স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামনে এল পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আরও একটি ফতোয়া। যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়ছে, ‘ধর্ম’ মেনে কী ভাবে যৌনদাসীদের ধর্ষণ করতে হবে!
৬৪ নম্বর ওই ফতোয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠীর ধর্মতত্ত্ববিদেরা রীতিমতো বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, কেন মহিলাদের যৌনদাসী করে রাখা উচিত। কাকে, কখন, কী ভাবে শয্যাসঙ্গী করা ‘বৈধ’ তা নিয়েও রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম এই ফতোয়া প্রকাশ করে ইসলামিক স্টেটের ‘কমিটি অব রিসার্চ অ্যান্ড ফতোয়াজ’। তবে এত দিন এই নিয়মাবলি জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্দরমহলেই প্রচারিত হয়েছে। গত মে মাসে একটি জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালানোর সময় এই পাণ্ডুলিপি হাতে আসে মার্কিন বাহিনীর। তার পরেই সেই লিখিত ফতোয়াটির বেশ কয়েকটি পৃষ্ঠা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
কী রয়েছে এই ফতোয়ায়?
লেখা হয়েছে, ‘আমাদের কিছু ভাই যৌনদাসীদের ব্যবহার করার আইন ভাঙছে। শরিয়তে এই বেআইনি কার্যকলাপের কোনও জায়গা নেই। তবে, এই বিষয়ক আইন নিয়ে বহু বছর আলোচনা হয়নি।’ তার পরেই মহিলাদের ‘বৈধ’ ভাবে ধর্ষণ করার রীতি বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হয়েছে। মোট ১৫টি বিধি উল্লেখ করা হয়েছে ওই পাণ্ডুলিপিতে। বলা হয়েছে, বাবা-ছেলে একই যৌনদাসীকে শয্যাসঙ্গী করতে পারবে না। একই ভাবে, কোনও এক জন মালিকের অধীনে যৌনদাসী হিসেবে কোনও মা-মেয়ে থাকলে তাদের এক জনকে বেছে নেবে মালিক।
জঙ্গিগোষ্ঠীর এই ফতোয়া সামনে আসার পর তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। বয়স নির্বিশেষে মহিলাদের যৌনদাসী বানিয়ে বন্দি করে রাখা এবং তাদের সম্পত্তির তকমা দেওয়ার এমন ঘটনা আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং সিরিয়া-ইরাকে কাজ করা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট বলছে, কয়েক বছর ধরে মহিলাদের অপহরণ করছে জঙ্গিরা। রেয়াত করা হচ্ছে না শিশু-কিশোরীদেরও। ভিন্ন ধর্মের মহিলাদের গায়ে স্টিকার লাগিয়ে খোলা বাজারে বিক্রিও করে তারা।
২০১৪ সালে যৌনদাসীদের সঙ্গে কী কী করা উচিত তা নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে আইএস। তাতে কিছু নিয়মের উল্লেখ থাকলেও কোনও ‘বিধি’ চালু করা হয়নি। গত জানুয়ারিতে সংগঠনের অন্দরে অভিযোগ ওঠে, যৌনদাসীদের ‘ব্যবহারে’ অনেক জেহাদিই ‘জঙ্গি-আইন’ ভাঙছে। পরিস্থিতি সামলাতে যৌনদাসীদের ‘ব্যবহার’ করার এই আইন তৈরি হয় তখনই!
আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএস বিশেষজ্ঞ কোল বানজেল বলছেন, আইএসের মহিলা নির্যাতনের যত তথ্য এ পর্যন্ত সামনে এসেছে তার মধ্যে নিকৃষ্টতম এই ফতোয়া। আগেও ওই গোষ্ঠীর জারি করা বহু ফতোয়া বিশ্লেষণ করেছেন কোল। তবে এমন ভাবে ধর্মাচরণের দোহাই দিয়ে মহিলাদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার বিধি এই প্রথম।
মহিলাদের উপর এই নির্যাতনের প্রতিবাদ মুসলিমরাই করেছেন বহু বার। ২০১৪ সালে আইএসের প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে এই নির্যাতনের প্রতিবাদ করে চিঠি লিখেছিলেন ১২০ জন ইসলামিক পণ্ডিত। ধর্মের নামে এ ধরনের বর্বরতা ইসলাম-বিরোধী বলেও দাবি করেন তারা। তবে তাতে যে কোনও কাজ হয়নি, ধর্মের নামে নারী নির্যাতনের নতুন এই অধ্যায়ই তার প্রমাণ।