ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্কুলছাত্রী মারিয়া হত্যা ॥ বাড়ির দু’কর্মচারীর ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

স্কুলছাত্রী মারিয়া হত্যা ॥ বাড়ির দু’কর্মচারীর ফাঁসি

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি ॥ চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী মারিয়া হত্যার ঘটনায় বাড়ির দু’কর্মচারীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- এবং হত্যাকা-ের তথ্য গোপন করার দায়ে অপর এক নারীকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে অর্থদ-ে দ-িত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক একেএম এনামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। ফাঁসির দ-প্রাপ্তরা হলো ফরিদপুর জেলার মাইজা মিয়ার ডাঙ্গী গ্রামের আক্কাছ আলীর ছেলে মোঃ সুমন শেখ (২০) ও বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড সিরাজগঞ্জ জেলার ধুকুরিয়া বেড়া গ্রামের মৃত গোলাম মুর্তজার ছেলে আব্দুল আলীম (৪৩)। অপর দ-িত হলো আব্দুল আলীমের স্ত্রী শেফালী বেগম (৩২)। রায় ঘোষণাকালে মামলার বাদী ও দুই আসামি আলিম ও শেফালী আদালতে উপস্থিত ছিল। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি সুমন জামিনের পর থেকে পলাতক। মামলার বিবরণে জানা গেছে, মহানগরীর কোনাবাড়িস্থিত আজিজ ফুড কারখানার ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান স্থানীয় হরিনাচালা এসরারনগর এলাকার নিজ বাড়ির ছয় তলা ভবনের তৃতীয় তলায় সপরিবারে থাকতেন। পরিবারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মারিয়া আক্তার (১০) বাড়ির পার্শ্ববর্তী শাহীন ক্যাডেট একাডেমির চতুর্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করত। সে সময় বাড়ির নিচ তলায় কারখানার কর্মচারী ও বাড়ির কেয়ারটেকার সুমন এবং বাংলালিংক টাওয়ারের কর্মী ও বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড আলিম স্ত্রী শেফালী বেগমকে নিয়ে বসবাস করত। গত ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বিকেলে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে মারিয়া নিখোঁজ হয়। স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করে মারিয়াকে কোথাও না পেয়ে বাড়ির গ্যারেজে খুঁজতে যায়। এ সময় সুমন, আলীম ও শেফালী স্থানীয়দের বাধা দেয়। পরে রাতে এলাকাবাসী ওই তিনজনের কাছ থেকে জোর করে চাবি নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে গ্যারেজের ভেতর পানির রিজার্ভ টাঙ্ক থেকে নিখোঁজ মারিয়ার স্কুল ব্যাগ ও বইপত্র এবং সুমনের চৌকির নিচ থেকে গলায় টি-শার্ট পেঁচানো মারিয়ার লাশ উদ্ধার করে। এ সময় সুমন, আলীম ও শেফালীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মারিয়াকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। পরে আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে পরদিন মারিয়ার পিতা বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আসামি সুমন শেখ ও আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-সহ প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তথ্য গোপন করায় পেনাল কোডের ২০১ ধারায় শেফালী বেগমকে ৫ বছর সশ্রম কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হলো। রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। আদালতে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি হারিছ উদ্দিন ও বিবাদী পক্ষে ছিলেন স্টেট ডিফেন্স জিয়ারত হোসেন।
×