শুরু করতে হয়। তবে কিছু সমস্যা থাকলেও প্রাথমিকের সব বই ছাপানো শেষ হয়েছে, উপজেলা পর্যায়েও এসব বই পৌঁছে গেছে। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আমাদের সব বই ছাপা সম্পন্ন হয়ে গেছে। সব বই শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমাদের বই যথাসময়ে পৌঁছে গেছে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদদের অংশ নেয়ার অনেুরোধ জানান মন্ত্রী। বিনামূল্যের বইয়ের কাগজ ও ছাপার মান খারাপ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষামন্ত্রী। এনসিটিবি বই বিতরণের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য বই নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বই ছাপা ও সরবরাহের কাজ একপ্রকার শেষ। বছরের প্রথম দিনই দেশের সব ছাত্রছাত্রী নতুন চকচকে বই পাবে বিনামূল্যে। এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ করা হবে। এ উৎসব চলবে নতুন বছরের শুরু থেকে সপ্তাহব্যাপী। দেশের স্বার্থে সরকারের এই পরিকল্পনা সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল। তিনি জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের জন্য প্রায় ২১ কোটি ৯২ লাখ, প্রাথমিকের জন্য ১০ কোটি ও প্রাক-প্রাথমিকের জন্য প্রায় ৬৬ লাখসহ মোট ৩৫ কোটি বই ছাপা হয়েছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৮৩ সাল থেকে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে কিছু বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ শুরু করে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত কয়েকটি ক্যাটাগরির কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক নতুন ও অর্ধেক পুরনো পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়া হতো। এসব বইও সময়মতো শিক্ষার্থীরা পেত না। বই পেতে পেতে মার্চ/এপ্রিল পার হয়ে যেত। এতে ক্লাস শুরু হতেও অনেক দেরি হতো। প্রতিবারই অসাধু প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ত পাঠ্যবই ছাপার কাজ। সময়মতো বই না পাওয়ায় এবং উচ্চ দরে বাজার থেকে বই কিনতে না পেরে প্রতিবছর ব্যাপকসংখ্যক ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে পড়ত। পরবর্তীতে ঝরেপড়া রোধ, শতভাগ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনা, দরিদ্র-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আওতায় আনতে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবই নিশ্চিত করতে বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ পালনের উদ্যোগ নেয়। এতে সুফলও এসেছে। কমেছে ঝরেপড়ার হার। বেড়েছে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির হার। ২০১০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের দুই কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ জন শিক্ষার্থীকে ১৯ কোটির অধিক বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। পরে একটি বিশেষ মহল এনসিটিবির গুদামে আগুন লাগিয়ে দেয়। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০১১ ও ২০১২ সালে বইয়ের সংখ্যা ২৩ কোটিতে উন্নীত করতে হয়। পরের বছর প্রায় ২৭ কোটি। আর ২০১৪ সালে দেয়া হয়েছিল সাড়ে ৩১ কোটি কপি পাঠ্যবই। সর্বশেষ চলতি বছর বই দেয়া হয় ৩৩ কোটি। পে স্কেল ইস্যুতে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের চেষ্টা শিক্ষামন্ত্রীর ॥ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি শীঘ্রই দ্বিতীয় সভায় বসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে অর্থ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক আয়োজন করতে বলেছি। তিনি একমত হয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আজই (গতকাল মঙ্গলবার) কথা বলব। কমিটির সভা আহ্বান নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে আলোচনা করে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সে উদ্যোগ আমরা নেব। বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি চলতি মাসের মধ্যে মেনে না নিলে একযোগে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। সরকারী কলেজের শিক্ষরাও কর্মসূচী দিয়েছেন। শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এ পরিস্থিতি চলতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে শিক্ষকদেরও বুঝতে হবে আমরা তাদের বিষয়টি দেখছি; কাজ করছি।
×