ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি

লেনদেনে উদ্বৃত্ত ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

লেনদেনে উদ্বৃত্ত ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় ধরনের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের অর্ধেক সময়েই এই উদ্বৃত্ত ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাকি ছয় মাসে ‘এই’ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে এই অঙ্ক ২৮ শতাংশ বেশি। চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ১৬৫ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর। তবে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই উদ্বৃত্তে ফেরে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বড় এই উদ্বৃত্তে সন্তোষ প্রকাশ করে গবর্নর আতিউর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কমায় আমদানি খাতে খরচ কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে রফতানি আয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহও ভাল। এ কারণেই ‘স্বস্তিদায়ক’ এই উদ্বৃত্ত। অর্থবছরের বাকি ছয় মাসেও ‘এমন’ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর আতিউর। নিয়মিত আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোন ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ২৯ শতাংশ বাড়ায় সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলেন, ‘ছয় মাসে যেহেতু ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত রয়েছে। অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’ বিআইডিএসের এই গবেষকের ধারণা, কৃষি উৎপাদনে গত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে রাখা সম্ভব হবে। আর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সহসা উর্ধমুখী হওয়ার কোন আভাস না থাকায় পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকার আশাই বেশি। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রবাসী আয়ের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের প্রায় সমান রেমিটেন্স এসেছে এবার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসীরা ৭৪৮ কোটি ২৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৭৪৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। তবে সাত মাসের অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ের যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ০৫ শতাংশ রেমিটেন্স কম পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ॥ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রফতানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে এক হাজার ৫৭৩ কোটি ডলার। সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ১৭০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
×