ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কয়লাসমৃদ্ধ দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ

বিদেশে কয়লার খনি ইজারা নিতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিদেশে কয়লার খনি ইজারা নিতে চায় সরকার

রশিদ মামুন ॥ দেশের বাইরে কয়লা খনি ইজারা নিতে চায় সরকার। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া অথবা দক্ষিণ আফ্রিকায় খনি ইজারা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য কয়লা সমৃদ্ধ দূতাবাসকে গত সপ্তাহে অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুত-জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে দেশে কয়লার উৎস সীমিত হওয়ায় সরকার দেশের বাইরে খনি ইজারা নিতে ইচ্ছুক। গত সপ্তাহে জ্বালানি বিভাগ ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার প্রেক্ষিতে কয়লাখনি ইজারা নিতে চায় সরকার। দেশগুলোতে কয়লাখনি ইজারা নেয়ার বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায় কয়লাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। নতুন গ্যাস ক্ষেত্র না পাওয়া গেলে দেশের এই প্রধান জ্বালানির মজুদ শেষ হয়ে যাবে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ এর পর থেকেই দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। আর ঠিক আট বছর পর ২০২৫ এ গ্যাসের উৎপাদন একেবারে কমে যাবে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের বাজারেও এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যর রাজনৈতিক অস্থিরতায় তরল জ্বালানির মূল্য সম্পর্কে আগাম ধারণা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গত দুই বছর আগেও প্রতি ব্যারেল ১২১ ডলারে বিক্রি হয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এখন যা ২৮ ডলারে নেমে এসেছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য নানা ইস্যুতে অস্থির সময় পার করছে। সঙ্গত কারণে জ্বালানি তেলের বর্তমান মূল্যই ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে তা কেউ নিশ্চিত নয়। যদিও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন আগামী কয়েক বছরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। যদিও কত দিন এই নিম্নমুখী প্রবণতা স্থির থাকবে সে সম্পর্কে কেউ ধারণা দিতে পারছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানির সংস্থান করা জরুরী। কোন বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য অন্তত ৩০ বছর নির্ধারিত দামে জ্বালানি প্রাপ্তির জন্য কয়লাখনি ইজারা নেয়ার কোন বিকল্প নেই। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে সরকার মিশ্র জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এতে করে গ্যাস, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), তরল জ্বালানির মধ্যে ডিজেল এবং ফার্নেস তেল ছাড়াও কয়লাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশে কয়লা উত্তোলনের বর্তমান পরিস্থিতি বিদ্যুতকেন্দ্র চালানোর মতো অনুকূলে নেই। দেশের একমাত্র খনি বড়পুকুরিয়ার কয়লা দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনও সম্ভব নয়। এছাড়া দেশের ইট ভাটা এবং রিরোলিং স্টিল মিলে ব্যাপক কয়লার চাহিদা রয়েছে। মূলত এই দুই খাতে ব্যবহারের জন্য কয়লা ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। তবে বড় কোন কয়লাচালিত বিদ্যুতকেন্দ্র চালাতে হলে দেশের বাইরে খনি ইজারা নেয়ার কোন বিকল্প নেই। সে জন্যই সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। জ্বালানি বিভাগের উপসচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার স্বাক্ষরিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে সরকার ২০২১ সাল মেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনায় ৫০ শতাংশ কয়লা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ৯ এপ্রিল বিদেশে খনি ইজারা নিয়ে কয়লা উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে জ্বালানি বিভাগ এইসব দেশের কয়লা পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে কোল ক্লাব গঠন করা হয়। কয়লা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তারা মিলে এ ধরনের ক্লাব গঠন করা হয়। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় সেখানে (বি টু বি) বিজনেস টু বিজনেস এবং বি টু জি (বিজনেস টু গভরমেন্ট) অর্থাৎ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের এবং সরকারের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র প্রসারিত করাই এর মূল লক্ষ্য। যদিও ২০১৪ এর মে মাসে সরকার উদ্যোক্তাদের নিয়ে এ ধরনের ক্লাব গঠন করলেও আশানুরূপ কিছু করতে পারেনি। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে যারা কয়লাচালিত বিদ্যুত উৎপাদন করবেন তাদের নিয়ে এই ক্লাব গঠন করা হবে। এখানে পরস্পর পরস্পরকে তথ্য এবং জ্ঞান দিয়ে সহায়তা করবে। সরকার প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করলে উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করা আরো সহজতর হবে।
×