ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার দিনের উৎসব শিল্পকলায়

সেলিম আল দীনের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব শেকড় সন্ধানী চর্চা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

সেলিম আল দীনের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব শেকড় সন্ধানী চর্চা

মোরসালিন মিজান আরও কত যে দেয়ার ছিল! হলো না। তড়িঘড়ি বিদায়। হঠাৎ করেই চলে গেলেন সেলিম আল দীন। বাংলা নাটকের ক্ষণজন্মা পুরুষ অবশ্য মৃত্যুতে থেমে যাননি। বিলীন হননি। শিকড় সন্ধানী মন, নিজস্ব নাট্যআঙ্গিক নিয়ে অহর্নিশ চর্চা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। নিরীক্ষাপ্রিয় নাট্যকার নাটকের কোন একটি ফর্ম বা কনটেন্টে বেশিদিন স্থির থাকেননি। ভাংচুরের মধ্য দিয়ে স্বভূমে ফিরেছেন। তাঁর দেখানো পথে এখন চর্চা করছে আজকের প্রজন্ম। সেই চর্চার একটি বহির্প্রকাশ সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব ২০১৬। বিখ্যাত নাট্যকারের প্রয়াণ দিবসে যৌথভাবে উৎসবের আয়োজন করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা থিয়েটার। শিল্পকলা একাডেমিতে মঙ্গলবার চারদিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। পরীক্ষণ থিয়েটার হলের লবিতে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা প্রমুখ। এখানে উৎসবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ছোট্ট একটি আলোচনারও আয়োজন করা হয়। এর এক ফাঁকে একান্তে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন সেলিম আল দীনের শিল্প সুহৃদ ও ঢাকা থিয়েটারের প্রধান নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সেলিম আল দীনকে স্মরণ কেন করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, সেলিম বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নাট্যকার। আমাদের নাট্য আন্দোলনে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। তারও আগে অনেক অনেক ভাল নাটক হয়েছে। তবে আমি মনে করি, সেগুলো ঠিক বাঙালীর নাটক ছিল না। নাট্য আঙ্গিক, উপস্থাপনা রীতি, শিল্প রীতি, নন্দন তত্তÑ সব মিলিয়ে ইউরোপের বা ঔপনিবেশিক ধারার একটি ভারতীয় রূপ দেখেছি। আরেকটি ছিল অনুবাদ নাট্যের ধারা। সেলিম সেখানে বাঙালীর নিজস্ব নাট্যরীতি নিয়ে সামনে আনেন। নাট্য ঘরানাটি পরিষ্কার করেন। শুরুটা রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় কলকাতা কবিগুরুর নাটক বুঝতে ব্যর্থ হয়। রবীন্দ্রনাথ কাজটি শুরু করেছিলেন। সেলিম পূর্ণতা দেন। বিশেষ এ অবদানের কারণেই তাঁকে স্মরণ করতে হবে। উৎসবে সেলিম আল দীনের নিজের লেখা নাটক মাত্র একটি। এর ব্যাখ্যা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেলিম আল দীনের লেখা নাটক একটি। তবে, তাঁর চিন্তা ও নাট্যতত্ত্ব নিয়ে যারা কাজ করেন, সেই তাদের নাটক থাকছে উৎসব। এটি ভিন্ন একটি মাত্রা। উদ্বোধনী পর্ব শেষে পরীক্ষণ থিয়েটারের মূল মঞ্চে শুরু হয় নাট্য প্রদর্শনী। এখানে উৎসবের প্রথম নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ হয় ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের অমর কাহিনী অবলম্বনে রচিত নাটকটি উৎসব মঞ্চে আনে সাভারের বুনন থিয়েটার। নিদের্শনা দেন আনন জামান। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ বলেই হয়ত অন্য রকম একটি শুরু সম্ভব হয়েছে। নাগরিক জীবনে এই লোককাহিনী বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়। নতুন করে আবেগে ভাসায়। সাজু আর রূপাইয়ের বিয়োগান্তক প্রণয় উপাখ্যান বেদনায় নীল করে দর্শক হৃদয়। নাটকে অভিনয় করেন শুভনন্দ করিম, তুষার কান্তি দে রাজন, অমৃতাভ মিহির, দিদারুল দিপু, বুলবুল আহমেদ, রাতমনি, আবু ফাহিম, পাপ্পু দাস, ফজলুল হক রানা প্রমুখ। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ বুধবার বিকেল ৫টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘সময়ের সংলাপ’। জালালপুর থিয়েটারের নাটকটি লিখেছেন এসএম আব্দুল্লাহ। নির্দেশনাও তাঁর। সন্ধ্যা ৭টায় একই মঞ্চে থাকবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের নাটক ‘কবি’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা থেকে নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। কাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে জামালপুরের শহীদ সমর থিয়েটারের নাটক ‘বীরাঙ্গনা বিমলারা’। রচনা আসাদুল্লাহ ফারাজীর। নির্দেশনায় আসাদুল্লাহ ফারাজী ও শাহীন রহমান। সন্ধ্যা ৭টায় একই হলে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে সেলিম আল দীনের লেখা নাটক ‘ঊষাউৎসব’। নির্দেশনায় সামিউন জাহান দোলা। শুক্রবার উৎসব ভেন্যু হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বিকেল ৫টায় এখানে মঞ্চস্থ হবে ফরিদপুরের বাংলা থিয়েটারের নাটক ‘কৃষ্টি’। রচনা ও নির্দেশনায় ম. নিজাম। একই মঞ্চে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে দ্যাশবাঙলা থিয়েটারের ‘কঙ্কাল ও সাড়ে তিন হাত’। রচনা রশিদুল ইসলাম রাজা। নির্দেশনায় মেহেদী তানজির। এই নাটকের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে উৎসবের।
×