ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ফিরে দেখা ২০১৫ ॥ সেরা আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

ফিরে দেখা ২০১৫ ॥ সেরা আবিষ্কার

হোভারবোর্ড অংশত সেগওয়ে, অংশত স্কেটবোর্ড। এই দুয়ে মিলে হয়েছে স্ব-ভারসাম্যরক্ষাকারী স্কুটার যা, সাধারণভাবে হোভারবোর্ড নামে পরিচিত। হোভারবোর্ডে করে লাফিয়ে লাফিয়ে চলার সময় প্রতিটি প্যাডের নিচে থাকা গাইরোস্কোপ এমনভাবে কাজ করে যে তাতে শরীরের ভারসাম্য আপনা থেকেই রক্ষিত হয়। এতে করে ব্যবহারকারী তাদের শরীরে ভার সামান্য স্থানান্তরিত করে সামনে, পিছনে কি চারপাশে দ্রুত ছুটতে পারে। তার ফলে সব ধরনের স্টান্ট দেখানো সম্ভব হয়। প্রায় ২০টি কোম্পানি এ ধরনের হোবারবোর্ড তৈরি করছে। তার মধ্যে একটি হলো প্লাঙ্কিডাক। এই কোম্পানির যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা ম্যাস্ক ইয়েলিন হোবারক্র্যাপ্টের বৃহত্তর ব্যবহার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন। তার মতে, এটি শহরের কলেজ ছাত্রছাত্রীদে যাতায়াতের জন্য নতুন পরিবহন হিসবে কাজ করতে পারে। অবশ্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রাস্তায় ও ফুটপাথে এ গুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। যে জুতা এক হাতে বাঁধা যাবে জুতার ফিতা বাঁধা এক ঝকমারি ব্যাপার। দু’হাত ব্যবহার করতে হয়। সেরেব্রান পালসিতে আক্রান্ত ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তো ব্যাপারটা আরও কষ্টকর। তাই সবার কথা ভেবে জুতা পরার কাজটা সহজতর করার জন্য নাইক কোম্পানি বের করেছে নতুন ধরনের জুতা ফ্লাই ইজ ৮। এটা একটা বাস্কেটবল সু যেখানে এক হাতে লাগানোর ব্যবস্থা আছে। সেটা আর কিছুই নয়-একটা স্ট্র্যাপ যা ব্যবহারকারী গোড়ালির এক মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত টান মেরে লাগিয়ে দেয়। আন্ডারগ্রাউন্ড পার্ক এমন পার্ক আগে কখনও দেখা যায়নি। নিউইয়র্ক নগরীর একটি পরিত্যক্ত ট্রলি টার্মিনালকে রূপান্তরিত করা হ"েছ এমন এক ঘন সবুজ জায়গায় যা ফুলের গাছে পরিপূর্ণ এবং যেখানে আছে সূর্যস্নানের ব্যব¯'া। এর মর্মমূলে রয়েছে রিমোট স্কাইলাইট ডিশ সিস্টেম। এর সাহায্যে চারপাশের ভবনগুলোর ছাদ থেকে সূর্যালোক ধারণ করে ফাইবার অপটিক কেবল দ্বারা ভূগর্ভের ঐ জায়গাটিতে চালান করে দেয়া হয়। সেখানে পৌঁছানের পর সূর্যালোককে প্রতিক্ষেপক গম্বুজের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় যাতে করে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে। পার্কটি এখনও নির্মাণাধীন অব¯'ায় আছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৭ কোটি ডলার। ট্রান্সপারেন্ট ট্রাক প্রতিবছর হাজার হাজার লোক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় বা আহত হয়। অনেক কারণের মধ্যে এর একটা কারণ বড়সড় কোন যানের কারণে তাদের দেখতে পাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়। কথাটা আর্জেন্টিনার বেলায় বিশেষভাবে সত্য। কারণ হলো দেশটার আঁকাবাঁকা সঙ্কীর্ণ রাস্তা। এ সমস্যার এক সৃজনশীল সমাধান নিয়ে এসেছে স্যামসাং ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা লিও বার্নেটের যৌথ উদ্যোগ। উদ্ভাবিত হয়েছে এমন এক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ট্রাকের সামনে থেকে ভিডিও ফুটেজ ট্রাকের পিছনের দিকে চারটি স্ক্রিনে রিলে করা হয়। তার ফলে চালকরা সামনে কি আছে পরিষ্কার দেখতে পায়। প্রাথমিক পরীক্ষায় এই সেফ্টি ট্রাক তিন দিনে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। অথচ কোন ঘটনা ঘটেনি। এখন এই প্রযুক্তিকে আরও পরিশীলিত করে ব্যাপক পরিসরে প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বায়োনিক কান কোথায় যদি অসহনীয় শব্দ উঠে সেক্ষেত্রে উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে দুটো পথ খোলা থাকে। হয় কান চেপে বন্ধ করে রাখা নয়ত ঐ স্থান থেকে চলে যাওয়া। তবে অতি শ্রতিকটু শব্দকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে বন্ধ করে কিম্বা কমিয়ে দেয়া যায় যেমনটা আমরা টিভির ক্ষেত্রে করে থাকি তাহলে কেমন হয়? নিউইয়র্কের ডপলার ল্যাবস্ উদ্ভাবিত হিয়ার এ্যাকটিভ লিসনিং সিস্টেম নামে এক ধরনের যুগান্তকারী ইয়ারবাড সেই সম্ভাবনাই নিয়ে এসেছে। হিয়ারিং এইড বা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র সব ধরনের শব্দ নিমেষের মধ্যে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিয়ে থাকে। তবে হিয়ার এ্যাকটিভ লিসনিং সিস্টেম হিয়ারিং এইডের মতো এ ধরনের কাজ করে না। নব উদ্ভাবিত যন্ত্রের প্রসেসর একটা স্মার্টফোন এ্যাপের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর ফলে ব্যবহারকারী কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে শব্দ শুনতে চায় তা সে নিজেই ঠিক করে নিতে পারে। তার ফলে সে সাবওয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকাকালে ট্রেন ভীষণ জোরে আওয়াজ তুলে ছুটে গেলেও স্বাভাবিক কাথাবার্তা চালিয়ে যেতে তাঁর কোন অসুবিধা হয় না। বিস্ময়কর বাদ্যযন্ত্র আর্টিফোন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়মিত কোন না কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে চান। তবে বাস্তবে বাজিয়ে থাকেন তাদের মাত্র ৫শতাংশ জন। অংশত এর কারণ হলো রপ্ত করার জন্য কোন বাদ্যযন্ত্রটি বেছে নেয়া হবে তা নির্ধারণ করা এক কঠিন ব্যাপার। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আছে আর্টিফোন। আর্টিফোন এমন এক যন্ত্র যা গিটার হিসেবে, পিয়ানো হিসেবে, ড্রাম প্রাড হিসেবে, সিনথেসাইজার এবং আরও বেশ কিছু যন্ত্র হিসাবে বাজানো যেতে পাবে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারের সঙ্গে আর্টিফোনকে যুক্ত করে যে কোন দক্ষতা মাত্রার ব্যক্তি তার পছন্দের যে কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে এমনকি একসঙ্গে একাধিক বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে পারবে। আর্টিফোন কোম্পানির যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকব গর্ডন বলেন ‘আমরা সঙ্গীতে সৃজনশীলতার এক ভিন্ন পথ সৃষ্টির চেষ্টা করছি। সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব গাড়ি গত সেপ্টেম্বরে বাজারে আসা বিদ্যুতচালিত গাড়ি তেসলা দশম মডেল বাস্তবতার পথে আরেক বিরাট অগ্রগতি। গাড়িটি যে দেখতে দারুণ আকর্ষণীয় তাই শুধু নয়, এটি অনেক উপযোগীও বটে। বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল বৈদ্যুতিক এসইউভি একবার চার্জ নিয়ে আড়াইশ মাইল যেতে পারে। সঙ্গে নিতে পারে ৭ জন আরোহী। এতে আছে ব্যাকডোর যা পাখির ডানার মত খুলে যায়-তবে বাইরের দিকে নয়, উপরের দিকে। স্থির অবস্থায় থেকে এটি ৩.২ সেকেন্ডের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতিতে পৌঁছাতে পারে। সাগরের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রশাস্ত মহাসাগরের মাঝখানে প্লাস্টিকের আবর্জনা জমে আয়তনে টেক্সাসের চেয়েও বড় আকার ধারণ করেছে এবং এর পরিধি আরও বাড়ছে। জাল দিয়ে এই আবর্জনা টেনে সরানো যেমন ব্যয়বহুল তেমনি আবার সময়ও লাগে প্রচুর। এর পরিবর্তে ওশেন ক্লিনাপ প্রজেক্ট এক শ’ কিলোমিটার লম্বা ভাসমান প্রতিবন্ধকের প্রস্তাব দিয়েছে যার পিছনে ব্যয় হবে দেড় কোটি ডলার। প্রতিবন্ধকের নেট সাগর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ফুট নিচে থাকবে এবং স্বাভাবিক স্রোতকে কাজে লাগিয়ে আবর্জনা আটকে ফেলবে। এ বছর এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এতে সফলতা এলে ২০২০ সালে পুরোদস্তুর পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ব্যবস্থায় সাগরের আবর্জনার পরিমাণ ১০ বছরে ৪২ শতাংশ কমবে। পানি বিশুদ্ধকরণ বই সারা বিশ্বের প্রায় ৬৬ কোটি ৩০ লাখ লোক বিশুদ্ধ খাবার পানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এর আংশিক কারণ হলো পানি ছেঁকে বিশুদ্ধ করার কাজটা জটিল ও ব্যয়বহুল। সমস্যা সমাধানের জন্য টেরি ডানকোভিচ উদ্ভাবন করেছেন ডিঙ্কেবল বুক যা পানি বিশুদ্ধ করে। আর সেই বিশুদ্ধ করার কাজটা জটিলও নয়, ব্যয়বহুলও নয়। পানি শোধনের জন্য বইটা এমনভাবে রাখতে হয় যাতে তার মধ্য দিয়ে পানি যেতে পারে। পাতন হবার সময় বইয়ের পাতাগুলো দ্বিগুণ আকার ধারণ করে এবং এতে এতে সন্নিবেশিত উপাদানগুলোর বদৌলতে ৯৯ শতাংশ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ঘানায় এই বইটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার সফল প্রমাণিত হয়েছে।
×