ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুড়ি-মুড়কির মতো ক্লিনিক খোলা বন্ধে নীতিমালা আসছে

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুড়ি-মুড়কির মতো ক্লিনিক খোলা বন্ধে নীতিমালা আসছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদ সদস্যদের ‘ফাঁকিবাজ’ ডাক্তারদের শাসন করতে বললেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাাসিম। তিনি বলেছেন, অনেক ডাক্তার ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে, আমাদের কাছে খবর আছে। আপনারা (এমপি) ডাক্তারদের শাসন করুন। এদিকে দেশের যত্রতত্র ক্লিনিক খোলা হচ্ছে উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মুড়ি-মুড়কির মতো ক্লিনিক খোলা হচ্ছে। সেগুলো হাসপাতাল নয়। এভাবে রেস্টুরেন্ট খোলা যেতে পারে, কিন্তু ক্লিনিক নয়। এ ধরনের অপপ্রবণতা রোধে কঠোর নীতিমালা আসছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ডাক্তারদের প্রসঙ্গে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা (সংসদ সদস্য) স্থানীয় সরকারপ্রধান। আপনারা নিয়মিত সরকারী হাসপাতালগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। যেহেতু আপনারা হাসপাতালগুলোতে গবর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান, তাই আপনাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত। অনেক ডাক্তার হাসপাতালে থাকেন না, তারা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছেন। এতে রোগীরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। মনে রাখতে হবে প্রতিটি রোগী আপনাদের ভোটার। যত্রতত্র ক্লিনিক খোলার বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যত্রতত্র কেউ রেস্টুরেন্ট করতে পারেন, ক্লিনিক খুলতে পারেন না। এটা দেখা হচ্ছে। একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। ওই নীতিমালার মধ্যে থাকলেই কেবলমাত্র ক্লিনিক খোলা যাবে। সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো পরিষ্কার রাখতে আউট সোর্সিয়ের মাধ্যমে লোক নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হবে। এ জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করা হবে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প নেয়া হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে একজন রোগীর সঙ্গে ৫ জন করে স্বজন আসেন। তারা হাসপাতালের বেডে বসেন। এ জন্যই অপরিষ্কার হয়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অসচেতনতার কারণেই মা-বোনেরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সারসহ নানাবিধ ক্যান্সারে মা-বোনেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। মা-বোনদের লজ্জা ভেঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে তাহলেই ক্যান্সার মুক্ত করা সম্ভব। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বতর্মান সরকার বিনামূল্যে ক্যান্সার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ঘোষণা দেয়। তখন জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে ১৯৯ জন দরিদ্র মহিলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪১ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী ক্যান্সার চিকিৎসায় সরকারকে সহায়তা করার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মন্ত্রী আরও বলেন, এখন থেকে ডাক্তার ও মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীকে ড্রাগমুক্ত হওয়ার অঙ্গীকার দিয়ে আসতে হবে। মাদকমুক্ত হওয়ার সনদ না পেলে তাদের মেডিক্যালে ভর্তি হতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি ডাক্তারদের সার্টিফিকেট দিতে হবে তারা ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন বা ধূমপান করেন না। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের লিখিত প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদকে জানান, গত বছর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও ১০টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করাসহ বিপুল পরিমাণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়াও গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) যথাযথভাবে অনুসরণ না করার জন্য এবং ওষুধ আইন লঙ্ঘনের কারণে গত বছর ৫টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও মানবহির্ভূত ওষুধ উৎপাদনের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৬৩টি পদের নিবন্ধন সাময়িক বাতিল করা হয়েছে এবং ৯টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
×