ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৫ সালের প্রাপ্তি নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের টি২০ অধিনায়ক জাহানারা আলম

‘টি২০ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনই বড় প্রাপ্তি’

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১ জানুয়ারি ২০১৬

‘টি২০ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনই বড় প্রাপ্তি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এর আগে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল কোন ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেনি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে টি২০ বিশ্বকাপ হওয়ায় আয়োজক হিসেবে সেটিতে খেলার সুযোগ পায়। তবে এবার যোগ্যতা দেখিয়েই বাছাইপর্ব উতরে গিয়ে ভারতে ১১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ অর্জনকেই ২০১৫ সালের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছেন বাংলাদেশ টি২০ দলের অধিনায়ক জাহানারা আলম। এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলাম। পরবর্তী বছরে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। তো খুব বেশি টুর্নামেন্ট না পেলেও আমি মনে করি এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন।’ সালমা খাতুন ছিলেন নিয়মিত অধিনায়ক। কিন্তু তার নেতৃত্বে যখন স্বল্প ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশ খুব ভাল করতে পারছিল না, তখন পেস বোলার জাহানারার কাঁধে নবেম্বরের শেষে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়। তাতেই চমক দেখারও মিলে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে কক্সবাজারে দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই জয় মিলে। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। ঠিক যেমন মুশফিকুর রহীমের কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে ২০১৪ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অধিনায়ক করা হয়। তাতেই দলের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটে যায়। একইভাবে যেন জাহানারার বেলাতেও ঘটে। নেতৃত্ব পেয়ে প্রথম সিরিজ জয়কে তাই বছরের সেরা প্রাপ্তির খাতাতেই রাখছেন জাহানারা। বলেছেন, ‘খুবই ভাল বছর গেছে। অনেক ভাল অর্জন ছিল। যেমন আমরা জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলাম।’ জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ক্রিকেটারদের ভেতরেও যেন আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সালমার নেতৃত্বে যেখানে ২০১৫ সালে তিনটি টি২০ খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি হার হয়। আর দুটি ওয়ানডেতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের স্বাদ মিলে। সেখানে জাহানারার ছোঁয়ায় শুধু জয়ই ধরা দেয়। যদিও টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ফাইনালে উঠেই টি২০ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়। সেমিফাইনালে জিম্বাবুইয়েকে হারানোর আগে গ্রুপ পর্বে থাইল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও পাপুয়া নিউ গিনিকে হারায় জাহানারারা। ফাইনালে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘বি’তে ১৫ মার্চ ভারত, ১৭ মার্চ ইংল্যান্ড, ২০ মার্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২৪ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করবে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জয়টিই যে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে, তা পুঁজি করেই ২০১৬ সালটি রাঙ্গিয়ে তুলতে চান জাহানারা। বলেছেন, ‘জয় মানেই আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আর আমরা ভালভাবেই জিতেছি।’ সঙ্গে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব নিয়ে টি২০ অধিনায়ক বলেন, ‘যে কোন কারণে হয় তো আমরা ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। তারপরও আমি মনে করি আমরা অনেক ভাল ক্রিকেট খেলেছি। এই জয়ের রেশ আমাদের পরবর্তী টুর্নামেন্টে অনেক কাজে আসবে।’ মহিলা ক্রিকেটারদের মধ্যেও এখন যে পেশাদারিত্ব ভালভাবে কাজ করছে তাও বুঝিয়ে দেন জাহানারা, ‘আমরা আলাদাভাবে কাজ করি। আমরা বসে থাকি না। যেহেতু আমরা এখন অনেক পেশাদার। হয় তো একটা সময় ছিল যখন আমরা বসে থাকতাম। ক্যাম্পের জন্য অপেক্ষা করতাম। অনুশীলনের জন্য মাঠ ছিল না। কিন্তু এখন আমরা অনেক এ্যাকটিভ, প্রায় সবাই। সবাই খুবই কঠোর পরিশ্রম করে, ফিটনেসের সঙ্গে সঙ্গে স্কিলটা উন্নত করছে। ক্যাম্প ছাড়া প্রধান কোচ, সহকারী কোচ, ট্রেইনার, ফিজিও সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। তারা আসছেন আমরা বোর্ডের মাঠ ব্যবহার করছি একাডেমিতে থেকে বা একাডেমির মাঠটা ব্যবহার করছি। তারা আমাদের ক্যাম্পের মতোই সময় দিচ্ছে। এটা হয় তো ক্যাম্প বলা হচ্ছে না। আমরা যার যার মতো কাজ করছি।’ দলের শক্তি বরাবরের মতো বোলিং এবং ফিল্ডিং বলেই জানান টি২০ অধিনায়ক, ‘আমার দলের শক্তি বরাবরের মতো বোলিং এবং ফিল্ডিং। এটা এখনও পর্যন্ত অটুট আছে। এবং আমি মনে করছি আরও বেড়েছে। এছাড়া ব্যাটিংয়েও আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আগে আমাদের দলে চার-পাঁচটা ব্যাটসম্যান ছিল। যারা একজন দুইজন খারাপ করলে আমরা মনে করতাম হয় তো আমরা ৫০ রানও করতে পারব না। এখন এমন একটা অবস্থা এসেছে আমরা অনেক উন্নতি করেছি ব্যাটিংয়ে। একজন দুজন ব্যাটসম্যান না পারলেও শেষের দিকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাটিংয়ে তারপরও আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করব।’ সেই কাজটি বিশ্বকাপের জন্য শুরু করা ক্যাম্পেই করবেন বলে জানান জাহানারা, ‘আমরা সবাই ক্যাম্প শুরু করেছি ফিটনেসের স্কিল দিয়ে। আমাদের হাতে এখনও দুই মাসের মতো সময় আছে। আশা করছি ব্যাটিং শক্তির ওপর কাজ করব। ইতোমধ্যে ফিটনেসের ওপর কাজ করছি। আমরা ভাল কিছু করতে পারব।’ এখন সামনে এগিয়ে যেতে চান জাহানারা। এ জন্য দরকার? নিজেই বললেন, ‘একমাত্র একাত্ম হয়ে থাকব সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। এবং যার যতটুকু আছে শুধু ওইটকুই যদি আমরা দিতে পারি, বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে পারব।’ ২০১৫ সাল যেমন মাশরাফিদের স্বর্ণময় বছর গেছে, তেমনি মহিলা ক্রিকেটারদের জন্যও ভাল সময় মিলেছে। তা পুঁজি করে এখন ২০১৬ সালটিও রাঙ্গিয়ে দিতে পারলেই হয়।
×