ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

বই উৎসবে উপহার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২ জানুয়ারি ২০১৬

বই উৎসবে উপহার

ক্লাসে খুব হৈ চৈ হচ্ছে। রাফি উত্তেজনায় নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। তার ছটফট লাগছে। নতুন বই যে কখন হাতে পাবে! গতকাল সারারাত রাফি ঘুমায়নি। আসলে ঘুমাতে পারেনি। আজ বছরের প্রথম দিন। পাঠ্যপুস্তক উৎসব। আজ তার নতুন ক্লাসের নতুন বই পাওয়ার কথা। সেই উত্তেজনায় কাল সারারাত তার ঘুম আসেনি। রাতভর শুধু সে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেছে। আজ তার সেই কাক্সিক্ষত দিন। নতুন বই হাতে পাওয়ার দিন। আজ খুব সকালেই স্কুলে চলে এসেছে সে। এমনিতে সে সকালে উঠতে চায় না। মা তাকে ধাক্কাধাক্কি করে ঘুম থেকে তুলে স্কুলে পাঠায়। কিন্তু আজকে খুব ভোরে সে নিজেই মা আর বাবাকে জাগিয়ে দিয়েছে। উত্তেজনায় নাস্তাটাও ঠিকমতো করে করতে পারেনি রাফি। কোনরকমভাবে খাবার মুখে দিয়ে বাবাকে টানতে টানতে স্কুলে চলে এসেছে। রাফি ক্লাস ফোরে উঠেছে। ভাল ছাত্র সে। আজ জানুয়ারির ১ তারিখ। পাঠ্যপুস্তক উৎসব। আজ নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন ক্লাসের নতুন বই হাতে পাবে সে। সেই আনন্দটাই রাখার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না রাফি। টিচার ক্লাসে এসে ক্লাস ক্যাপ্টেনদের ডাকলেন। তাদের বললেন সবাইকে লাইন করে মাঠে নিয়ে যেতে। সেখানেই বই বিতরণ হবে। প্রিন্সিপাল নিজে প্রতি ক্লাস থেকে কয়েকজনকে বই দেবেন, বাকিদের বই ক্লাস ক্যাপ্টেনরা বিতরণ করবে। রাফি ক্লাস ক্যাপ্টেন। সে খুব দ্রুততার সঙ্গে অন্য ক্যাপ্টেনদের সঙ্গে সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে মাঠে নিয়ে গেল। মাঠে সাজ সাজ রব। সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছে। সবার মধ্যে উত্তেজনা, চিৎকার-চেঁচাচেচি। একটুপরে প্রিন্সিপাল এলেন। তিনি খানিকক্ষণ পাঠ্যপুস্তক উৎসব নিয়ে কিছু কথা বললেন। এরপর শুরু হলো বই বিতরণ। এই সময়টার জন্যই রাফি অপেক্ষা করে ছিল। তার আর তর সইছে না। সে অধীর আগ্রহে বই পাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রতি ক্লাসের প্রথম তিন ছাত্রছাত্রীকে প্রিন্সিপাল বই দিচ্ছেন। এবার ফাইনাল পরীক্ষায় রাফি দ্বিতীয় হয়েছে। তাকেও নিশ্চয়ই প্রিন্সিপাল নিজে হাতে বই তুলে দেবেন। সেই মুহূর্তের কথা ভাবলেই আনন্দে রাফির লাফ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। খানিকক্ষণ পর সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্ত এলো। মাইক্রোফোনে রাফির নাম ঘোষণা করা হলো। রাফি দৌড়ে স্টেজে গিয়ে বই নিল। বইগুলো হাতে নিয়েই বুকে চেপে ধরল সে। নাকের কাছ নিয়ে ঘ্রাণ শোঁকল। ইশ! কী সুন্দর ঘ্রাণ! নতুন বইয়ের নতুন ঘ্রাণ। বইগুলোকে বুকে চেপে রেখেই স্টেজ থেকে নেমে নিজের জায়গায় চলে এলো সে। বইগুলো কিছুতেই হাত থেকে নামাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। রাফি দুই হাতে বইগুলো আগলে রেখেছে। একটু পর পর ঘ্রাণ শোঁকছে। আজ সে বইগুলো ব্যাগে ঢোকায়নি। হাতে রেখেছে। নতুন বই কী ব্যাগে ঢোকাতে ইচ্ছে হয়? বাসায় এসেই রাফি দৌড়ে মায়ের কাছে গেল। বইগুলো দেখিয়ে বলল, দেখো মা! আমার নতুন বই। মা হাসলেন। বললেন, নতুন বই পাওয়ার অনেক মজা, তাই না? রাফি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ মা, অনেক মজা। তারপর সে বলল, আমি আজকে বই জড়িয়ে ধরে ঘুমাব। মা আবার হেসে উঠলেন। বললেন, আচ্ছা, ঘুমিও। এখন যাও, হাতমুখ ধুয়ে খেতে বোস। রাফি লাফাতে লাফাতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। মা আবার তাকে ডাকলেন। সে ঘুরে তাকাল। মা বললেন, শোন রাফি, নতুন বইয়ের কিন্তু শুধু ঘ্রাণ শোঁকলেই হবে না, পড়তেও হবে। বছরের শুরু থেকে লেখাপড়া না করলে পরে পিছিয়ে পড়বে। তুমি আজ থেকেই পড়াশোনা করতে বসবে, কেমন? রাফি হতাশভাবে বলল, আজই? মা বললেন, হ্যাঁ! নাহলে কীভাবে হবে? পড়াশোনায় পিছিয়ে যাবে তো। রাফি বলল, মা, প্লিজ... আজ থাক না। আমি কিছুদিন পর থেকে পড়ি? মা বললেন, একদম না। আজ থেকে পড়তে বসবে। অঙ্কটা তো আজ থেকেই করতে হবে। একদম ফাঁকিবাজি চলবে না। গতবার কিন্তু সেকেন্ড হয়েছ। এমন করলে এবারও ফার্স্ট হতে পারবে না। রাফি মন খারাপ করে চলে গেল। বইগুলো বুকে চেপে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে রইল। সন্ধ্যায় বাবা বাসায় এলেন। এসে দেখলেন রাফি মন খারাপ করে শুয়ে আছে। তিনি ছেলের পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কী হয়ে রাফি? মন খারাপ কেন? আজ তো নিউ ইয়ার। আনন্দের দিন। আজ তুমি নতুন ক্লাসে উঠেছ, নতুন বই পেয়েছ- আরও আনন্দ। তাহলে মন খারাপ কেন? রাফি বলল, মা আমাকে আজ থেকেই পড়তে বলেছে বাবা। এই তো কিছুদিন আগে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো। এখনই আবার পড়তে হবে? আমার এত পড়তে ভাল লাগে না তো। আমার ইচ্ছে করে শুধু নতুন বইগুলো বুকে চেপে ঘ্রাণ শোঁকতে। বাবা হাসলেন। বললেন, মাকে আমি বলব। বছরের শুরুতে কোন পড়াশোনা না। শুধু আনন্দ। কিছুদিন পর সিরিয়াসলি লেখাপড়া শুরু করবে। এখন পড়তে হবে না। আজ নিউ ইয়ার না? আজ একদম মন খারাপ করা চলবে না। আজ শুধুই আনন্দ। আজ শুধু নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শোঁকা আর নিউ ইয়ার উদ্যাপন করা। কেমন? তারপর তিনি বললেন, আমি তোমার জন্য নিউ ইয়ার কেক নিয়ে এসেছি। চলো, কাটবে। রাফি লাফিয়ে বাবার কোলে উঠল। বলল, তাহলে আমাকে এখন পড়তে হবে না? বাবা বলল, না। রাফি আনন্দে হেসে উঠল। বইগুলো বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। প্রাণভরে বইয়ের ঘ্রাণ শোঁকল। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, চলো বাবা, কেক কাটি। বাবা তার হাত ধরে বললেন, চলো। কেক কেটে আমরা বাইরে যাব। তোমাকে তো নিউ ইয়ারের উপহার কিনে দেয়া হয় নি। সেটাও কিনে দেব। রাফি আবার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা? বাবা বললেন, বলো? রাফি বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আমার উপহার লাগবে না বাবা। নতুন বই-ই নিউ ইয়ারে আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ৯ম শ্রেণী (ইংরেজী ভার্সন)
×