ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার শতাধিক মামলা শুনানির উদ্যোগ

চাঞ্চল্যকর ৩ মামলার ডেথ রেফারেন্সের পেপারবুক দ্রুত তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

চাঞ্চল্যকর ৩ মামলার ডেথ রেফারেন্সের পেপারবুক দ্রুত তৈরি হচ্ছে

আরাফাত মুন্না ॥ আলোচিত তিন হত্যা মামলার আপীল নিষ্পত্তিতে আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের পেপারবুক (নিম্ন আদালতের রায়সহ মামলার নথিপত্র) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন ও খুলনার শিশু রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলার পেপারবুক চূড়ান্ত করে সরকারী ছাপাখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলার আসামি তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের পেপারবুক প্রস্তুতের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি মাসেই এটি চূড়ান্ত করে ছাপাখানায় পাঠানো হবে বলে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখার সূত্রে জানা গেছে। এদিকে চাঞ্চল্যকর চার শতাধিক মামলার ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিতে ওই মামলাগুলোর একটি তালিকা প্রধান বিচারপতি কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিচারিক আদালতে কোন আসামির মৃত্যুদ- হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ‘ডেথ রেফারেন্স মামলা’ হিসেবে পরিচিত। এসব মামলার পেপারবুকে এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দী, জেরার বিবরণ এবং নিম্ন আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। পেপারবুক প্রস্তুতের পর নির্ধারিত দিনে মৃত্যুদ- অনুমোদন ও আসামিদের আপীল (যদি করে) শুনানি শুরু হয়। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের শুনানি একসঙ্গে হয়। পেপারবুক প্রস্তুতের পর প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে আলোচিত এই তিন শুনানি শুরু হবে বলে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোঃ সাব্বির ফয়েজ জানান। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই দ্রুত এ তিন মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর আগে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী এবং পিলখানা হত্যা মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের পেপারবুক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়। ওই মামলাগুলোর ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি গত বছর ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। দেশে-বিদেশে আলোচিত রাজন ও রাকিব হত্যা মামলার রায় হয় গত ৮ নবেম্বর। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অপবাদে ১৩ বছরের রাজনকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদ- দেয় সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত। এছাড়া একজনের যাবজ্জীবনসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদ- দেয়া হয়। অন্যদিকে খুলনার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা ১২ বছরের রাকিবকে হত্যার দায়ে দুইজনের ফাঁসির আদেশ দেন। খালাস পান এক আসামি। এ দুই মামলায় ছয় আসামির মৃত্যুদ- দিয়ে বিচারিক আদালতের দেয়া রায়সহ মামলার নথি ১০ নবেম্বর হাইকোর্টে পৌঁছায়। ওই দিনই হাইকোর্টের ডেথরেফারেন্স শাখা তা নথিভুক্ত করে। অপরদিকে বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ঐশী রহমানের ফাঁসির রায় আসে ১২ নবেম্বর। এক সপ্তাহের মাথায় এ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পৌঁছায় এবং ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। রাকিব হত্যা মামলার আসামি মিন্টু খান, রাজন হত্যা মামলায় তাজউদ্দিন ওরফে বাদল, কামরুল ইসলাম ওরফে কামরুল এবং নূর আহম্মেদ ওরফে নুরু মিয়া এবং অন্য মামলায় ঐশীর আপীল হাইকোর্ট শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩০০ ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। মোট তিনটি নিয়মিত বেঞ্চে এসব ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়। এছাড়া আরও দুটি বেঞ্চ রয়েছে, যেগুলো শুধু বৃহস্পতিবার শুনানি করে। চার শ’ ডেথ রেফারেন্স ॥ চার শতাধিক চাঞ্চল্যকর মামলার ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিতে ওই সব মামলার একটি তালিকা প্রধান বিচারপতির কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা, ১৯ জঙ্গীর ফাঁসির দ-াদেশ, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা, রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় মানুষ হত্যাসহ এ ধরনের আলোচিত ও স্পর্শকাতর মামলা রয়েছে। ওই তালিকার সঙ্গে বিচারিক আদালতের রায় সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলাগুলোর আসামিরা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। কেউ কেউ দুর্ধর্ষ জঙ্গীনেতা। কেউ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। তারা কারাগারে বসে বাইরে নানা কৌশলে কলকাঠি নাড়ছে। জঙ্গী কার্যক্রমে নির্দেশনা দিচ্ছে। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সুকৌশলে সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে মেলামেশা করছে। জঙ্গী তৎপরতা, সন্ত্রাস ও নাশকতার পরিকল্পনাও আঁকছে কেউ কেউ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের তথ্য দিয়েছে। তাই তাদের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিচার হয়ে গেলে তারা এ ধরনের সুযোগ আর পাবে না। যত দেরি হবে, ততই উদ্বেগ ও আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।
×