ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চরমে

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চরমে

নিজস্ব সংববাদদাতা, কেশবপুর (যশোর) ॥ কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ভেতর দীর্ঘদিনের গ্রুপিং বর্তমানে প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। প্রয়াত শিক্ষা মন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকের আমল থেকে সক্রিয় এই গ্রুপিং এর জন্য দলের অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছে। কখনো ব্যক্তি স্বার্থ আবার কখনো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানাভাবে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে চলেছেন। বিশেষ করে প্রতিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে এই গ্রুপিং মারাত্মক আকার ধারান করে। যার কারনে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থীর পরাজয় ঘটতে দেখা গেছে। এবারও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেশবপুর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল গোলযোগ এখন রাজপথে বিরাজ করছে। নবগঠিত দুটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন নিয়ে উভয় গ্রুপ গত এক সপ্তাহব্যাপী প্রকাশ্য রাজপথে মিছিল পাল্টা মছিল-সমাবেশসহ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আধিপত্ত বিস্তার করে চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কেশবপুর আসনে বিএনপি-জামায়াত এমপি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগকে দাবিয়ে রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত শিক্ষা মন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক কেশবপুরের এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর ব্যাপক উন্নয়নে কেশবপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন বেড়ে যায়। পরপর দুইবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকে কেশবপুরে আওয়ামী লীগের ভোটার বেড়ে এ আসনটি আওয়ামী লীগের কজ্বায় চলে আসে। সেই সময় থেকে একটি গ্রুপ সাদেক সাহেবের বিরুধীত শুরু করে। এক পর্যায়ে সেই বিরুধীতা অন্তর থেকে প্রকাশ্যে চলে আসে। গত বিএনপির আমলে সাংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় কেশবপুরের উন্নয়নের কারিগর সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক মারা যান। এরপর কেশবপুর ও অভয়নগর নিয়ে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভয়নগরের অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব নির্বাচিত হয়ে হুইপ নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাককালিন তিনি কেশবপুরের তেমন কোন উন্নয়ন তো করেননি বরং কেশবপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দূর্নীতি আখড়ায় পরিনত করেন। ওই সময় মূলধারার নেতাকর্মীরা হুইপ ওহাবের সাথে চলে যান এবং হুইপ ওহাবের সাথে ব্যাপকভাবে দূর্নীেিত জড়িয়ে পড়েন। পরে আবার কেশবপুর আসন পৃথক হয় এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাদেক পত্নী ইসমাত আরা সাদেক এমপি নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ইসমাত আরা সাদেক নির্বাচিত হলে কেশবপুরের আওয়ামী লীগ তিন গ্রুপে পরিনত হয়। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমীর হোসেন। আর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এস রুহুল আমীন, অপরটি ইসমাত আরা সাদেকের। প্রতিটি নির্বাচনকে ঘিরে এই গ্রুপিং মারাতœক আকার ধারন করে থাকে। সে কারনে গত ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাত্র দু’জন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারনে বাকি সাতটি বিএনপি-জামায়তের ঘরে চলে যায়। একাধিক সূত্রে জানা গেছে এবারের ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থী দেয়া হবে। আর এই ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে তিন গ্রুপই এখন প্রকাশ্যে মাঠে নেমে প্রকাশ্য দ্বন্দে¦র বহিপ্রকাশ দেখাচ্ছে। শনিবার ২৩ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত কেশবপুরের নবগঠিত ত্রিমোহিনী, সাতবাড়িয়া, হাসানপুর ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ৪টি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে উপজেলার হাসানপুর, ভান্ডারখোলা, সাতবাড়িয়া ও ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ওই চারটি ইউনিয়নে পৃথক পৃথক ভিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্য্য নির্বাহী কমিটি কোন সভা ছাড়াই এবং পূর্ববর্তী বৃহত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি বিলুপ্ত না করেই এলাকার সংসদ সদস্যকে পাশ কাটিয়ে তারা নতুন আহ্বায়ক কমিটি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ভাবে ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করায় নেতা কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পদত্যাগের দাবিতে রবিবার ২৪ জানুয়ারি বিকেলে কেশবপুরে দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে। উপজেলার শতশত নেতাকর্মী একত্রি হয়ে কেশবপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তারা ত্রিমোহিনী মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সোমবার ২৫ জানুয়ারি একই দাবিতে বিক্ষুব্ধরা শহরের উপজেলা আওয়ামীলীগের নিজস্ব কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনায় দপ্তর সম্পাদকের নামে থানায় জিডি করেছেন সভাপতি এস এম রুহুল আমীন। পরেরদিন মঙ্গলবার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক তার লোকজন নিয়ে মিছিল করে অফিসের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলে তারা অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গত দুদিন ধরে আওয়ামী লীগ অফিসে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী দ্বনেব্দ¦র কারনে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বিএনপি-জামায়াত আবারও অধিকাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে বলে অভিজ্ঞ মহন মন্তব্য করেছেন।
×