ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি সবাই নিজ নিজ ভূখণ্ড বিস্তারে ব্যস্ত

পাল্টাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১ জানুয়ারি ২০১৬

পাল্টাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে চলমান লড়াই মধ্যপ্রাচ্যের সীমারেখা পাল্টে দিচ্ছে। ওই জঙ্গী দলের বিরুদ্ধে লড়াইরত শিয়া, কুর্দি ও সুন্নিদের শত ভিন্ন ভিন্ন শক্তি প্রায়ই পরস্পরবিরোধী লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত রাষ্ট্রের বিশাল সীমান্ত বরাবর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে মোতায়েন বাহিনীগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় জঙ্গীরা ক্রমশ পিছু হটছে। এ প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন সীমান্তরেখা আঁকা হচ্ছে, নতুন নতুন জায়গির সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং সম্ভাব্য নতুন নতুন সংঘাতের বীজ বপন করা হচ্ছে। সূত্র ওয়াশিংটন পোস্ট। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আইএসের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের উদ্দেশ্য প্রধানত এর ভূখ-ে ভবিষ্যত সন্ত্রাসী হামলা রোধ করা। কিন্তু ইরাক ও সিরিয়া উভয় দেশে শিয়া, কুর্দি ও সুন্নি যোদ্ধারা অত্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন কারণে লড়াই করছে- এতে জঙ্গীদের পরাজিত করার লক্ষ্য বিনষ্ট হতে পারে। উত্তর ইরাক ও সিরিয়ায় কুর্দিরা নতুন নতুন কুর্দি ছিটমহলের সীমান্তরেখা তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে। শিয়া মিলিশিয়ারা উত্তর ইরাকের পুরনো সুন্নি এলাকাগুলোর গভীরে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। তারা এখন ইরাকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী শক্তি। সিরীয় সরকার এর বিরুদ্ধে পাঁচ বছর ধরে চলমান বিদ্রোহের সময় এর বিরোধীদের দখল করা ভূখ- পুনরুদ্ধারের দিকেই এর শক্তি নিয়োগ করছে। একই সময়ে গভীরভাবে বিভক্ত সিরীয় বিদ্রোহীরা সরকার ও ইসলামিক স্টেট উভয়ের বিরুদ্ধে তাদের ভূখ- রক্ষা করতে দু’ফ্রন্টেই লড়াই করছে। ইসলামিক স্টেটকে শীঘ্রই পরাজিত করা যেতে পারে বা নাও পারে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তর-পূর্ব সিরিয়া ও উত্তর ইরাকে আইএসের কয়েক দফা পরাজয় এবং সম্প্রতি রামাদির পতন জঙ্গী দলটির আগে যেমন মনে করা হয়েছিল তার আগেই নির্মূল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেই ওই অঞ্চলে রক্তপাতের অবসান হবে না। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স ও পলিটিক্যাল সায়েন্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ফাওয়াজ গারজেস একথা বলেন। তিনি বলেন, পরে কি হবে তা নিয়ে খুব কমই ভাবা হচ্ছে, পরিস্থিতিকে আমরা এখন যেমন দেখছি তাতে পরবর্তী সময়টি রক্তক্ষয়ী, অরাজকতাময় ও অস্থির অপূর্ণই হতে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রস্থলই পাল্টে গেছে। ক্ষণভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আর নেই। সব বয়সের লোকজন এবং কোন কোন স্থানে নারীরা বেপরোয়া ও উন্নত অস্ত্রসজ্জিত জিহাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে লোকজন হান্টিং রাইফেল নিয়েও যুদ্ধে নেমেছে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই যে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র নতুন করে আঁকছে, তা কোন কোন রণাঙ্গনের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্কিন সামরিক অডিয়ানের পরবর্তী লক্ষ্যস্থল রাকা আইএসের স্বঘোষিত রাজধানী। কিন্তু আরব শহর রাকা কুর্দি বাহিনী পিপলস প্রটেকশন ইউনিটগুলোর (ওয়াইপিজি) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় নয়। এ বাহিনী উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় এর নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করতেই ব্যস্ত রয়েছে। ওয়াইপিজি এখন আরেক কুর্দি ভূমির দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। সেটি হলো আলেপ্পো প্রদেশের আফরিন ছিটমহল। এ ছিটমহলটি ঘিরে রয়েছে সিরীয় বিদ্রোহীরা। আফরিনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টায় কুর্দিরা সেখানে লড়াইয়ের লক্ষ্যস্থল পাল্টিয়েছে। তারা সেখানে স্থানীয় ফ্রি সিরিয়া আর্মির গ্রুপগুলোর সঙ্গে এবং সম্ভবত তুরস্কের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হতে চলেছে। কারণ তুরস্ক সেখানে কোন কুর্দি ছিটমহল সৃষ্টি রোধ করতে বদ্ধপরিকর।
×