ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার রাষ্ট্রদ্রোহ বনাম আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহ -শাহরিয়ার কবির

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খালেদার রাষ্ট্রদ্রোহ বনাম আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহ   -শাহরিয়ার কবির

২০১৫-এর নবেম্বর মাসে যখন গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, যখন তাদের শোকে জামায়াত-বিএনপির পিতৃভূমি পাকিস্তানে কারবালার মাতম শুরু হয়েছে, যখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বলা হলো ’৭১-এ পাকিস্তান এবং তাদের এই দুই সহযোগী কোন গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তখনই বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণহত্যায় নিহতদের সরকারী পরিসংখ্যান চ্যালেঞ্জ করলেন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকে পাকিস্তান বিরামহীনভাবে বলছে ’৭১-এ বাংলাদেশে কোন গণহত্যা বা গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। কিছু বাঙালী দুষ্কৃতকারীকে হত্যা করতে হয়েছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত থাকার জন্য, যাদের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি নয়। পৃথিবীর কোথাও গণহত্যাকারীরা কখনও স্বীকার করেনি যে, তারা গণহত্যা করেছে। এই গণহত্যা অস্বীকার কিংবা সরকারী পরিসংখ্যান চ্যালেঞ্জ করার অর্থ হচ্ছে গণহত্যাকারীদের পক্ষে দাঁড়ানো, গণহত্যাকে বৈধতা প্রদান করা এবং গণহত্যার বিচারকে নাকচ করা। ১৯৭১-এ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে চরমতম মূল্যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে যারা পাকিস্তানপ্রেমী ছিল, পাকিস্তানকে যারা পিতৃভূমি মনে করে তাদের সংখ্যা গত ৪৫ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি বেড়েছে, কারণ এদেশে অধিকাংশ সময় ক্ষমতায় ছিল পাকিস্তানের একান্ত অনুগতরা, যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানে রূপান্তরিত করার জন্য স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে। খালেদা জিয়ার তীব্র ভারতবিদ্বেষ এবং আরও তীব্র পাকিস্তানপ্রেম সম্পর্কে গত দুই দশকে মুনতাসীর মামুন, আমি ও অন্য কলাম লেখকরা যা লিখেছি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে গেলে কয়েক হাজার পৃষ্ঠার প্রয়োজন হবে। যেদিন এ লেখাটি তৈরি করছি সেদিনও জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে মামুনের ‘আটকেপড়া পাকিস্তানীদের প্রত্যর্পণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন’-এর শেষ কিস্তি। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও খালেদা গংদের চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মুনতাসীর মামুন তার অভূতপূর্ব বাগধারার তালিকায় আরও দুটি নতুন সংযোজন ঘটিয়েছেন। একটি হচ্ছে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ছিটমহলে বাংলাদেশের আধিপত্য বা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাংলাদেশে ‘আটকেপড়া পাকিস্তানী’দের তালিকায় একনিষ্ঠ পাকিস্তানপ্রেমী খালেদা গংদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাতে হবে। মামুনের বক্তব্য হচ্ছেÑ আমরা যদি বাংলাদেশের ভৌগোলিক মানচিত্রে ভারতীয় ছিটমহলে আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারি, মানসিক মানচিত্রে পাকিস্তানী ছিটমহলেও আমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানপ্রেমের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে গিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর (২০১৫) যখন তার দলীয় ‘মুক্তিযোদ্ধা’দের সমাবেশে ’৭১-এর শহীদদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তথা ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ চ্যালেঞ্জ করলেন, তার প্রতিবাদে ২৬ ডিসেম্বর আমরা সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলামÑ অবিলম্বে ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন’ প্রণয়ন করে বাংলাদেশের অস্তিত্ববিনাশী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র এই সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের শুরুতেই বলা হয়েছেÑ “এবারের বিজয়ের মাস উদ্যাপনের প্রাক্কালে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের দুই শীর্ষস্থানীয় গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিএনপির সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের আলী আহসান মুজাহিদের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড সম্পন্ন হওয়ায় সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকী যেমন নতুন মাত্রায় উদ্যাপিত হয়েছে, একই সঙ্গে ’৭১-এ পরাজিত গণহত্যাকারী পাকিস্তান এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাবিরোধী বক্তব্য আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে থেকেই গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের প্রভু পাকিস্তান ’৭১-এর গণহত্যা অস্বীকারসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিরোধী ও চেতনাবিনাশী বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে বলছে। আমরা সব সময় বলেছি, ’৭১-এর গণহত্যা কিংবা ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অস্বীকার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বৈধতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানী যুগে ফিরে যাওয়া। ’৭১-এ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননিÑ এ ধরনের মন্তব্য করে বিএনপিপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া আবারও প্রমাণ করেছেনÑ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতি তার যে সমর্থন ও দুর্বলতা ছিল এখনও তা অক্ষুণœ রয়েছে। তার এ ধরনের বক্তব্য শুধু আদালত ও সংবিধান অবমাননা নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্ববিনাশী চক্রান্তের অন্তর্গত।” সংবাদ সম্মেলনের পর প্রস্তাবিত আইনের খসড়া নিয়ে আমরা আইন কমিশন ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি এবং আমাদের দাবির গুরুত্ব তারা অনুধাবন করে এই আইন দ্রুত প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খালেদা গংদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাবিনাশী বক্তব্যে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। একজন প্রবীণ আইনজীবী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে দু’সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছেন। বিএনপি-জামায়াত এবং টেলিভিশনের ‘টক শো’-এ পাকিস্তানপ্রেমীরা এর নিন্দা করে বলেছেন, সরকার নাকি খালেদা জিয়া ও বিরোধী দলকে ধ্বংস করার জন্য এই মামলা করেছে। তারা মনে করেন, বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অস্বীকার করা কিংবা ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা অথবা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও আত্মদানকে উপহাস করা বিরোধী দলের তথাকথিত মত প্রকাশের অধিকারের অন্তর্গত। তারা মনে করেন, পাকিস্তানপ্রেমই হচ্ছে দেশপ্রেম, পাকিস্তানের বিরোধিতা দেশদ্রোহ। যেদিন এ কলাম লিখছি সেদিন কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছেÑ ১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ির সামনে থেকে পাকিস্তানী দূতাবাসের একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ১৯৯২ সালে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আমরা যখন গণআদালতের কর্মসূচী পালন করেছিলাম তখন ক্ষমতায় ছিল জামায়াত সমর্থিত খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার। তখন পাকিস্তানের নাগরিক, গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমণি জামায়াতপ্রধান গোলাম আযমের ইজ্জত বাঁচাবার জন্য খালেদা জিয়া গণআদালতের ২৪ জন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছিলেন, যাঁদের ভেতর ছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, মুক্তিযুদ্ধের দুই অধিনায়ক কর্নেল নূরউজ্জামান ও কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আহমদ শরীফ, এ্যাডভোকেট গাজীউল হক, ব্যারিস্টার শওকত আলী খান, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, সঙ্গীতশিল্পী কলিম শরাফী, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, মওলানা আবদুল আউয়াল, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, অভিনয়শিল্পী আলী যাকেরের মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিসহ আমার মতো অভাজনও। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যাঁরা স্থপতি, যাঁরা রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাঁরা তাদের সৃজনশীল কর্মের দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত নির্মাণ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার এই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ, ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা উচ্চতর আদালতে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আমাদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার সরকারের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা আইনজীবীরা প্রশ্ন করেছিলেনÑ ‘যাঁরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন তাঁরা কিভাবে রাষ্ট্রদ্রোহী হন?’ উচ্চতর আদালতে আইনজীবীরা বলেছেন, অভিযুক্তরা গণআদালতে সরকার বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি, তাঁরা বলেছেন ’৭১-এর গণহত্যায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রধান সহযোগী গোলাম আযমের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযম পাকিস্তান রাষ্ট্রের সমার্থক হতে পারেন, কোন অবস্থায় বাংলাদেশের সমার্থক হতে পারেন না। খালেদা জিয়া বোধগম্য কারণে মনে করতে পারেনÑ বাংলাদেশে যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধাচরণ করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। যারা পাকিস্তানীদের গণহত্যার বিচার চাইবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। কারণ পাকিস্তান বলেছে তারা ’৭১-এ কোন গণহত্যা করেনি। সেবার খালেদা জিয়া যে ক’বছর ক্ষমতায় ছিলেন প্রবল জনদাবি সত্ত্বেও আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহার করেননি। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯৯৪-এর ২৬ জুন। এর তিনদিন আগে পাকিস্তানী নাগরিক ও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের গলায় বাংলাদেশের নাগরিকত্বের বরণমালা পরিয়ে দিয়েছিল খালেদা জিয়ার সরকার। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার ও শাস্তির জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও দুই দশক। ২০০১ সালে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। খালেদা জিয়া জামায়াতের দুজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর গলায় মন্ত্রিত্বের মালা পরিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মহান আত্মত্যাগকে চরমতম অবজ্ঞা প্রদর্শনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গোটা জাতির বুকে বিশ্বাসঘাতকতার খঞ্জর বসিয়ে দিয়েছিলেন, যার মূল্য তাকে দিতে হয়েছে ২০০৮-এর নির্বাচনে চরম পরাজয়ের মাধ্যমে। সেবার ক্ষমতায় এসেই খালেদা-নিজামীরা সবার আগে আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করে যাবতীয় নির্যাতন করেছে। আমার ‘অপরাধ’ ছিল নির্বাচনের আগে ও পরে খালেদা জিয়ার সরকারের নৃশংস সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলাম। প্রথমবার দু’মাস জেল খেটে জামিন পাওয়ার বছর না পেরুতেই আমাকে দ্বিতীয়বার গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছিল। সেবার আমার সঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে এক দুঃসহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল খালেদা-নিজামীদের জোট সরকার। ২০০১ সালে আমাকে গ্রেফতারের পর দেশে ও দেশের বাইরে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আমাকে ‘কারাবন্দি বিবেক’ ঘোষণা করেছিল। বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বরেণ্য ব্যক্তি আমার গ্রেফতারের প্রতিবাদ করেছিলেন। নোবেল বিজয়ী লেখক গুন্টার গ্রাসও আমার মুক্তি দাবি করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। আদালতে প্রথমবার যখন আমাকে হাজির করে আইনজীবীরা জামিনের পাশাপাশি মিথ্যা মামলা খারিজের আবেদন করেছিলেনÑ আমি বলেছিলাম, ‘আমার আইনজীবীরা ও শুভানুধ্যায়ীরা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। আমি এ মামলা প্রত্যাহারের পক্ষে নই। কারণ আদালতে আমি প্রমাণ করবÑ রাষ্ট্রদ্রোহী আমি নই, যারা আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে তারাই রাষ্ট্রদ্রোহী।’ নিম্ন আদালতে আট-নয় বছর এই মামলার নামে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। ভাঙ্গা পায়ে আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দুই/তিন তলায় প্রায় প্রতিমাসে হাজির হতে হয়েছে। বছরের পর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের কোন চার্জশীট বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রদান করতে পারেনি। শেষে উচ্চতর আদালতে আমার বিরুদ্ধে খালেদা গংদের দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা খারিজ হয়ে যায়। ২০০১ সালে রোজার মাসে বিএনপি-জামায়াত জোটের এক ইফতার পার্টিতে মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমির গোলাম আযম। মোনাজাতে তিনি বলেছিলেন, আমাদের ’৭১-এ নয় ’৪৭-এর চেতনায় ফিরে যেতে হবে। পাশে উপবিষ্ট বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘আমীন’, অর্থাৎÑ তাই হোক। খালেদা জিয়া এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার যত চেষ্টাই করুন না কেন কখনও কামিয়াব হবেন না। তবে তার অর্থ এই নয় যে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা নিয়ে তিনি এবং তার দল বিরামহীন ফুটবল খেলবেন আর আমরা গ্যালারিতে বসে তারিফ করব! ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
×