ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাইগার ক্যারাভ্যান টাইগার টক-

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

টাইগার ক্যারাভ্যান টাইগার টক-

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বাঘ রক্ষায় দেশজুড়ে এবার সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় তারা দুই বছরব্যাপী প্রচারাভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে টাইগার ক্যারাভ্যান নামক উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি বাস বিভিন্ন স্থানে সুন্দরবন ও বাঘ বিষয়ক প্রদর্শনীতে অংশ নেবে। এছাড়াও আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বসবে সংলাপ ‘টাইগার টক’। বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন। বুধবার বন বিভাগের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর কাওরানবাজারের একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ সুরক্ষা করব’- এ সেøাগান নিয়ে একটি বাস সারাদেশে ১০০টি স্থানে গিয়ে সুন্দরবন ও বাঘ বিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। পাশাপাশি পথনাটকসহ নানা আয়োজনে মানুষের মধ্যে বাঘ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করবে এই ক্যারাভ্যান। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও বন বিভাগের যৌথ আয়োজনে এ প্রচারাভিযান বাস্তবায়ন করবে বেসরকারী সংগঠন ওয়াইল্ড টিম। টাইগার ক্যারাভ্যান ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেও তরুণদের বাঘ সুরক্ষায় সম্পৃক্ত করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ ইউনুস আলী বলেন, বাঘ দেশের জাতীয় পশু হলেও যতই দিন যাচ্ছে বাঘের সংখ্যা ততই কমছে। বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ আছে মাত্র ১০৬টি। বাঘ আমাদের গর্ব। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই বাঘের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বে মাত্র ৩ হাজার ২শ’টি বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে আছে ১০৬টি। আমরা টাইগার এ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করছি। তিনি বলেন, বাঘ আমাদের বনের প্রহরী, তাকে মারবেন না। রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে সুন্দরবনে কী প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়টি পর্যেবেক্ষণ করতে খুব শীঘ্রই ইউনিসেফ’র একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে বলেও জানান তিনি। ইউএসএআইডির ইকোনমিক গ্রোথ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড এনার্জির টিম লিডার ডাঃ কার্ল উরস্টার বলেন, বাংলাদেশে বাঘের টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করেছি। টাইগার ক্যারাভ্যান কার্যক্রমটির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশা করছি। বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। আর সেই দ্বন্দ্ব নিরসনে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। বাঘের হামলায় কোন মানুষ নিহত হলে ১ লাখ টাকা ও আহত হলে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বন বিভাগ ও ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক জরিপে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওই সংখ্যা পাওয়া গেছে ১০৬টি। ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। ১৯৮৪ সালের জরিপে ৪৩০টি থেকে ৪৫০টি, ১৯৯২ সালে বন বিভাগের জরিপে ৩৫৯টি, ১৯৯৩ সালের পদচিহ্ন জরিপে ৩৬২টি। ২০০৪ সালের পাগমার্ক পদ্ধতির শুমারিতে (বন বিভাগ, ইউএনডিপি ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ) ৪৪০টি (২১ বাচ্চাসহ) ও ২০০৯ সালে রেডিও টেলিমেট্রি জরিপে (বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) ৪০০টি থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক ও ইউএসএআইডির বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর কার্ল উরস্টার, ওয়াইল্ড টিমের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
×