ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাঈদীর আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ যে কোন মুহূর্তে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

সাঈদীর আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ যে কোন মুহূর্তে

আরাফাত মুন্না ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সুপ্রীমকোর্ট থেকে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত দেইল্লা রাজাকার খ্যাত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ করেছেন বিচারপতিরা। ফলে যে কোন সময়ই কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হতে পারে। সুপ্রীমকোর্টের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে বিচারিক আদালত (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) কুখ্যাত এ যুদ্ধাপরাধীকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল। তবে সুপ্রীমকোর্টে এসে পাঁচ বিচারপতির আপীল বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতের ভিত্তিতে এই যুদ্ধাপরাধীর সাজা কমে। ওই বেঞ্চের চার বিচারপতি সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং এক বিচারপতি তাকে খালাস দিয়েছেন। দোষী সাব্যস্তকারী বিচারপতিদের মধ্যে তিনজন আমৃত্যু কারাদ- দেন এবং অন্যজন দিয়েছেন মৃত্যুদ-। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ওই আপীল বেঞ্চে নেতৃত্ব দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সুপ্রীমকোর্ট সূত্র জানায়, এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে মৃত্যুদ- দেন এবং তাকে খালাস দেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। বাকিরা কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীকে আমৃত্যু কারাদ- দেন। সূত্রটি আরও জানায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের রায়টি লিখেছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। অন্য দুই মতের পক্ষে মতপ্রদানকারী বিচারপতিরাই রায় লিখেছেন। বর্তমানে রায়টি মুদ্রণ পর্যায়ে রয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। গত বছরের ১৭ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার মাধ্যমে সাঈদীর সাজা শোনান। রায় ঘোষণার দেড় বছরেরও বেশি সময় পার হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ হয়েছে। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণের পরও এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় এখন অনেকটা হতাশা নিয়েই পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের ধারণা যেহেতু রায়ে একজন বিচারপতি সাঈদীকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে এ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ থাকতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষও চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এই প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদন করার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশের পর উভয় পক্ষের রিভিউ আবেদন দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম জানান, সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে বিচার-বিশ্লেষণ করে রিভিউর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রিভিউসংক্রান্ত আপীল বিভাগের রায়ের পর প্রসিকিউশন ও আসামি উভয়পক্ষ রিভিউ আবেদনের সুযোগ পাবেন বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর পর্যালোচনা করে উপাদান পাওয়া গেলে রিভিউ করা হবে। এ মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপীল আবেদন দায়ের করেছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাজা ঘোষিত না হওয়া ৬টি অভিযোগে শাস্তির আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর সাঈদীর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ আপীল করে। আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করেন। রায়ে ১০, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। আর ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ৭ নম্বরের জন্য ১০ বছর কারাদ- দেয় আপীল বিভাগ। এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের অপর অংশসহ ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। এই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ থাকলেও চূড়ান্ত রায়ে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলো পাঁচটি অভিযোগ। ট্রাইব্যুনালে মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম ॥ বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলায় সাঈদীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১০ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত মোট ৩১৩ দিন তদন্ত করে ১১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষে ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনকালে মুক্তিযুদ্ধকালে পিরোজপুর জেলায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং এ ধরনের অপরাধে সাহায্য করা ও জড়িত থাকার ঘটনায় ২০টি অভিযোগ আনা হয়। একই বছরের ২০ ও ২১ নবেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উত্থাপন করেন চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান। এ মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর, শেষ হয় ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট। তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তাদের মধ্যে ২০ জন ঘটনার বিষয়ে এবং সাতজন জব্দ তালিকার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন।
×