ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা

নড়বড়ে বেইলি ব্রিজ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নড়বড়ে বেইলি ব্রিজ

সমুদ্র হক ॥ সড়ক অবকাঠামো ঠিক করতে আপতকালীন ব্যবহারের জন্য যে বেইলি ব্রিজ স্থাপিত হয়েছিল তা আজও বহাল আছে এবং প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। আশির দশকের মধ্যভাগের ভয়াবহ বন্যার পর মাঠ পর্যায়ের সড়ক ধসে ও ভেঙ্গে ল-ভ- হয়ে গেলে বিদেশী সহায়তায় এই বেইলি ব্রিজ মেলে। এই ব্রিজগুলোর আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে সড়ক যোগাযোগ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও বারবার পাটাতন ভেঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্রাক ঝুলে থাকছে। কখনও যাত্রীবাহী বাসও আটকে থাকে। কথা ছিল স্থাপনের বছর পাঁচেকের মধ্যে ব্রিজগুলো তুলে আরসিসি ব্রিজ নির্মিত হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আর হয়নি। দেশে তিনশ’রও বেশি বেইলি ব্রিজ ছিল। বর্তমানে প্রায় দেড়শ’ রয়েছে, যার সব নড়বড়ে। বাকি বেইলি ব্রিজগুলো আরসিসিতে নির্মিত হয়েছে। বগুড়ার ধুনট ও সারিয়াকান্দি সড়কে, বগুড়া নওগাঁ জয়পুরহাট নাটোর পাবনা রংপুর দিনাজপুর পঞ্চগড় রাজশাহী সিরাজগঞ্জ সড়কে সেই কোন বন্যায় রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে সড়ক এবং সেতুর ক্ষতি হয়ে বেইলি ব্রিজ নির্মিত হয়েছিল তারপর আর আরসিসি ব্রিজ নির্মিত হয়নি। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং প্রকৌশলীর সেতু নির্মাণের জন্য ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ে ধরনা দিয়েও কোন কিনারা করতে পারেননি। এরই মধ্যে বগুড়া- সারিয়াকান্দি- শেরপুর- ধুনট সড়কের বেইলি ব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে গেছে গত ছয় মাসে অন্তত ৭ দফায়। প্রতিবার ভাঙ্গার পর বলা হয় এবার টেকসই হবে। তারপরও ভাঙ্গে। দু’দিন আগে বগুড়া-শেরপুর-ধুনট সড়কের মাঠপাড়া গ্রামে একটি খালের ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজের ওপর পাথর বোঝাই ট্রাক উঠলে পাটাতন ভেঙ্গে পড়ে। ধুনটের মাঠপাড়ায় ৬২ মিটার ব্রিজটি নির্মিত হয় ১৯৯২ সালে। তারপর এ পর্যন্ত অন্তত ২০ বার পাটাতন ভঙ্গে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের বেইলি ব্রিজের সংখ্যা বেশি। সড়ক ও জনপথ (স ও জ) বিভাগ সূত্র জানায়, ব্রিজগুলোর স্টিলের সরঞ্জাম এখন আর পাওয়া যায় না। ব্রিজগুলো পুনঃস্থাপনে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে ওপর মহলে বহুবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। দশটির প্রস্তাব পাঠালে কাজ মেলে দুই তিনটির। নওগাঁর বদলগাছিতে ১৭০ মিটার এবং মহাদেবপুরে ১৪০ মিটার বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে সেখানে নির্মিত হচ্ছে আরসিসি ব্রিজ। বেইলি ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে অধিক পণ্য বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল নিষেধ করার পরও তা মানা হয় না। আবার এইসব পণ্য না নিয়ে গেলেও অবকাঠামো কাজ হয় না। যেমন মাঠপাড়া বেইলি ব্রিজের ওপর পাথর বোঝাই যে ট্রাক উঠে পাটাতন ভেঙ্গে পড়ে সেই ট্রাকটি পঞ্চগড় থেকে পাথর বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে যাচ্ছিল। যমুনা তীর সংরক্ষণে পাথর দ্রুত প্রয়োজন। অবকাঠামো কাজের জন্য রড সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক পারাপারও দরকার। বিকল্প পথে ভারি যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা না করায় বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রাক চলছে। এই কথা- ট্রাক মালিক শ্রমিকের। সওজ বলছে বেইলি ব্র্রিজ করে অপসারিত হবে এই তথ্য তাদের কাছে নেই। পরিকল্পনা কমিশনে আছে কি না, ওপর মহলের কোন জায়গায় আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের ফাইল রয়েছে তাও কেউ জানে না। সূত্র জানায়, বেইলি ব্রিজগুলো এখন সওজ’র মাথাব্যথা। হরহামেশাই কোথাও না কোথাও বেইলি ব্রিজ ভেঙ্গে জন ও যান চলাচলে বিঘœ ঘটে সাধারণের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। একবার পাটাতন ভেঙ্গে পড়লে মেরামত করতে সময় লাগে কয়েক দিন। বেইলি ব্রিজ যে উদ্দেশে স্থাপিত হয়েছিল তা এখন আর নেই। এগুলো অপসারিত করে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ না করলে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
×