ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধান বিচারপতিকে দেয়া চিঠিতে বিচারপতি মানিকের মন্তব্য

অবসরের পরে রায় লেখা বন্ধ হলে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

অবসরের পরে রায় লেখা বন্ধ হলে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে

আরাফাত মুন্না ॥ অবসরে যাবার পরে বিচারপতিদের রায়ে স্বাক্ষর না করতে দিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে দেশে চরম সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে বলে অভিযোগ করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। গত ১০ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতিকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার ওই চিঠির একটি অনুলিপি জনকণ্ঠের হাতে আসে। চিঠিতে প্রধান বিচারপতিকে তিনি বলেন, আপনি (প্রধান বিচারপতি) আমার দ্বারা লিখিত অপেক্ষমাণ রায়সমূহ লেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আমার সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন ও লঙ্ঘন করছেন। তিনি চিঠিতে লিখেন, অবসপ্রাপ্ত বিচারপতিদের রায়ে স্বাক্ষর করতে না দেয়ার সিদ্ধান্তে সংবিধানের ১৫তম, ১৩তম, পঞ্চম, সপ্তম সংশোধনীর মামলার রায়, জেল হত্যা মামলার রায়, মাজদার হোসেন মামলার রায়সহ অনেক সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কারণ হিসেবে চিঠিতে বিচারপতি মানিক বলেন, এসব মামলার রায় বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পরে লিখেছেন। ফলে আপনার গৃহিত সিদ্ধান্তের কারণে এসব রায় প্রশ্নবিদ্ধ হলে দেশে চরম সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে। বিচারপতি মানিক আরও বলেন, এ ধরনের আইনগত ভিত্তিহীন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের দ্বারা আপনি দেশকে চরম সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে, আমি রাষ্ট্রের স্বার্থে আগেও আপনাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে আরও বলেন, রায় লেখার জন্য আমাকে অফিস না দেয়া আপনার ব্যক্তিগত হীনমন্যতা হিসেবে বিবেচনা করে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের কক্ষে বসেও কাজ করতে আপত্তি করি নাই, যদিও আমার ব্যবহৃত অফিস এখনও খালি পড়ে আছে। বিচারপতি মানিক চিঠিতে বলেন, আপনার সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমি অনেক অপেক্ষমাণ রায় লেখা শেষ করেছি। প্রতিবন্ধকতা না থাকলে এ সময়ের মধ্যে আমি প্রায় সকল অপেক্ষমাণ রায় লেখা শেষ করতে সক্ষম হতাম। চিঠিতে বিচারপতি মানিক আরও বলেন, অবসরগ্রহণের পর আমি প্রায় তিন মাস রায় লেখা থেকে বঞ্চিত থেকেছি। আবার গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় সুবিধাসমূহ বন্ধ করে দেয়ায় আবার আমি রায় লেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আপনার এহেন কর্মকা- আমার রায় লেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং এরূপ কাজ ন্যায়বিচার ও আদালতের প্রথা বিরুদ্ধ। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বিচারপতি মানিক বলেন, আপনার এ আইনগত ভিত্তিহীন ফরমান কার্যকর হলে অবসরে যাওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই সকল বিচারপতিকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত যেহেতু প্রচলিত প্রথা এবং আইনবিরোধী, সেহেতু তা আপনি প্রশাসনিক নির্দেশ বলে নিতে পারেন না। এ ধরনের জন্য আদালতের বিচারিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ভারতীয় কোন রায়েই বলা হয়নি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিগণ রায়ে স্বাক্ষর দিতে পারবেন না। যদি ভারতের কোন রায়ে বলা হয়েও থাকে তাহলেও এটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমাদের আদালতে সব সময়ই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা রায়ে স্বাক্ষর করেছেন।
×