ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পৌরসভা নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২ জানুয়ারি ২০১৬

পৌরসভা নির্বাচন

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন। যেহেতু দলীয় প্রতীক তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের মতো ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বলা চলে নির্বাচনী উত্তাপ-উত্তেজনা ছিল সর্বত্রই। নিবন্ধিত প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের জন্যও এই নির্বাচন ছিল একটি অগ্নিপরীক্ষা। অবশেষে নানা জল্পনা-কল্পনা আর আশঙ্কার কথা মাথায় নিয়ে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সম্পন্ন হলো নির্বাচন পর্বটি। ভোটাররা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ-সহিংসতা এড়ানো গেলে নির্বাচনী আমেজে ভিন্নমাত্রা যোগ হতো। আসলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শতভাগ সংঘাত-সহিংসামুক্ত হয় তার নজির কোন কালেই ছিল না। বাংলাদেশে সব নির্বাচনেই কোন না কোন এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনা ঘটেÑ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একদিকে দলীয় প্রার্থী, অন্যদিকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, প্রভাবশালী আঞ্চলিক প্রার্থীসহ নানা কারণে নির্বাচনটি উত্তেজনাপূর্ণ হবে এটা সবারই জানা। এবার দলীয় প্রতীকে সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় উত্তেজনার তীব্রতা ছিল বেশি। তবে বুধবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই নির্বাচন শুরু হয়। ভোট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দুই শতাধিক কেন্দ্রে গোলযোগের অভিযোগ আনে। কোন কোন স্থানে সরকারী দল আওয়ামী লীগেরও পাল্টা অভিযোগ ছিল। নির্বাচন কমিশন অভিযোগ পর্যবেক্ষণের পর ১৯টি পৌরসভার ৫০ ভোট কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেন। অনিয়মের অভিযোগে ৪০ মেয়র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন। নির্বাচনে সারাদেশে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৬০ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৯ ভোটারের মধ্যে ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৭৬০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। সংঘর্ষে সারাদেশে কয়েকজন আহত হওয়াসহ সাতকানিয়ার দুই কমিশনার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এই ধরনের সংঘাত-সহিংসতা আরও কমানো গেলে নির্বাচন আরও প্রাণবন্ত হতো। ছোটখাটো অনিয়ম বাদ দিলে এই নির্বাচনটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। এতে সব দলের অংশগ্রহণও নিশ্চিত হয়েছে। ভোটের আগে থেকেই সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। ভোটার আকৃষ্ট করার মতো প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি, এলাকার উন্নয়নে নিজের অবদানসহ বিভিন্ন বার্তা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গেছেন। যা মূলত উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই বিষয়গুলো সামনে উঠে এলে বলা যায়, এটা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় অনন্য। যা তৃণমূল পর্যন্ত গণতন্ত্রের সুফলই ব্যক্ত হয়েছে। সবাই মনে করে, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং সরকারসহ দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের স্বার্থে এই ধারা বজায় রাখা জরুরী। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে নির্বাচন নিয়ে অনাস্থা, আন্দোলন, অস্বচ্ছতা বা যে কোন অভিযোগে কোন দল যদি নির্বাচন বর্জন করে তা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। তবে একটা বিষয় স্পষ্টÑ আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর এখনও পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দীনতা। জনসমর্থন যে জোর করে আদায় করা যায় না, এ বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো স্বীকার করতে চায় না। প্রতিটি দলেরই উদ্দেশ্য যখন মানুষের কল্যাণ, তখন মানুষকে তার অধিকার আদায়ের প্রশ্নে ভোট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন আগামীর পথচলায় আরও সঠিক পন্থা গ্রহণ করতে পারবে। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় এই নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।
×