ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই চুক্তি, কোন সিন্ডিকেট স্থান পাবে না ॥ প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

জিটুজি প্লাসেই জনশক্তি রফতানি হবে মালয়েশিয়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

জিটুজি প্লাসেই জনশক্তি রফতানি হবে মালয়েশিয়ায়

ফিরোজ মান্না ॥ জনশক্তি রফতানি ‘জিটুজি প্লাসেই’ হবে। অন্য কোন প্রস্তাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে না বাংলাদেশ। জনশক্তি নিয়োগ নিয়ে মালয়েশিয়ার বার বার অবস্থান পরিবর্তন করায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জিটুজি প্লাস চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ প্রস্তাবটি এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়েছিল। আবার বিষয়টি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। এবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে জিটুজি প্লাসেই কর্মী নিয়োগ করবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত জিটুজি চুক্তির আওতায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর এ বছরের জুনে বিটুবি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আরেকটি চুক্তি হয় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মধ্যে। এই চুক্তিও কোন কাজে আসেনি। নানা জটিলতায় বিটুবি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়া ঝুলে যায়। এবার জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশের সরকার। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে জটিলতার কারণে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি করতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে খুব শীঘ্রই এ চুক্তি সই হবে। চুক্তি হলে দেশটিতে বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠানো যাবে। কর্মী পাঠাতে বিশেষ কোন সিন্ডিকেট স্থান পাবে না। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির অতীত রেকর্ড ভাল, তারাই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে জিটুজি প্লাস চুক্তির বিষয়ে আমরা সর্বশেষ অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। এখন শুধু এমওইউ সই বাকি। সেটা হলেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো শুরু হবে। তবে মালয়েশিয়ায় জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী যাওয়া অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটিতে এখনও কর্মী যাচ্ছে। তবে বেশিসংখ্যক কর্মী যাচ্ছে না। আমরা চাই না অতিরিক্ত লোক যাক। পরে তারা খেতে পাবে না, বাসস্থান পাবে না। চুক্তির মাধ্যমে কর্মীর কর্ম ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বড় পরিসরে কর্মী পাঠানো হবে। মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমার জানা নেই। মালয়েশিয়ার কোম্পানির কাছ থেকেও এমন কোন বিষয় জানতে পারিনি। আমরা যে সমঝোতা স্মারক সই করতে যাচ্ছি সেখানে ‘বায়রা’ না বলে বিআরএ বলেছি। যার অর্থ- বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি। আমরা কারও পক্ষ নই। বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির যত ভাল ভাল কোম্পানি আছে, অতীত রেকর্ড যাদের ভাল, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোয় যারা অভিজ্ঞ- এসব এজেন্সির নাম মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে। মালয়েশিয়া থেকেই রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করা হবে। আমরা এখানে একটা স্বচ্ছতা আনতে চাই। কেউ যেন গরিব মানুষকে ঠকাতে না পারে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নজর রাখা হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে জিটুজি প্লাস চুক্তিই করব। এর আগে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করেছিল বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) পদ্ধতিতে কর্মী নিতে চায় তারা। বিটুবির মতোই বিদ্যমান জিটুজি (সরকার টু সরকার) চুক্তি সংস্কার করে জিটুজি প্লাস করা হয়েছে। জিটুজি প্লাস এটাও সরকার টু সরকার। তবে এখানে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকার ইচ্ছে করলে নিয়োগ করতে পারে। আগামী এক মাসের মধ্যে উভয় দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। জিটুজি প্লাস নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করেছে। খসড়াটি মন্ত্রিসভায় একবার তোলা হয়েছিল। আবার এ খসড়াটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে আগামী মাসের শেষের দিকে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফরে যাবে। ওই সময়েই ‘জিটুজি প্লাস’ সমঝোতার চুক্তি সই হতে পারে। এ চুক্তি হলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও দেশটিতে কর্মী পাঠাতে পারবে। নিয়োগপ্রক্রিয়া বার বার পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বাজারটি আদৌ ফিরে পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহ বিরাজ করছে। আবার একটি স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমবাজারটিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। তারা চায় বৈধভাবে বাজারটি তৈরি হলে অবৈধ পথে কর্মী নিয়োগ কমে যাবে। তারা আবার মালয়েশিয়ার কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নানাভাবে দেন দরবার করে যাচ্ছে। অনেকে দেশটিতে কর্মী নিয়োগের ঘোষণার পরই অফিস খুলে বসেছেন। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানকারী বাঙালী ও ওই দেশের লোকজন মিলে তৈরি করেছে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটগুলো অনেক ক্ষমতাশালী। তারা চায় তাদের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করতে। এতে কর্মীদের কাছ থেকে বিরাট অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে তারা এ বিরাট অংকের টাকা থেকে বঞ্চিত হবেন। প্রভাবশালী এ গ্রুপটি অনেক আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছে।
×