ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাইবার নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

সাইবার নিরাপত্তা

দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই এই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন থানার অধীনস্থ এলাকায় যদি খুনের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরাধের আলামত সংগ্রহের। তেমনি সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেও কিছু অত্যাবশ্যক ব্যবস্থা নিতে হয়। সেসব ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও শতভাগ সক্ষম ও সচেতন নয়। উন্নত বিশ্ব সাইবার অপরাধ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সাম্প্রতিককালে দেশে যেসব সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার ভেতরে প্রধান হচ্ছে ব্যক্তিগত হয়রানি। কারও সম্পর্কে মানহানিকর বা আপত্তিকর কথা ও ছবি পোস্ট করা। সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের ফলে এই অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে নারী সংক্রান্ত বিষয়ে সাইবার অপরাধের মাত্রা বেশি। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাচ্ছে। অনেকে লজ্জা বা সঙ্কোচের জন্য সেটাও করছে না। বাস্তবতা হলো ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সব বন্ধ দরোজা। এখন বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশে উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কর্মীদের দক্ষতা অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। গত বছর ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫৪তম অবস্থানে ছিল। দেশে আউটসোর্সিংয়ে ব্যাপকভাবে তরুণরা এগিয়ে আসার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব। আউটসোর্সিংয়ে ৫ বছরে কর্মসংস্থানের টার্গেট দুই লাখ করার পদক্ষেপ গ্রহণে প্রাণিত হয়েছে বিপুল সংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী। তবে বাংলাদেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। তাদের ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার কাজ করছে। সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়নে তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ওয়াইফাই চালু করা হয়েছে। বর্তমান সরকার গোটা দেশকে শতভাগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ৬৪টি জেলা ও ১৯৭টি উপজেলা ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলাকে এর আওতায় আনা হবে। দেশের তরুণরা বর্তমানে এই সেক্টর থেকে প্রতিবছর ২শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সংক্রান্ত অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের শাস্তির বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি বিদ্যমান ধারা আইসিটি আইন থেকে বাদ দিয়ে সেগুলো আরও স্পষ্ট করে নতুন আইনে যুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। আইসিটি আইনের সঙ্গে নতুন আইনের যেন কোন অসামঞ্জস্য না থাকে, সেজন্য খসড়াটি চূড়ান্ত করার আগে আরও আলোচনা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। আইনটির অধীনে ‘সাইবার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন শাস্তিও নির্ধারণ করে দেয়া হবে। স্বস্তিকর বিষয় হলোÑ যে যে ব্যাপারে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় উদ্বেগ ছিল, সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা আশা করব, আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু আইন প্রণীত হবে, যেটি স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না। বিশেষ করে সমাজের সৃষ্টিশীল ও মননশীল অংশ যেন নিজেদের বঞ্চিত ও বিপন্ন না ভাবেন। মনে রাখা চাই, মনোজগতে শাস্তির ঝুঁকি নিয়ে মুক্তচিন্তার দিগন্ত প্রসারিত হতে পারে না।
×