ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জঙ্গীদের নীলনক্সা নিয়ে বিপাকে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ জানুয়ারি ২০১৬

চট্টগ্রামে জঙ্গীদের নীলনক্সা নিয়ে বিপাকে পুলিশ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে জঙ্গী নিয়ে বিপাকে পুলিশ। দেশ-বিদেশে ট্রেনিং নিয়েও জঙ্গীদের নীলনক্সা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তাদের। কারণ প্রশিক্ষণে যেসব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে জঙ্গীরা সেসবের বাইরে। ফলে দেশীয় প্রশিক্ষণে জঙ্গীবিষয়ক তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে, অবৈধ ও ভারি অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে জঙ্গীদের মাঝে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভারি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে জঙ্গী আস্তানা থেকে। ২০০৫ সালে জঙ্গীরা উত্তরাঞ্চলের হলেও ২০১৫ সালের জঙ্গীরা পার্বত্য অব্জলকেন্দ্রিক তৎপর হয়ে উঠেছে। এরা আস্তানা গেঁড়ে বসেছে আবাসিক ভবনে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে এদের শনাক্ত করা যেমন কঠিন হয়ে পড়ছে তেমনি অভিযানও অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়েছে। কারণ, কোন ধরনের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হলে সেক্ষেত্রে পুলিশকেও ভবন মালিক অথবা এলাকাবাসীর কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। গত ২৬ ডিসেম্বর হাটহাজারীর আমানবাজার এলাকার একটি আবাসিক ভবন থেকে আমেরিকার তৈরি এমকে-২ ¯œাইপার রাইফেল উদ্ধারের ঘটনায় এখনও পুলিশ উদ্বিগ্ন। এ ধরনের ভারি অস্ত্রের আধুনিক মডেলটি আমেরিকান নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। সিএমপির মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বাবুল আকতার জানিয়েছেন, অস্ত্রটি যখন চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেএমবির প্রধান ফারদিনের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় সঙ্গে সঙ্গেই তা ইন্টারনেটে সার্চ করা হয়েছে। ইন্টারনেটের তথ্যে দেখা গেছে, এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে আমেরিকান নৌবাহিনী। এদেশের কোন বাহিনীর কাছেই অস্ত্রটি নেই। তবে বান্দরবান এলাকা থেকে এটি সংরক্ষণ করা হয়েছে এমন তথ্য জানিয়েছে নগরী থেকে গ্রেফতার হওয়া ৩ জন; যাদের ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে পুলিশী হেফাজতে। জানা গেছে, বাঁশখালীর লটমনি পাহাড় কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর এলাকা থেকে যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে তা অনেক আগেই র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে একাধিকবার পাওয়া গেছে। কিন্তু ফারদিনের ব্যবহৃত ¯œাইপার রাইফেলটি নিয়ে পুলিশ তথ্যানুসন্ধানে তৎপর রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ¯œাইপার রাইফেলের ২০টিরও বেশি গোলাবারুদ, অন্য রাইফেলের আড়াই শ’ গোলাবারুদ ও ম্যাগজিন উদ্ধার হয়েছিল ফারদিনের বাসা থেকে। এছাড়াও কতটি গোলাবারুদ ব্যবহার হয়েছে তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। অব্যবহৃত অবস্থায় থাকা আড়াই শ’ গোলাবারুদের অস্ত্রটিও কোথায় সংরক্ষিত আছে সে তথ্য উদ্ধারে ফারদিনকে গ্রেফতার করতে মরিয়া পুলিশ। সদরঘাটে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার হওয়া একে-২২ রাইফেল নিয়েও পুলিশের প্রশ্নোত্তরের অন্ত নেই। এ প্রসঙ্গে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি বাবুল আকতার ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুদের জানিয়েছেন, প্রায় একবছর পর শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরেছেন গত সেপ্টেম্বরে। এর পর পরই বায়েজিদে একটি মাজারের পীর ও খাদেমকে খুনের ঘটনা ও সদরঘাটে ছিনতাইয়ে একে-২২ রাইফেল উদ্ধার ও গেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। দুটি রহস্যের জট খুলতে তিনি বিনিদ্র প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আবার গত বছরের শেষদিকে একমাস চীনে ও ১৫ দিন ঢাকায় প্রশিক্ষণে ছিলেন। ফলে জঙ্গীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ছোটখাটো তথ্যের মিলন ঘটিয়ে আমানবাজারের অভিযানটি চালাতে হয়েছে। তবে উদ্দেশ্য একটাই ছিল নতুন বছরে দেশ ও দেশের মানুষের জীবন বিপন্নকারী সকল নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন।
×