ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনামন্ত্রীর ঘোষণা

দু’বছরের মধ্যে ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

দু’বছরের মধ্যে ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে রাজধানী ঢাকাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপি। এ জন্য প্রতিদিন দিনের আলোয় ময়লা ফেলা বন্ধ করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত দশটার মধ্যে জমানো ময়লা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) তাদের এলাকার ৩০০টি সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু করবে। এ লক্ষ্যে সরকার ও সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। শনিবার রাজধানীর শাখারী বাজারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নং ওয়ার্ডে সংস্থাটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। ডিএসসিসি ঘোষিত পরিচ্ছন্ন বছর ২০১৬ এর কর্মসূচী টুয়েন্টি সিক্সটিন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে তৈরি করতে সকল ভাঙ্গাচোরা ও অসমাপ্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। প্রয়োজনে নতুন নতুন সড়ক তৈরি করা হবে। গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকার রাস্তায় আর ময়লা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। এরপর ঢাকা হবে পরিচ্ছন্ন শহর। এরপর থেকে আপনারা ঢাকার রাস্তায় ময়লা খুঁজলেও আর তা পাবেন না। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা আমাদের রাজধানী শহর। বিশ্বের যে কোন স্থানে গেলে প্রথমেই ঢাকাকে উদাহারণ হিসেবে দেখানো হয়। কেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বা নোংরা শহর তা তুলে ধরা হয়। আর ঢাকাকে খুঁজতে গেলেই পুরান ঢাকার কথা বলতেই হয়। পুরান ঢাকার প্রতিটি রাস্তা সরু হওয়ায় অনেক সময় নোংরা হয়ে থাকে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে চান যে কি করে পুরান ঢাকার সৃষ্ট ও চলমান সমস্যাগুলো দূর করা যায় এবং নতুন করে ঢাকাকে সাজানো সম্ভব হয়। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আমাকে উৎসাহজনক নানা পরামর্শও প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা ঐতিহাসিক এ শহরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে ঢাকাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে বছরব্যাপী বিশাল কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। আমরা এ কর্মসূচী বাস্তবানে যা করা প্রয়োজন তাই করব। লোটাস কামাল বলেন, আমার কাজ ঢাকার রাস্তা বড় করা ও রাস্তা মেরামত করা। আগামীতে কোন ভাঙ্গা রাস্তা পাবেন না। এর জন্য যা কিছু করা দরকার তাই করব। আপনারা এগিয়ে আসেন। সবই ঠিক হয়ে যাবে। পুরান ঢাকা আমাদের ঠিকানা। এটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারলে আমাদের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যাবে। আমরা এই ঢাকাকে কেন স্বপ্নের মাধুরী মিশিয়ে মনের মতো করতে পারব না? প্রত্যেক ধর্মেই বলা হয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই আসুন সবাই মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তুলি। পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুব দ্রুতই এই কারাগারটি স্থানান্তর করা হবে। এর স্থানে তৈরি করা হবে জাদুঘর। এটি হবে পুরান ঢাকাবাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র, মনোরম পার্ক ও বাগানবাড়ি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই তা পাস করা হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজা বলেন, আমাদের সেøাগান ‘ঢাকা ক্লিন-টু থাউজেন্ট সিক্সটিন’। আমরা বাঙালীরা চাইলে সব পারি। জাতি হিসেবে আমরা মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। ঢাকাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও একমত রয়েছেন। কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আমাদের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে। আমাদের নগরীকে মূলত আমাদেরই সাজাতে হবে। সভাপতির বক্তৃতায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন নগরবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা নগরীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে দিনের বেলায় কোন প্রকার ময়লা ফেলবেন না। ময়লা জমা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে রাত ১০টার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে ও ডাস্টবিনে জমা করবেন। আমাদের লোকজন এসে তা নিয়ে যাবে। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট কন্টেনার বা ডাস্টবিনে ফেলুন। আপনাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান বন্ধ করার পূর্বেই সৃষ্ট আবর্জনা পরিষ্কার করে নির্ধারিত স্থানে রাখুন। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে একটি পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত নগরী হিসেবে ডিএসসিসিকে গড়ে তুলতে সহায়তা করুন। প্রাথমিকভাবে ৩টি ওয়ার্ডে এটি শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডে এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য তিনি কাউন্সিলরদের ও এলাকাবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। মেয়র বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির পর একযোগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০০ ভাঙ্গা রাস্তার মেরামত কাজ শুরু হবে। এ সকল রাস্তা হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এগুলো কংক্রিটের তৈরি রাস্তা হবে। ফলে সহজে ভাঙবে না। আপনারা সাত মাস আগে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। সেদিন আমরা আপনাদের কাছে ওয়াদা করেছিলাম নগরীকে বর্জ্যমুক্ত রাখব। কিন্তু একজন মেয়র ও তার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দিয়ে নগর পরিষ্কার করা সম্ভবন নয়। এজন্য আপনাদের এক এক জনকে এক এক জন মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। এজন্য আমি এই শহরের প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি। মনে রাখবেন আমাদের সচেতনতাই পরিবর্তনের শক্তি। তাই আসুন আমরা সচেতন হই। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোঃ বিল্লাল, ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৩৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান নিয়াজী প্রমুখ।
×