ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এলাম ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এলাম ভারত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে সবেমাত্র স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেছি। দীর্ঘদিনের ভাবনা থেকেই দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমনের ইচ্ছে জাগে আমাদের। তাই গত ২১ নভেম্বর রাতে আমরা ১০ বন্ধু-বান্ধবী যাত্রা শুরু করলাম কলকাতার উদ্দ্যেশে। সাথে ছিলেন আমাদের বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান ও তার সহধর্মীনি অধ্যাপক মাসুমা সুলতানা। ২২ নভেম্বর কলকাতা পৌছে সন্ধায় হাওড়া স্টেশন থেকে সিমলার উদ্দ্যেশে ট্রেন ভ্রমন শুরু হল আমাদের। দীর্ঘ প্রায় ৩২ ঘন্টা ট্রেন ভ্রমন ছিল জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা। রাত পৌনে তিনটায় পৌঁছলাম চান্দিগড় স্টেশনে। সেখান থেকে ট্যাম্পো ট্রাভেলারে চেপে রওনা দিলাম সিমলার উদ্দ্যেশে। পাহাড়ী রাস্তায় আকাবাঁক পথে যেতে চারপাশের প্রকৃতি দেখে অভিভূত হয়েছিলাম আমরা। পাহাড়ের গায়ে সারি সারি বিল্ডিং দেখে আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সিমলায় উচু পাহাড়ে মালভ’মিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রধান শহটি ছিল নজরকারার মত। এছাড়া পাহাড়ী পথে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কুফরি নামক যায়গা পরিদর্শনও ছিল রোমাঞ্চকর। পাশাপাশি ‘গ্রীণভ্যালি’তে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে মনে হয়েছে এ এক ভিন্ন জগতের চিত্র। প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করেই আমরা ঘুড়ে বেরিয়েছি সিমলার পথে প্রান্তরে। সাথে বানর মামাদের দুষ্টমিও ছিল আনন্দের অংশ। সিমলা থেকে আমার গিয়েছিলাম উষ্ণ অঞ্চল জয়পুরে। সেখানে আম্বার ফোর্টের অসম্ভ কারুকার্য দেখে আমরা মুগ্ধ। তবে বিদেশীদের পদচারনা দেখে আমরা আরো বেশী অবাক হয়েছি। চারিদিকে পানি, এরই মাঝে অবস্থিত জলমহল। জলে ঘেড়া এই মহলটি দূর থেকে অবলোকন করেই মুগ্ধ সবাই। এসময় জয়পুরের স্থানীয় পোষাক পের অনেকেই মেতেছেন আনন্দে, বন্দী হয়েছেন ক্যামেরার ফ্রেমে। জয়পুরের অন্যতম ‘হাওয়া মহল’ এর ছোট ছোট জানালা আমাদেরকে ভাবিয়েছে সেই যুগের রাজ-রাজাদের কর্মকান্ড আর শৈল্পিক নিদর্শনকে। রাতে দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম বড় সিনেমা হল রাজ মন্দিরেও কিছু সময় কাটিয়েছি। জয়পুর থেকে টানা ৮ ঘন্টার বাস ভ্রমন শেষে আমরা পৌঁছেছিলাম আগ্রাতে। মুঘল সা¤্রাজ্যের অন্যতম স্থ্যাপত্য নিদর্শনগুলোর কথা বার বার পাঠ্যপুস্তকে পরলেও এবার বাস্তবে অবলোকনের সুযোগ পেয়ে আমরা অত্যান্ত আবেগাপ্লুত ছিলাম। আগ্রার তাজমহল আমাদেরকে স্বরণ করিয়েছে স¤্রাট সাজাহানের ভালবাসার গল্প। চারপাশের সুবিশাল প্রাচীর ছিল নজরকারার মত। আগ্রা ফোর্টের গোটা সময়টাই শুধু ভেবেছি তৎকালিন সময়ের নির্মাণ শিল্পীদের কথা। এরপর আমরা গিয়েছিলাম আগ্রার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান ফতেহপুর সিক্রি। সর্বশেষে কলকাতার ইডেন গার্ডেন, নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়াম, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও কলকাতা মিউজিয়াম ঘুড়েছি। দীর্ঘ ১২ দিনের ভ্রমন শেষে ব্যাতিক্রম অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি নিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাস সবুজের সমারোহে ফিরেছি আমরা। এ ভ্রমনের সব থেকে মজার বিষয় ছিল হিন্দিতে কথা বলার চেষ্টা। বাস ট্রেন দোকন সবজায়গাতেই ভাষাগত বিরম্বনায় পরেছি আমরা। তবুও ঘুড়েছি ভারতের কয়েকটি রাজ্যের অলি গলি, নিয়েছে নানান খাবারের স্বাদ। অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির ঝুড়িতে যোগ হয়েছে নানান গল্প। শতাব্দি ধরে টিকে থাকা নানা স্থাপত্য, শিল্পকর্ম আর ঐতিহ্য স্থান করে নিয়েছে আমাদের অন্তরে। নাহিদুর রহমান হিমেল
×