ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রতিরোধ্য সড়ক দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

অপ্রতিরোধ্য সড়ক দুর্ঘটনা

সড়ক দুর্ঘটনা এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এমন কোন দিন নেই, যেদিন অকালে প্রাণ ঝরছে না, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারি হয়ে উঠছে না। সড়ক যেন এখন মরণফাঁদ। দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট পরিবারের সারা জীবনের কান্নার কারণ। সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও দেশের কয়েকটি স্থানে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেশি। একই সড়কের একই স্থানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনই একটি সড়ক সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়ক। এই সড়কে শনিবার অকালে প্রাণ হারালেন ভূমিমন্ত্রীর ছেলেসহ সারাদেশে ১১ জন। ঘন কুয়াশা এবং সেতুর লাইটিং বাল্বগুলো বন্ধ থাকায় মূলত এই দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন সময় চালকের অসাবধানতা, অদক্ষতা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, রাস্তার দুরবস্থাসহ নানাবিধ কারণই সড়ক দুর্ঘটনার উপলক্ষ। এসব দুর্ঘটনায় অকালে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ, পঙ্গুত্ববরণ করছে অসংখ্য মানুষ, বাড়ছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা, নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার। ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অঙ্গীকার করেছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে বাংলাদেশ সইও করেছে। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় দিনে গড়ে ২৪ জন মারা গেছেন। ২০১৪ সালের চিত্রও ছিল একই। এমনই এক পরিসংখ্যান মিলেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে এক বেসরকারী সংগঠনের জরিপে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৫ হাজার ৯২৮টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৮৯ জন। আর আহত হয়েছিলেন ১৭ হাজার ৫২৪ জন। কমিয়ে আনার পরিবর্তে উল্টো দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে নানা কর্মপরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও কিছু সড়কের বাঁক সোজা করা এবং মাঝে-মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়া দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক হলেও তা রোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। অথচ প্রতিরোধে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ এখন খুবই জরুরী। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাধারণত ফুটপাথ দখল, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ক্রসিংয়ে জেব্রা ক্রসিং না থাকা এবং জেব্রা ক্রসিং গাড়িচালক কর্তৃক না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যান একই সঙ্গে চলাচল, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো এবং মহাসড়ক ক্রসিংয়ে ফিডার রোডে যানবাহন উঠে যাওয়াই দায়ী। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ যানবাহনের মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রয়েছে ৩ লাখের বেশি। দেশে চালকের লাইসেন্স আছে সাড়ে ১৫ লাখ। এসব অসঙ্গতি রেখে নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা সত্যিই দুরূহ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময় দেয়া বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এখন সড়ক-মহাসড়ক অধিকতর প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হলে এসব পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী ভিত্তিতে নেয়া উচিত। অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, বিভিন্ন সময় সড়ক চলাচল নির্বিঘœ করতে আদালতের নির্দেশও উপেক্ষিত থেকেছে। আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ করা যায় না। আর অজুহাত না দেখিয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সড়কে যাত্রা নির্বিঘœ করতে হবে।
×