ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়ার মর্যাদার ক্রীড়া উৎসব শুরু

আজ পর্দা উঠছে এসএ গেমসের

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আজ পর্দা উঠছে এসএ গেমসের

রুমেল খান ॥ শুক্রবার থেকে ভারতের অসম ও মেঘালয় রাজ্যের গৌহাটি এবং শিলংয়ে পর্দা উঠবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক গেমস’ খ্যাত সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের দ্বাদশ আসর। গৌহাটিতে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও বর্ণাঢ্য এই ক্রীড়া আসরের উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গেমসের সামপ্তি ঘটবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে বাংলাদেশ ১৮ স্বর্ণ, ২৪ রৌপ্য ও ৫৫ তাম্রপদক পেয়েছিল। কিন্তু ছয় বছর পরের গেমস দেশের বাইরে হওয়ায় কেউই জোর গলায় স্বর্ণের প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না। এই আসরটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালে। কিন্তু সে বছর লন্ডন অলিম্পিকের কারণে গেমসটি অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর ২০১৪ সালে ভারত অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনকে নিষিদ্ধ করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। ফলে আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এসএ গেমসের ভাগ্য। ২০১৫ সালে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আবারও গেমস আয়োজনের আশার আলো জ্বলে ওঠে। অবশেষে ২০১৬ সালে এসে সে আলো এখন প্রজ্বলিত হওয়ার অপেক্ষায়। গেমসে অংশ নিতে গত দুই দিনে ভারতে গেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের একাংশ। প্রথম দিন (বুধবার) যায় কুস্তি, উশু, ভলিবল, মহিলা ফুটবল, আরচারি, সাইক্লিং, খো খো, সাঁতার ও স্কোয়াশ দল। বৃহস্পতিবার যায় ব্যাডমিন্টন, টেনিস, টিটি, এ্যাথলেটিক্স, হকি ও পুরুষ ফুটবল দল। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি যাবে বাস্কেটবল, বক্সিং, হ্যান্ডবল, জুডো, কারাতে, শূটিং ও তায়কোয়ান্দো দল। গতবার বাংলাদেশের ১৮ স্বর্ণপদকের মধ্যে কারাতে ডিসিপ্লিনে চার, গলফে দুটি ও ক্রিকেটে একটিসহ মোট ৭ স্বর্ণপদক এসেছিল। এবারের আসরে ওই ইভেন্টগুলো না থাকায় পদক সম্ভাবনার দিক থেকে। এমনিতেই অনেক পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এসএ গেমসকে সামনে রেখে গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উদ্যোগে বিভিন্ন ফেডারেশন তাদের প্রস্তুতিপর্ব শুরু করে। এবারের আসরে আরচারি, এ্যাথলেটিক্স, বক্সিং, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, কাবাডি শূটিং, সুইমিং, ভলিবল, তায়কোয়ানদো, ভারোত্তোলন, কুস্তি, সাইক্লিং, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ফুটবল, জুডো, টেনিস, হকি, খো খো, উশু ও স্কোয়াশসহ ২২ ডিসিপ্লিনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও প্রাথমিকভাবে ১৯ ডিসিপ্লিন এসএ গেমসে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে আরও ৩ নতুন ডিসিপ্লিন (খো-খো, স্কোয়াশ এবং টেনিস) অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মোট ২২ ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ শুধু ট্রায়াথলন ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণ করবে না। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় অলিম্পিক কমিটি প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ২০১৬ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএ গেমস অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে এই গেমস ৫-১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিওএ’র তত্ত্বাবধানে গত ১ আগস্ট ২০১৫ থেকে ৬১৫ খেলোয়াড় ও কোচ নিয়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বিওএ’র ট্রেনিং এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি প্রতিদিন নিয়মিত বিভিন্ন ভেন্যুসমূহে প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ২২৩ পুরুষ এবং ১৪৭ মহিলা খেলোয়াড়, ৬০ কোচ, ৩৯ ম্যানেজার এবং অন্যান্য কর্মকর্তাসহ মোট ৪৬৯ সদস্যের দল অংশগ্রহণ করবে। এই কন্টিনজেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ১১ বিদেশী প্রশিক্ষকও রয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, হেড কোয়ার্টার্স অফিসিয়াল এবং টিম ডাক্তারসহ সর্বমোট ৫২০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ দল গঠন করা হয়। এই গেমসে অংশগ্রহণ উপলক্ষে বাংলাদেশ দলের সেফ দ্য মিশন আশিকুর রহমান মিকু, ডেপুটি সেফ দ্য মিশন হিসেবে আহমেদুর রহমান বাবলু এবং কামরুন নাহার ডানাকে মনোনীত করা হয়। তাছাড়া দলের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে গ্রুপ ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করবেন। গৌহাটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দলের পতাকা বহন করবেন ভারোত্তোলক ১১তম এসএ গেমসে স্বর্ণপদক বিজয়ী হামিদুল ইসলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি শিলংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পতাকা বহন করবেন বক্সার আব্দুর রহিম, যিনি বিগত ১১তম এসএ গেমসে স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন। নেপালের কাঠমান্ডুতে ১৯৮৪ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম এসএ গেমস। কখনও এক, কখনও দুই, চার ও পাঁচ বছরের বিরতি দিয়ে অনিয়মিতভাবে হয়ে এসেছে এই ক্রীড়া আসরটি। ভারত বরাবরই এ আসরে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে। গত ১১ আসরে তারা এ পর্যন্ত জিতেছে ৯০০ স্বর্ণ, ৫৪২ রৌপ্য ও ২৮৬ তাম্রপদক। ৩১১ স্বর্ণ, ৩৭৫ রৌপ্য ও ৩৩৬ তাম্রপদক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে পাকিস্তান। ১৮৫ স্বর্ণ, ২৮৮ রৌপ্য ও ৪৫৫ তাম্রপদক নিয়ে শ্রীলঙ্কা আছে তৃতীয় স্থানে। ৭৬ স্বর্ণ, ৯৯ রৌপ্য ও ২৩৮ তাম্রপদক নিয়ে নেপাল চতুর্থ এবং ৬৩ স্বর্ণ, ১৬২ রৌপ্য ও ৩৪৭ তাম্রপদক নিয়ে বাংলাদেশ আছে পঞ্চম অবস্থানে। এরপর আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপ আছে যথাক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানে। সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ ও রৌপ্য ভারতের। আর তাম্রপদক শ্রীলঙ্কার। মোট পদকপ্রাপ্তিতেও শীর্ষস্থানে ভারত। তাদের অর্জন ১৭২৮ পদক। ১০২২ পদক নিয়ে পাকিস্তান দ্বিতীয়, ৯২৮ পদক নিয়ে শ্রীলঙ্কা তৃতীয় ও ৫৭২ পদক নিয়ে বাংলাদেশ আছে চতুর্থ স্থানে। পদক তালিকার সর্বনিম্ন স্থানে থাকা মালদ্বীপ এখনও কোন স্বর্ণপদক করায়ত্ত করতে পারেনি। তাদের অর্জন ১ রৌপ্য ও ৮ তাম্রপদক। এবার কি তারা প্রথম স্বর্ণপদক পাবে কি না, এ নিয়ে অনেকেরই উৎসুক দৃষ্টি থাকবে। এখন দেখার বিষয়, দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও আলোর মুখ দেখা এসএ গেমসে কেমন ফল করে বাংলাদেশ।
×