ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের চাঁদাবাজি সন্ত্রাস রুখতে গোপন নজরদারি

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুলিশের চাঁদাবাজি সন্ত্রাস রুখতে গোপন নজরদারি

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর ৪৯ থানার মধ্যে অপরাধপ্রবণ থানা ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য গোপন নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। মাদক, চাঁদাবাজি, অবৈধ লেনদেন, সন্ত্রাস, তল্লাশির নামে হয়রানি-নির্যাতন ও নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যাতে পুলিশ জড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য এ ধরনের গোপন নজরদারি করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের তল্লাশির নামে যাতে হয়রানি ও নির্যাতন না করা হয় এবং মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হয় সেজন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি কয়েকজন পুলিশ সদস্যের অপেশাদার সুলভ আচরণের কারণে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের জন্য কাউন্সেলিং করা হচ্ছে, যাতে পুলিশ সদস্যরা জনবান্ধব হিসেবে ভাল ব্যবহার করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাঁচ থানার ওসিকে বদলি করার মধ্য দিয়ে ডিএমপির পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজা হচ্ছে। রাজধানীর ৪৯ থানার মধ্যে মিরপুর, শাহআলী, যাত্রাবাড়ী থানার নাম অপরাধপ্রবণ থানার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে এই তালিকায় সর্বশীর্ষে আছে মিরপুর থানার নাম। তারপরে আছে উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানা। মোহাম্মদপুর, কোতোয়ালি, লালবাগ, ধানম-ি, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, আদাবর, পল্লবী, দক্ষিণ খান, কদমতলী, শাহজাহানপুর থানার নাম অপরাধপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব থানা এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হওয়ার দিক দিয়ে বেশি। এ ধরনের তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্র জানান, বর্তমানে রাজধানীর শাহআলী থানার দিকেই দৃষ্টি গোয়েন্দা সংস্থার। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শাহআলী থানায় চায়ের চুলায় ফেলে চা দোকানি বাবুল মাতব্বরকে হত্যাকা-ের অভিযোগে শাহআলী থানার ওসিসহ পাঁচ পুুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করার পর এখন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চা দোকানি হত্যা মামলার তদন্তে এই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই পুলিশী তদন্তে তাদের দায়ী করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। রাজধানী শাহআলী থানায় এটাই পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধী কার্যক্রমের প্রথম ঘটনা নয়। ইতোপূর্বেও শাহআলী থানায় একই ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। শাহআলী থানার এক এসআইকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রত্যাহার করার নজির আছে। টাকা পয়সার জন্য মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, গ্রেফতার, চাঁদাবাজির বদনাম রয়েছে শাহআলী থানার নামে। শাহআলী থানার নামের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী থানার নাম। গত ৯ জানুয়ারি মাসে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং এই ঘটনার ৫ দিন পর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ডিএসসিসি পরিদর্শক নির্যাতনের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও কর্মকর্তাসহ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব ঘটনার তদন্তের রেশ না কাটতেই শাহআলী থানার নাম সামনে চলে আসলেও অতীতের খারাপ নজির রয়েছে আরও অনেক থানার। গোয়েন্দা সূত্র জানান, রাজধানীর মিরপুর থানা এলাকায় চলন্ত মাইক্রোবাসে এক তরুণী গার্মেন্টসকর্মী ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশী তদন্ত, হাইকোর্টে পুলিশ কর্মকর্তাদের তলব ইত্যাদি ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই মিরপুর থানা হেফাজতে সুজন নামে এক যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশের এসআই জাহিদ গ্রেফতার হয়। এ ঘটনাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন। মিরপুর, শাহআলী থানার নামের সঙ্গে যুক্ত আছে পল্লবী থানার নামও। পল্লবী থানায় সংগঠিত হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ। গোয়েন্দা সূত্র জানান, রাজধানীর ৪৯ থানার প্রায় সব এলাকাতেই অপরাধপ্রবণতা কম বেশি থাকলেও প্রায় ২০ থানা এলাকায় যেসব অপরাধ সংগঠিত হয় তা চোখে পড়ার মতো। এসব থানার পুলিশের মাদক, চাঁদাবাজি, অবৈধ লেনদেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উস্কানি বা সহায়তা ও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। অপরাধীরা যেমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। কোন থানার পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য কোন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাস্তি অনিবার্য জেনেও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ সদস্যরা। এ কারণেই থানা ও পুলিশের কার্যক্রমের ওপর গোপনে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা বক্তব্য দিয়েছেন, যাতে পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য গোপনে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
×