ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১ জানুয়ারি ২০১৬

ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা ঘটনাপ্রবাহে বছরজুড়েই আলোচিত ছিল ২০১৫। গত কয়েক বছরের মধ্যে সবথেকে আলোচিত বছর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেবে বছরটি। বছরের শুরুর দিকে আন্দোলনে উত্তাল ২০১৫’তেই পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু থেকে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। জাতির কাক্সিক্ষত দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বছরটিতে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে মৌলবাদের থাবা যেমন সম্প্রসারণের চেষ্টা করা হয়েছে আবার সচেতন-ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। বছরজুড়ে আলোচিত ঘটনাপ্রবাহের শীর্ষ ১০ তুলে ধরা হলো পাঠকের স্মৃতিকে নাড়া দেয়ার জন্য। পেট্রোলবোমা ॥ জানুয়ারির প্রথম থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে আন্দোলনে নামে। ৫ জানুয়ারির সমাবেশে বাধা পেয়ে টানা ৯২ দিনের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচীর নামে জ্বালাও-পোড়াও করে অন্তত ১৫৭ জনকে হত্যা করা হয়। অতীতে আগুনে এত মানুষ একসঙ্গে মারা যায়নি। সবথেকে লক্ষণীয় বিষয় ছিল নির্বিচারে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক হত্যা। শুধু ক্ষমতার গদি দখলে নিতে সাধারণ মানুষকে বলি দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। ভুয়া বিএনপি ॥ সরকার পতনের আন্দোলনকে ভিন্নমাত্রা দিতে বিএনপি আশা করছিল প্রভাবশালীদের পাশে পাবে তারা। বছরের শুরুতে ৮ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান দাবি করেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজিপির সভাপতি অমিত শাহ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তবে অমিত শাহ পরবর্তীতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের কোন খালেদার সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি, যা বিএনপির মুখে চুনকালি মাখিয়ে দেয়। একই সময়ে ৯ জানুয়ারি বিএনপি দাবি করে তাদের পক্ষে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যান বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণ হয় এ বিষয়টিও ভুয়া ছিল। মানবপাচার ॥ বছরজুড়ে আলেচিত ছিল মানবপাচার। জানুয়ারিতে মানবপাচারের ভয়াবহতা কেড়ে নেয় ১০টি প্রাণ। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে থাইল্যান্ডের গহীন অরণ্যে সন্ধান মেলে গণকবরের। সেসব গণকবরে সাগরপথে পাচার হওয়া মানুষদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তারপর কয়েক দফায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। উন্মোচিত হয় আন্তর্জাতিক মানবপাচারগোষ্ঠীর কর্মকা-। মৌলবাদের থাবা ॥ বছরজুড়েই আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশের মৌলবাদ পরিস্থিতি। উদার ধর্মনিরপেক্ষ দেশের পরিবর্তে বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত একটি পক্ষ। প্রথমে ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু পরবর্তীতে দুই বিদেশী নাগরিক। ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা (৫০) এবং ৩ অক্টোবর জাপানের নাগরিক হোশি কুনিও (৪৮) হত্যাসহ আরও কয়েকজনের ওপর হামলা করা হয়। এছাড়া বছরটিতে চার ব্লগার, এক প্রকাশক জঙ্গী হামলায় নিহত হন। ২৩ অক্টোবর রাত দুটোর দিকে রাজধানীতে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়া, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা করে জঙ্গীরা। এছাড়াও এক খ্রীস্টান ধর্মযাযক এবং দিনাজপুরের মন্দিরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। মায়ের জঠরে অনিরাপদ শিশু বলা চলে শিশুদের জন্য আলোচিত ছিল বছরটি। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২৩ জুলাই। মাগুরা শহরের কারিগরপাড়ায় ছাত্রলীগের গুলিতে আহত হন নাজমা বেগম (৩৫) নামের এক নারী। তার গর্ভেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই দুনিয়ার আলোতে চলে আসে শিশুটি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সে মায়ের কোলেই ফিরে যায়। আর ৮ ডিসেম্বর শ্যামপুরের ম্যানহোলে পড়ে মৃত্যু হয় শিশু ইসমাইলের। ২০১৪ সালের শেষের দিকে শিশু জিয়াদের মৃত্যু ঘটে পাইপে পড়ে। তবে ২০১৫ সালে সরকারদলীয় এমপি লিটন এক শিশুকে গুলি করে আলোচনার জন্ম দেন। জনকণ্ঠের মামলা ॥ ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর আপীলের চূড়ান্ত রায় বহাল রেখে রায় ঘোষণার পর আদালত অবমাননা বিষয়ক একটি আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা নেতৃত্বাধীন আপীল বেঞ্চ। ওই আদেশে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এমএ খান মাসুদ) ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে তলব করেন। ৩ আগস্ট তাদের আদালতে উপস্থিত থেকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় ওই আদেশে। এরপর আলোচনায় চলে আসে জনকণ্ঠের মামলাটি। পরে ৩ আগস্ট জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক আদালতে হাজির হয়ে যখন বলেন, ওই বিচারক আর কেউ নন, খোদ প্রধান বিচারপতি নিজেই এবং এ বিষয়ে তাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণাদিও রয়েছে, তারা এই মামলাটি লড়বেন, তারপর গোটা দেশের আলোচনার মূলেই চলে আসে এই মামলা। পরে প্রধান বিচারপতি জনকণ্ঠের অভিযোগ স্বীকারও করেন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবমাননার কোন মামলায় কনটেস্ট করেছে কোন সংবাদমাধ্যম, যা বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল। ছিটমহল বিনিময় ॥ ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। নিজ দেশে থেকেও যারা পায়নি নাগরিকত্বের স্বাদ। সব ধরনের উন্নয়ন থেকে যারা বঞ্চিত ছিল ৬৮ বছর। সেই সব মানুষকে দুই দেশের সরকার ফিরিয়ে দেয় সবকিছু। বিনিময় হয় ১৬২ ছিটমহলের। এখন এই ছিটমহলে ৫১ হাজার নতুন জীবনের সূচনা হয়েছে, যা বহুকাল মানুষ মনে রাখবে। জোড়া ফাঁসিতে বন্ধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ॥ ২২ নবেম্বর বহুদিন স্মৃতিতে থাকবে এ দেশের মানুষের। কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধী বিএনপির শীর্ষনেতা সাকা চৌধুরী আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছিল এদিন। একই সঙ্গে আরও একটি ঘটনা ঘটে- আকস্মিক বন্ধ করে দেয়া হয় ফেসবুকসহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পরে অবশ্য এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেয়া হয়। রাজন-রাকিব-রাজীব হত্যা মামলার রায় ॥ সিলেটে রাজন আর খুলনাতে রাকিব হত্যা সাধারণের বিবেককে নাড়া দেয়। তবে এই ঘটনায় দ্রুত বিচার কার্যকরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই দিন বছরের ৮ নবেম্বর হত্যা মমলার রায় ঘোষণা হয়। বছরের শেষদিন ব্লগার রাজীব হত্যাকা-ের রায় প্রকাশ করা হয়, যা ব্লগার হত্যাকা-ের প্রথম রায়। পাকি কূটনীতিকের বিদায় ॥ জঙ্গী কানেকশনের অভিযোগ ওঠার পর ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহার করা হয় গত ২৩ ডিসেম্বর। ফারিনা আরশাদ ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) পদে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পাকিদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়টি সাধারণের মধ্যে আরও খোলাসা হয়। বছরের শুরুতে গত জানুয়ারিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাযহার খানকে একই কায়দায় বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল পাকিস্তান।
×