ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অ্যাকশন নয়, নিখুঁত লাইনই আমার অস্ত্র-জসপ্রীত

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অ্যাকশন নয়, নিখুঁত লাইনই আমার অস্ত্র-জসপ্রীত

অনলাইন ডেস্ক ॥ অস্ট্রেলিয়ায় একটা ওয়ান ডে আর তিনটে টি-টোয়েন্টি। তার পরই তাঁর চারপাশটা যে একদম অন্য রকম হয়ে গিয়েছে, তা দেশে ফিরে দু’দিনেই বুঝে গিয়েছেন তিনি। ফোনের পর ফোন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের। গত দশ দিনে ভক্তের সংখ্যাও বেড়েছে হু হু করে। তারাও নাগাড়ে ফোন করে যাচ্ছেন। বাড়িতে এসে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন শহর আমদাবাদের ক্রিকেট কর্তারাও। কিন্তু এ সবে ভেসে যেতে চান না জসপ্রীত বুমরাহ। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন স্বপ্ন। মাঠে যে মানসিকতা নিয়ে বোলিং করে সাফল্য পেয়েছেন, মাঠের বাইরেও একই মানসিকতা ধরে রাখতে চান তিনি। সেটা কী? ‘‘যত সাফল্যই আসুক, যত প্রশংসাই পাই, নিজেকে বিশাল কিছু ভেবে ফেললে নিজেকেই চাপে ফেলে দেওয়া হবে। তাই অভিনন্দনে ভেসে গিয়ে লাভ নেই’’ সদ্যসমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সফর সেরে দেশে ফিরে বললেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বোলিং সেনসেশন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যাঁকে ‘‘এই সফরের সেরা আবিষ্কার’’ বলেছেন। নিজেকে গুজরাত দলের বোলার ভেবেই সিডনিতে প্রথম ওভারটা করতে গিয়েছিলেন। বুধবার আমদাবাদের ড্রাইভ ইন রোডের বাড়ি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘যখন আমাকে বল করতে যেতে বলে ধোনি ভাই, তখন একবারও মনে করিনি ভারতের হয়ে বল করছি, আমার কাঁধে বিশাল দায়িত্ব। রঞ্জি ট্রফিতে গুজরাতের হয়ে বল করার সময় যে রকম থাকি, সে রকমই ছিলাম। তাই নিজের স্বাভাবিক বোলিংটাই করতে পেরেছি।’’ টোটকাটা নাকি ধোনিই দেন। সিডনিতে ওয়ান ডে ক্যাপ দিয়ে ধোনি কী বলেছিলেন? ‘‘শুভেচ্ছা জানিয়ে ধোনি ভাই বলল, ‘তুই তোর মতো বোলিং করবি। বাড়তি কিছু করতে যাস না। যেমন বোলিং করে এসেছিস, তেমনই কর।’ ক্যাপ্টেনের মুখে এই কথা শুনে যে কী হালকা হয়ে গেলাম, বলে বোঝাতে পারব না।’’ এর পর ২২ বছরের পেসার কী করলেন, তা তো সবারই জানা। ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট চার ম্যাচে আট উইকেট। শিকারের নাম স্টিভ স্মিথ, জেমস ফকনার, ডেভিড ওয়ার্নার, ক্রিস লিন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা অনেকে বলছেন তাঁর বিরল বোলিং অ্যাকশনই এই সাফল্যের প্রধান কারণ। কিন্তু জসপ্রীতের যুক্তি, ‘‘তা কেন হবে? আইপিএলে তো ওরা অনেকেই আমার বোলিং খেলেছে। আমার অ্যাকশন কেমন, তা ওরা জানে। আমার মনে হয়, নিখুঁত বোলিংটা করতে পেরেছি, ঠিক জায়গায় বল রাখতে পেরেছি বলেই ওরা আমার বল ঠিকমতো খেলতে পারেনি।’’ তাঁর মারণ ইয়র্কারে স্মিথ, ফিঞ্চ, ফকনার, ম্যাক্সওয়েলদের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যানরাও জব্দ। এই মারণাস্ত্র নিয়ে জসপ্রীত বলছেন, ‘‘ইয়র্কারটা বরাবরই আমি ভাল দিতে পারি। হয়তো আমার অ্যাকশনের জন্য এটা সম্ভব হয়। প্রার্থনা করবেন, এ রকম বোলিংই যেন করে যেতে পারি বরাবর।’’ বাড়িতে মা আর বোন। বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলায়। মা দলজিৎ বুমরাহ স্থানীয় নির্মান হাইস্কুলে প্রাইমারি বিভাগের প্রিন্সিপাল। তাই ছোটবেলা থেকে আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো বড় হওয়ার সুযোগ পাননি জসপ্রীত। ২০১৩ থেকে গুজরাতের হয়ে খেলছেন। ২০১৪-য় হাঁটুতে চোট পেয়ে দল থেকে বাদ পড়ার পরের সময়টা তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, জানালেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা। বললেন, ‘‘ওই সময়ে আমি ফর্মে ছিলাম। ঠিক তখনই চোট লাগে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটা প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার কথা ছিল। তাই খুব খারাপ লেগেছিল। কিন্তু ভেঙে পড়িনি। এর জন্য আমার মা, বোনের অবদান অনেকটাই। আমার এই সাফল্যে তারা খুশি, গর্বিত, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’’ এখন সামনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পাখির চোখ করে বসে আছেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ? বললেন, ‘‘বরাবরই আমি সামনে যে ম্যাচ আছে তাতেই মন দিই। অন্য কিছু নিয়ে ভাবিই না।’’ আর পিছন ফিরে তাকাবেন না। শপথ নিয়েছেন। সঙ্গে আর একটা শপথও। কখনও নিজেকে বড় বোলারও ভাববেন না। ‘‘সারা জীবন শিখতে চাই। কখনও বড় হতে চাই না,’’ বলছেন নয়া তারকা। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×