ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দলের কোচ থাকছেন মারুফুল

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

জাতীয় দলের কোচ থাকছেন মারুফুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যে স্বপ্নে কথা শুনিয়েছিলেন সেটা বাস্তব করতে পারেননি। এবার সাফ ফুটবলে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে লজ্জাজনক হার নিয়ে ফেরা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। গ্রুপ পর্বেই টানা দুই ম্যাচে আফগানিস্তান (৪-০) ও মালদ্বীপের (৩-১) কাছে বড় পরাজয়ে আগেভাগে বিদায় নিয়ে নেয় শিরোপার প্রত্যাশায় মিশনে যাওয়া বাংলাদেশ। সে কারণে প্রথমবার জাতীয় দলের কোচ হওয়া মারুফুল হক পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর নিশ্চিত হয়েছে মারুফুলই থাকছেন জাতীয় দলের কোচ হিসেবে। বুধবার বাফুফে ভবনে সালাউদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে মারুফুল সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সেক্ষেত্রে আসন্ন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টেও জাতীয় দলের কোচ হিসেবে থাকছেন মারুফুল। তবে নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ ধার্য করা হয়নি মারুফুলের। তিনি জানিয়েছেন সভাপতি সালাউদ্দিন তাকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলেছেন। আর সেজন্যই দেশের ফুটবলের কর্ণধারের প্রতি সম্মান জানিয়েই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কোচ হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। পরপর দুই ম্যাচে বাজেভাবে হেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ রেখে ভুটানকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে যেন কিছুটা নিজেদের ফিরে পায় মারুফুল শিষ্যরা। তবে এর আগেই মারুফুল ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কারণ এবার সাফ ফুটবলে অংশ নিতে কেরলে যাওয়ার আগে তিনি প্রত্যয় জানিয়েছিলেন শিরোপা জয়ের। ২০০৩ সালের পর আর দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এ ফুটবল আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি গত দুই আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল। সে কারণে কঠিন চ্যালেঞ্জই ছিল মারুফুলের। তবে সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরে যাওয়ার যে আশার বাণী সেটাকে কার্যকর করতে পারেননি তিনি শিষ্যদের নিয়ে। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে প্রথম মিশনেই ব্যর্থতা, হতাশায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মারুফুল। অথচ ঘরোয়া আসরে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে ট্রেবল জয় করিয়েছিলেন এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মতো বড় দলগুলোর কোচ হিসেবেও সফল ছিলেন তিনি। কিন্তু জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে ওই সাফল্যের ছিটেফোটা দেখাতে পারেননি। তাই পদত্যাগ। ঢাকায় ফেরার পর বুধবার বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন তিনি। এরপর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। সালাউদ্দিন মনে করেন একটি টুর্নামেন্টের ফলাফল বিবেচনা করেই কোন কোচকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া অনুচিত। আরেকটি সুযোগ প্রাপ্য হতেই পারে ঘরোয়া আসরে কোচ হিসেবে ঈর্ষণীয় সাফল্য পাওয়া মারুফুলের। আর সেজন্যই তিনি মারুফুলকে দায়িত্ব অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে মারুফুল বলেন, ‘তিনি সাফে দলের ফলাফল এমন হওয়ার কথা ছিল না, কেন হলো জানতে চেয়েছিলেন। আমি কারণগুলো বলেছি। তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছি। কারণ উনি আমার ওপর আস্থা নিয়েই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি জাতির কাছেও এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আমিও তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি।’ যদিও দীর্ঘমেয়াদে চুক্তি না হলে দায়িত্ব নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন মারুফুল। এবার শুধু গোল্ডকাপের জন্য থাকতে সম্মত হলেন কেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে আর কাজ করতে চাই কি না আমি উত্তর দিয়েছি দায়িত্ব সাফ পর্যন্তই ছিল। তবে ফেডারেশন চাইলে বিবেচনা করব। এখন সভাপতির কাছ থেকেই আহ্বান পেয়েছি। তাই সিদ্ধান্ত পাল্টেছি। তবে চুক্তির নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ নেই। এই টুর্নামেন্ট দেখি, তারপর দেখা যাবে।’ বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ এ বিষয়ে বলেন, ‘বাফুফের পক্ষ থেকে তাঁকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা আগেই তাকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কোচ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তিন, ছয় মাস বা এক বছরের চুক্তি করেছি তা নয়। আবার শুধু গোল্ডকাপের জন্যই তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটাও নয়। এই টুর্নামেন্টের পর আমরা আবারও আলোচনায় বসব। মূলত বাফুফে সভাপতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দায়িত্বে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এবার আরেকটি বড় মিশন মারুফুলের জন্য। ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই আসরটি নিয়ে মারুফুল বলেন, ‘সাফে যেসব ভুল-ত্রুটি হয়েছে আমাদের সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘরের মাঠে আয়োজিত এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। পাশাপাশি প্রত্যাশিত ফলাফল আনার প্রচেষ্টা থাকবে। সাফ ব্যর্থতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। আমাদের ভাগ্যটাও সহায় হয়নি। কেরলে জাতীয় দলের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব ছিল সেটা ঠিক নয়। ফুটবলাররা টিম বাংলাদেশ হিসেবেই খেলার চেষ্টা করেছে। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভাগ্য সঙ্গে না থাকায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ বুধবার ও আজকের মধ্যেই দুইভাগে দেশে ফিরবে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা। এরপরই জাতীয় দলকে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করবেন মারুফুল। তবে অধিনায়কত্ব থেকে মামুনুল ইসলামের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে জানিয়েছেন এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আশা প্রকাশ করেছেন দলে থাকলে দলকে নেতৃত্বও দেবেন মামুনুল। মারুফুল বলেন, ‘কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি বা মতবিরোধ জীবনের সর্বক্ষেত্রেই দেখা যায়। এমন কিছু সাফের দলে থাকলেও থাকতে পারে। সেটা হয় তো খেলোয়াড়দের মনের মধ্যেই ছিল। কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কিছু আমার নজরে পড়েনি। আশা করছি কারও মনের মধ্যে এমন থাকলে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শুরুর আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
×