ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে শুল্ক-অশুল্কজনিত যেসব সমস্যা রয়েছে তা দূর করার উদ্যোগ নেয়া হবে। কাঁচাপাট রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছে ভারত। পাশাপাশি দু’দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বর্ডার হাট কার্যকর করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ভারতের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি আশা করছেন, শীঘ্রই এদেশে ভারতের বিনিয়োগ আসবে। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৫ হাজার ৮১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। একই সময়ে ভারতে রফতানি করা হয়েছে মাত্র ৫২৭ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রফতানি পণ্যের অনেক কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি করে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নত বিশে^ রফতানি করে যাচ্ছে। ভারত বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করেছে। এ কারণে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। গত ২০১৩-২০১৪ সালের তুলনায় গতবছর বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে। চলমান বাণিজ্য বাধাসমূহ দূর করা গেলে ভারতে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি আরও বাড়বে। এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রফতানির ওপর সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের নতুন হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রিংলা বলেন, আমরা সকল বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব, যার মধ্যে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর কিছু ইস্যু রয়েছে-যেমন, বাংলাদেশ থেকে পাট রফতানি। বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত এই পাটের ওপর নির্ভরশীল ভারতীয় অনেক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে পাট নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব মনোজ কুমার রায় বলেন, এই নিষেধাজ্ঞাটি দিয়েছে পাট মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে আমাদের আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে গত ৩ ডিসেম্বর সব ধরনের কাঁচা পাট রফতানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে ৬ ডিসেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছরের ৩ নবেম্বরের আগে ইস্যু করা ২৫১টি এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) বিপরীতে এক চল্লিশটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুই লাখ ৭৭ হাজার বেল কাঁচাপাট রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। দীর্ঘদিন পর হলেও দু’দেশের মধ্যে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বিদ্যুত ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকনমিক জোন তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, এখন ৩০টি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। প্রস্তাবিত কুষ্টিয়ার স্পেশাল ইকনমিক জোনে ভারতের বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগ করতে পারেন। এখানে বিনিয়োগ ভারতের ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে দূর করে বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি করা হবে। বর্ডার হাট বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। উভয় দেশের মানুষ আরও বর্ডার হাট চাচ্ছেন। উভয় দেশের সরকার বর্ডার হাটের সংখ্যা ও পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চলমান বাণিজ্য সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান অন্তরায় ॥ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিতে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-শুল্ক ও অশুল্কজনিত সমস্যা, কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। এছাড়া স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, কাস্টমস হাউসগুলোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট, ভিসা প্রাপ্তির জটিলতা না কাটা, ব্যবসায়ীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা প্রদান বন্ধ থাকা, সীমান্ত হাটগুলো পুরোমাত্রায় চালু না হওয়া, বিএসটিআই ও বিআরটিএ’র ল্যাবরেটরি টেস্টের স্বীকৃতি না দেয়া এবং ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপীর অব্যাহত দরপতনে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমেছে না। তবে এসব বাধাগুলো দূর করতে পারলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×