ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বছরজুড়ে অস্থিরতা ছিল বীমা খাতে

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১ জানুয়ারি ২০১৬

বছরজুড়ে অস্থিরতা ছিল বীমা খাতে

রহিম শেখ ॥ ব্যাংকিং খাত যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন আরও বেশি পিছিয়ে পড়ছে দেশের বীমা খাত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নানামুখী পদক্ষেপে অস্থিরতার মধ্যে গেছে ২০১৫ সাল। কোম্পানির ব্যবসার নিবন্ধন সনদ বাতিল, কোটি টাকার জরিমানা, পর্ষদ সদস্যদের জরিমানা, নিরীক্ষক নিয়োগের মতো পদক্ষেপও নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ঘটনাগুলোর সঙ্গে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ও সদস্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এর পাশাপাশি কোম্পানি দখল-পাল্টা দখল, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চলতি দায়িত্বে (সিসি) নিয়োগও ছিল বীমা খাতের আলোচনার শীর্ষে। এর সঙ্গে বরাবরের মতো গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, অবৈধভাবে অর্থ খরচ, চেক জালিয়াতি, ভুয়া এজেন্ট, অতিরিক্ত কমিশন, বাকি ব্যবসাসহ সকল ধরনের দুর্নীতি আর অনিয়ম অব্যাহত ছিল বছরজুড়েই। অন্যদিকে বরাবরের মতো কোন পরিকল্পনা ছাড়াই নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। বীমা খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএতে দক্ষ জনবলের অভাব ও উচ্চপদে নিয়োগে অনিয়ম এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই বছরজুড়ে বীমা খাতে অস্থিরত বিরাজ করেছে। অথচ নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বীমা খাতের দুর্নীতি দূর করে উন্নয়ন করা। এজন্য দুর্নীতিপরায়ণ সাবেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা অধিদফতর বিলুপ্ত করে ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠন করা হয়। কিন্তু বীমা খাতের দুর্নীতি দূর করার বদলে উল্টো নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে আগের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্নীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে আইডিআরএ। তবে সংস্থাটির কার্যকর সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- একের পর এক বীমা কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা। তবে জরিমানা করা অধিকাংশ কোম্পানির জরিমানা রয়েছে অনাদায়ী। বীমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসলে বীমা খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতেই গঠন করা হয়েছিল আইডিআরএ। কিছু পদক্ষেপ আইডিআরএ নিয়েছে, যেমন- বাকি ব্যবসা বন্ধে কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করেছে, সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ-অপসারণ প্রবিধানমালা, এজেন্ট প্রশিক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো, বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন, যা বীমা কোম্পানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর বাইরে অনেক বির্তকিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ, যা বীমা উন্নয়নে অন্যতম বাধা। বীমা উন্নয়ন শব্দটি প্রথম থাকলেও তার ব্যবহার খুবই কম। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সঙ্গে জরিমানা বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিল আইডিআরএ। বিআইএ’র বক্তব্য ছিল, শুধু জরিমানা করে অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না। এমন একটা পথ বের করতে হবে যাতে অনিয়মও বন্ধ হয়, বীমা খাতও উন্নয়নমুখী হয়। তবে চেয়্যারম্যান জরিমানা থিওরিতে অটল ছিলেন। এছাড়া এমন অনেক সিদ্ধান্ত আছে, যা বিআইএ নেতাদের জানার সুযোগ হয়নি। বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, সরকার অথরিটি গঠন করেছে, আইন পাস করেছে। বাস্তবায়ন করতে হবে বীমা রেগুলেটরি অথরিটিকে। তবে আইডিআরএ অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ বিধি-প্রবিধি তৈরি করতে পারেনি। আমরা বীমা উন্নয়নমূলক পরামর্শ বার বার দিয়েছি। একের পর এক জরিমানা ॥ ২০১৫ সালে সাতটি কোম্পানিকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হতে পারার জন্য প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা করে বছরের পর বছর জরিমানা গুনছে প্রায় ১২টি কোম্পানি। একটি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আইডিআরএ’র অনুমোদন না নিয়ে একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন নেয়ায় এ কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। বীমা সংশ্লিষ্টরা বলেন, মাথাব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলে দেয়া তো সমাধান নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। বীমাশিল্পের উন্নয়নে আইডিআরএ’র ভূমিকা অন্যতম। আইডিআরএ’কে তাদের অবস্থানে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদলে বীমা কোম্পানিগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। নতুন বছরকে সামনে রেখে আইডিআরএ’র পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের নিবন্ধন বাতিল ॥ অনিয়মের কারণে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের নিবন্ধন সনদ বাতিল ছিল বিদায়ী বছরে বীমা খাতের সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয়। পুনঃবীমায় অনিয়ম করার কারণে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন সনদ বাতিল করে আইডিআরএ। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যমতে, এটি ছিল গোটা দক্ষিণ এশিয়ার বীমা খাতের ঐতিহাসিক ঘটনা। এর আগে কখনও এশিয়া মহাদেশে অনিয়মের কারণে কোন বীমা কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল হয়নি। নতুন কোম্পানি অনুমোদন ॥ বিদায়ী বছরে দেশে প্রথমবারের মতো অনুমোদন দেয়া হয় দেশী-বিদেশী যৌথ মালিকানার জীবন বীমা কোম্পানি। এই কোম্পানিতে মূল উদ্যোক্তা হিসেবে আছে ভারতের বৃহত্তম জীবন বীমা কোম্পানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এলআইসি)। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ নামে অনুমোদন পাওয়া এই জীবন বীমা কোম্পানিতে বাংলাদেশ থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে আছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবিএল) ও ওয়েস্টিন গ্রুপের এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এসিএমএল।
×