ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিলবোর্ড ও স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

বিলবোর্ড ও স্থাপনা

নগর জীবনের নান্দনিক স্থাপত্য চলে যায় বলে কবি শঙ্খ ঘোষ আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। বাস্তবিকই রাজধানী ঢাকা যেন ছেয়ে আছে অসংখ্য ও অগণিত বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও নানা রঙের মনোলোভা এবং চিত্তহরণকারী বিজ্ঞাপনে। আজকাল আবার নিওন সাইন ও আলো ঝলমলে বিলবোর্ড এবং বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি অবলীলাক্রমে জায়গা করে নিয়েছে হরেক রকম হিলিয়াম বেলুন, বিশাল বিশাল টিভি স্ক্রিন। সর্বোপরি সুবিশাল এই টিভি মনিটরে সার্বক্ষণিক স্ক্রল ভিডিও চিত্রের প্রচার। সত্যি বলতে কি, মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষজনই যখন এর আধিক্য ও প্রাবল্যে অতিষ্ঠপ্রায়, তখন যানবাহন চালকদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। নগর জীবনে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার যে অন্যতম একটি কারণ এসব বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপন, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। ঢাকার আশপাশসহ শহরতলি এবং বিশেষ করে হাইওয়েগুলোতে এর লাগামহীন আধিপত্য লক্ষণীয়। এমনিতেই ঢাকাসহ সারাদেশের সড়কপথ জনসংখ্যা ও যানবাহনের তুলনায় অর্ধেক। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোন দেশে জনসংখ্যার চাহিদা অনুপাতে রাস্তাঘাটের অনুপাত পঁচিশ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশে সেই অনুপাতে আছে মাত্র ৮-১০ শতাংশ। এরও একটি বড় অংশ দখল করে আছে অবৈধ স্থাপনা, বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপন। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এগুলোর অধিকাংশই অবৈধ ও অননুমোদিত। সে অবস্থায় অবৈধ স্থাপনা ও বিলবোর্ড অপসারণে সুচিন্তিত নীতিমালা প্রণয়নসহ একটি নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সরকারের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে অধিদফতরের আওতাধীন রাস্তার ধারের বেদখল জমি ব্যবহার ও বিলবোর্ড এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের স্থান ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে যে কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠান যে কোনভাবে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের এবং আন্তঃজেলা সংযোগ সড়কের ধারে খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবে না। নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সওজ অধিদফতর থেকে তিন বছরের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে ভূমি ইজারা ও বিলবোর্ড স্থাপনের চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কের জন্য এই হার ধার্য হবে নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বর্গফুটভিত্তিক। প্রতি বিলবোর্ডের ওপর যে স্মারক নম্বর ভাড়া ও ইজারা নেয়া হয়েছে তার উল্লেখ থাকতে হবে। তদুপরি জাতীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে, সরকারী নীতি পরিপন্থী অথবা অশালীন কোন ছবি বা লেখা বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না। এ সবই হবে আইনত দ-নীয় অপরাধ। লিখিত ছাপার, বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ডিজিটাল জায়ান্ট স্ক্রিনে স্ক্রল ভিশন ভিডিও চিত্র, ট্রান্সভিশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফি হবে আলাদা। তদুপরি এই ফি নিয়মিত প্রদান সাপেক্ষে নবায়ন করা যাবে। সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, এসবই ভাল উদ্যোগ ও আয়োজন। গত বছরের নবেম্বরে প্রণীত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আওতায় নেয়া হয়েছে এসব সিদ্ধান্ত। এখন কবে নাগাদ এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সড়ক এবং জনপথ কর্তৃপক্ষকে প্রথমেই যে প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হবে তা হলো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ও অগণিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ বিলবোর্ডসমূহ অপসারণ। এতদিন ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি প্রায় বিনা ভাড়ায় অথবা নামমাত্র মূল্যে এসব ভোগদখল করে আসছে, তাদের উচ্ছেদ করা খুব সহজ হবে না। অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নীতিমালা ও আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করতে হলে কঠোর ও নিরপেক্ষ হতে হবে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহলকে সম্পৃক্ত করা বাঞ্ছনীয়। আধিক্য ও দৃষ্টিকটু বিজ্ঞাপন পরিহার করে অন্য স্থানে দৃষ্টিনন্দন বিলবোর্ড স্থাপন করা সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের পাশাপাশি সহায়ক হবে সৌন্দর্যবর্ধনেও।
×