ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এখন থেকে দেশের মাটিতেই চিকিত্সা নেব : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এখন থেকে দেশের মাটিতেই চিকিত্সা নেব : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকে দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নিবেন। আজ শুক্রবার সকালে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে নিয়মিত শারীরিক চেকআপে গিয়ে তিনি একথা বলেন। গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের তেঁতুইবাড়িতে অবস্থিত এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি কখনও অসুস্থ হয়ে পড়ি, তাহলে আপনারা আমাকে বিদেশে নিবেন না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নিব। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিব।’ খবর বাসসের। সকাল ৮টায় গণভবন থেকে বের হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী কাউন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য চেকআপের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। নিজ হাতে রেজিস্ট্রেশন ও চেকআপের ফি প্রদান করেন। এরপর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য চেকআপ শুরু হয়। স্বাস্থ্য চেকআপ শেষে হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মকর্তা ও উপস্থিত সুধীজনদের সাথে তিনি মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও আগেই আমার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। আমরা চিন্তা করেছি, ভবিষ্যতে এইখানে আমরা একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করবো। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা আরো বৃিদ্ধ করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চিন্তা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক। এখানে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের চিকিৎসা কষ্ট লাঘব করা এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। এছাড়া এই এলাকায় উন্নতমানের হাসপাতালের সংখ্যা কম। সেই চিন্তা থেকেই এখানে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেই। তাৎক্ষণিক মতবিনিময়কালে উপস্থিত হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখানকার বেশিরভাগ রোগী আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই তাদেরকে আর্থিক দিক থেকে সুবিধা দিতে হবে।’ এক্ষেত্রে তিনি ডাক্তারদের কনসালটেন্সি ফি কমানোরও পরামর্শ দেন। হাসপাতালের ফান্ডে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আরও ১০ কোটি টাকার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু হাসপাতালটি আমাদের মায়ের নামে, তাই এখানে আমাদের পরিবারের সবাই অনুদান দিবে। আপনাদের এবং হাসপাতালের যে কোন সমস্যা আমাদের নিয়মিত জানাবেন।’ ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে উপস্থিত সবাই দেশের স্বনামধন্য ডাক্তার। এছাড়া দেশের অনেক ভালো ডাক্তার ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। আমরা তাদেরকে এখানে যুক্ত করতে পারি। যদি কোন ডাক্তার এখানে এসে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী হন, তারা প্রতিদিন এখানে আসতে পারেন। এভাবেই আমরা এ হাসপাতালকে আরও উন্নত করে তুলতে পারবো। আমি বলতে চাই, জনগণের সেবা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় চিন্তা করলাম, আমাদের একার পক্ষে এটি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান কেপিজে-কে যুক্ত করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, শেখ রেহানা ও আমি এটি উদ্বোধন করি। এখান থেকে আমরা কোন লাভ নিতে চাইনা। ফিক্সড্ ডিপোজিটের জন্য আরও যে ১০কোটি টাকার ফান্ড দেওয়া হবে সেখান থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে গরীব ও মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এখানে ৩০ শতাংশ গরীব রোগী ফ্রি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে নিয়মিত সভা করে চিকিৎসা সেবা আরও উন্নত করার পরামর্শ দেন। তিনি হাসপাতালে ফার্মেসির জন্য নির্ধারিত জায়গায় সুপরিসর ও অত্যাধুনিক ফার্মেসি চালু করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ট্রাস্টের যে অফিস রয়েছে, সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এই হাসপাতালে রোগী আনার বিষয়টি সমন্বয় করা যেতে পারে।’ ফুলটাইম ডাক্তারের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মতবিনিময়কালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, ডাঃ মোঃ হাবিব এ মিল্লাত এমপি, ডাঃ এনামুর রহমান এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, হাসপাতালটির সিইও জয়তুন সোলায়মান ও পরিচালক আরিফ মাহমুদ, হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য চেক-আপ করেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক ও অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। এছাড়া স্বাস্থ্য চেকআপে আরও অংশ নেন, ডাঃ ওয়াজিহা আক্তার জাহান, ডাঃ বনজবা ও ডাঃ শাহানা ফেরদৌস।
×