ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই, এক সপ্তাহে এসেছে ছয় শ’

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই, এক সপ্তাহে এসেছে ছয় শ’

দুই দশটি নয়। শতাধিক নতুন বই। প্রতিদিন। ভাবা যায়? সোমবার শুরু হয়েছিল মেলা। আজ আরেকটি সোমবার। মাঝখানে সাত দিন। এই সময়ের মধ্যে নতুন বই এসেছে ৬ শতাধিক। সব বইয়ের তথ্য পাওয়া যায় না। বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে নতুন বই জমা দেয়ার নিয়ম আছে। সেটি যারা অনুসরণ করেন তাঁদের বই গণনার আওতায় আসে। বাকি বইয়ের তথ্য সেভাবে পাওয়া যায় না। পাওয়া সম্ভব হলে প্রতিদিন আসা নতুন বইয়ের তালিকা আরও দীর্ঘ হতো। বিষয়টা আনন্দের বৈকি! বইয়ের মান নিয়ে আলাদা আলোচনা হতে পারে। তবে বিষয় বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তম দিনে এসে এই আনন্দ এই বিষয় বৈচিত্র্য মোটামুটি দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলা একাডেমির দেয়া তথ্য মতে, মেলার প্রথম সপ্তাহে নতুন বই এসেছে ৬৯২টি। সাকুল্যে নয়। একাডেমিতে জমা পরা নতুন বইয়ের সংখ্যা এটি। বরাবরই বলা হয়ে থাকে, এই দেশ কবিতার। এখানে কবিতা করার লোকের কখনও অভাব হয়নি। এ কারণেই হয়ত মেলার প্রথম সপ্তাহে বেশি এসেছে কবিতার বই। মোট ১৫৯টি। এরপরই উপন্যাস। এখন পর্যন্ত এসেছে ১২৭টি। গল্পের বই ১১৫টি। প্রবন্ধ সংখ্যা ৪৩। গবেষণা গ্রন্থ ১০টি। ছড়া গ্রন্থ বের হয়েছে ২৫টি। শিশুতোষ বই ৩১টি। জীবনী গ্রন্থ সংখ্যা ১১। মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই ১৩টি। এসবের বাইরে রচনাবলী ১, নাটক ১, বিজ্ঞান ১৩, ভ্রমণ ১১, ইতিহাস ১১, রাজনীতি ৪, স্বাস্থ্য ৫, কম্পিউটার ২, রম্য/ধাঁধা ৪, ধর্মীয় ৮, অনুবাদ ১, অভিধান ৬, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৬ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর এসেছে ৮৫টি বই। নতুন বই ॥ মেলার সপ্তম দিনেও এসেছে অনেক নতুন বই। তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়েছে ১১৮টি। এগুলোর মধ্য গল্প ১৪, উপন্যাস ২০, প্রবন্ধ ৮, কবিতা ৩৩, গবেষণা ৯, ছড়া ৩, শিশুসাহিত্য ৩, জীবনী ২, মুক্তিযুদ্ধ ৪, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, রম্য/ধাঁধা ৪, ধর্মীয় ২, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ২ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর এসেছে ১৯টি বই। এদিন অবসর থেকে এসেছে শামসুর রাহমানের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’, আল মাহমুদের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’, নির্মলেন্দু গুণের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’ ও হরিশংকর জলদাসের ‘কসবি’। কথা প্রকাশ থেকে এসেছে যতীন সরকারের ‘সাঁকো বাঁধার প্রত্যয়’ ও মুনতাসীর মামুনের ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দুই’। পাঞ্জেরী থেকে এসেছে হাসান আজিজুল হকের ‘দ্য ফায়ার বার্ড’ ও শাকুর মজিদের ‘মাহিউবার গেন্দাকুল কিংবা ফৌজদারের হাটের মেরিগোল্ড’। ময়ূর পঙ্খী থেকে এসেছে আখতার হোসেনের ‘ভোজের ভোজবাজি’। সময় প্রকাশন থেকে এসেছে আলম তালুকদানের ‘ষোলো কোটির ভোট’ ও সাইদ হাসান দারার ‘উপাখ্যান : মুজিব ইয়াহিয়া ভুট্টো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’, পারভেজ চৌধুরী অনুবাদে ‘কানাডার সমকালীন কবিতা’। অনন্যা থেকে এসেছে আনিসুল হকের ‘গুড্ডুবুড়ার হাসির কা- গুড্ডুবুড়ার দারুণ কীর্তি’, ফরিদুর রেজা সাগরের ‘টেলিভিশনে ছোট কাকু’। পার্ল পাবলিকেশনস থেকে এসেছে সুমন্ত আসলামের ‘বাউন্ডুলে ১৫’ ও তৌহিদুর রহমানের ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’। বিভাষ প্রকাশ করেছে ইজাজ আহ্মেদ মিলনের ‘কোনখানে রাখবো প্রণাম’। বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে এসেছে ‘পবিত্র স্মৃতির স্মারক’ বইটি। মোড়ক উন্মোচন ॥ বিকেলে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ সংবর্ধনা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ ছিলেন একজন অনন্য ইতিহাসবিদ, বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও প্রগতিশীল মূল্যবোধের এক নিষ্ঠ সাধক। তাঁর জীবদ্দশাতেই বাংলা একাডেমি এই সংবর্ধনা গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এই গ্রন্থের প্রস্তুতিকালে তিনি প্রয়াত হয়। আমরা তাঁর হাতে বইটি তুলে দিতে পারিনি। তবে যে ইতিহাসবোধ এবং অসাম্প্রদায়িক আধুনিক চেতনার উত্তরাধিকার তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাকে ধারণ করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব। গ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান ও সিরাজুল ইসলাম। মেলামঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে এদিন অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী : অনুবাদ কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম। আলোচনা করেন ড. নিয়াজ জামান, অধ্যাপক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. ফকরুল আলম এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর গত ছয় দশক যাবত অনুবাদ কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ইংরেজী, আরবী, ফারসীসহ বিভিন্ন ভাষার মৌলিক সাহিত্যকর্ম, ইতিহাস, পাঠ্যপুস্তকসহ জ্ঞানকাণ্ডের বিভিন্ন শাখার স্মরণীয় কীর্তিসমূহ বাংলায় ভাষান্তর এবং বাংলা থেকে বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিসম্ভার ইংরেজীতে অনুবাদের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির অবদান স্মরণযোগ্য। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন একাডেমির অভিধান বিভাগের সঙ্গে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বুদ্ধিজীবী ও অনুবাদকদের সংযোগ স্থাপন করে একটি সুনির্দিষ্ট অনুবাদ নির্দেশনা প্রণয়ন করে অনুবাদ কার্যক্রমকে গতিশীল এবং একই সঙ্গে মানসম্পন্ন করে তোলা। আলোচকরা বলেন, বাংলা একাডেমি বিভিন্ন বিষয়ে যে বিপুল অনুবাদ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে তা সত্যি প্রশংসাযোগ্য। তবে অনুবাদ বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব বইয়ের যথাযথ বিপণন বিষয়েও একাডেমির মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে অনুবাদের সঙ্কট আমাদের শিক্ষা ও সাহিত্যের সামগ্রিক সঙ্কটের সঙ্গেই যুক্ত। বাংলা একাডেমি দেশের সামগ্রিক অনুবাদ কার্যক্রমের কথা বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনুবাদের বিষয়টি কেবল ভাষাগত নয়, একই সঙ্গে দার্শনিকও বটে। তাই বাংলা একাডেমিকে তার অনুবাদ কার্যক্রমের সংখ্যাগত দিকের পাশাপাশি এর অন্তর্বস্তুর দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন লিলি ইসলাম, ফাহিমা হোসেন চৌধুরী, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, অণিমা রায়, শরীফ মোঃ সজীব। দলীয় পরিবেশনা নিয়ে আসে ‘বহ্নিশিখা’র শিল্পীরা।
×