ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাইওয়ানে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা ১৩২

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তাইওয়ানে ধ্বংসস্তূপের  নিচে আটকা ১৩২

তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া শতাধিক লোককে উদ্ধার করতে উদ্ধার কর্মীরা রবিবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। শনিবার ৬.৪ মাত্রার শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের আঘাতে তাইনান নগরীর ১৭তলা বিশিষ্ট এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটি ধসে পড়ে। জরুরী উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ার পর সেখান থেকে আরও মৃতদেহ বেরিয়ে আসছে। ওই কমপ্লেক্সটিতে প্রায় ১০০টি ফ্ল্যাট ছিল। তাইনানের মেয়র উইলিয়াম লাই রবিবার ভোরে বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া ১৩২ জন উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছেন। ১০৩ জন অনেক গভীরে চাপা পড়েছেন। তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছানোর কোন উপায় নেই। তাদের উদ্ধার করাটা অনেক কঠিন।’ খবর এএফপির। লাই বলেন, উদ্ধার অভিযানটি সুষ্ঠুভাবেই শুরু হয়েছে। কিন্তু উদ্ধারকর্মীদের ধসে পড়া ভবনগুলোর দুটি এ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে আটকে পড়া বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ পার্শ্ববর্তী দুটি ধসে পড়া টাওয়ারের মাঝখানে এগুলো চাপা পড়ে গেছে। লাই আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পে গোটা কমপ্লেক্সের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে খুঁড়ার আগে আমাদের ধসে পড়া টাওয়ারগুলো সরাতে হয়েছে।’ লাইয়ের ব্রিফিংয়ের পর তাইনানের দমকল বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আনুমানিক ১২৭ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আদমশুমারির রেকর্ড থেকে জানা গেছে যে, প্রায় ২৬০ লোক ওই ব্লকে বাস করতেন। কিন্তু লাই বলেন, ভূমিকম্পের সময় ৩ শতাধিক লোক ওই এ্যাপার্টমেন্টগুলোতে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক ছাত্র এই ভবনের বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন। তারা নিবন্ধিত ছিলেন না। আগামী সপ্তাহে তাইওয়ানে চান্দ্র নববর্ষ উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে পরিবারের যেসব সদস্য বাইরে থাকেন তারা পরিবাগুলোর কাছে ফিরে এসেছেন। ইতোমধ্যে ২৫০ জনের বেশি লোককে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরী উদ্ধার কর্মীরা ক্রেন, মই ও স্লাইপার কুকুরের (বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর) সাহায্যে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকাপড়াদের শনাক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটি ধসে পড়ায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ১৬ জনের মধ্যে ১০ দিন বয়সী একটি মেয়ে ছাড়াও আরও দুটি শিশু রয়েছে। ঘটনাস্থলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে। সেখান রবিবার সকালে অশ্রুসজল চোখে আত্মীয়রা মৃতদের খবরের আশায় অপেক্ষা করছে। এদিকে এই ঘটনায় জীবিতরা তাদের ভীতিকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এক লোক জানিয়েছেন তিনি কিভাবে উদ্ধার পেয়েছেন। সু ই-মিং (৪৮) নামের এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আলমারিতে টোকা দিয়ে নিকটতম উদ্ধারকর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। তিনি জানালা ভেঙ্গে আমাকে উদ্ধার করেন।’ তিনি তার পরিবারের সঙ্গে ওয়েই-কুয়ান কমপ্লেক্সের ৭তলায় থাকতেন। তিনি আরও বলেন, ‘ভূমিকম্প আঘাত হানার পর আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। ভবনটি প্রচ-ভাবে কাঁপছিল। বাড়িটি দেবে যায়। আমি কিছু করার সময়ই পাইনি।’ শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে গ্রিনিচ সময় ২০টা কাউশিয়াংয় থেকে ৩৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
×