ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিযুক্ত উপ-সচিবের অস্বীকার

নারী নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে নানা অপকর্ম উদ্ঘাটন

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নারী নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে নানা অপকর্ম উদ্ঘাটন

গাফফার খান চৌধুরী ॥ রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত একটি সাধারণ ডায়েরির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়েরকৃত ওই অভিযোগের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চিকিৎসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের কারসাজির তথ্য। সংশ্লিষ্টদের তদন্তে চক্রের গডফাদার হিসেবে বেরিয়ে এসেছে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের উপ-সচিব ডাঃ সাইফুল ইসলাম ও দফতরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মাহমুদুল হাসানের নাম। চক্রটির বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। যদিও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তরা। রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়, অফিসে পৌঁছতে দেরি হওয়ার কারণে উপ-সচিব তাকে রুমে ডেকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে তিনি আচমকা অশালীন আচরণ করে বসেন। একই সঙ্গে তিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখেন। সেই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি আমাকে সব সময় আতঙ্কে রাখেন। যা নোংরা মানসিকতার প্রকাশ। অভিযোগকারিণী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, এর পরেও তিনি ক্ষান্ত হননি। বর্তমানে তিনি রীতিমতো যৌন নিপীড়ন করে যাচ্ছেন। তিনি নানাভাবে আমাকে অফিসের লোকজনের সামনে কথাবার্তা- আচার ব্যবহারে হেয় করে চলেছেন। আমি রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছি। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের তরফ থেকে তদন্ত হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে এসব ছাড়াও নানা অভিযোগ প্রকাশিত হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত সে সব তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এমন পরিস্থিতিতে আমি চাকরি নিয়ে এবং ব্যক্তিগতভাবে রীতিমতো আতঙ্কে আছি। এ ব্যাপারে শাহবাগ মডেল থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ওই নারীর অভিযোগটি খুবই গুরুতর। এ জন্য বিষয়টির তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এরপর আর অভিযোগকারিণী যোগাযোগ করেননি। যদি অভিযোগকারিণী যোগাযোগ করেন, সেক্ষেত্রে আবারও তদন্ত বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপ-সচিবের বিরুদ্ধে অনুষদে কর্মরত থাকা অবস্থায় মিরপুরের বেসরকারী ট্রমা ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজিতে বেআইনীভাবে পাঠদান এবং পরীক্ষায় ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল হয়ে চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে টাঙ্গাইলে যমুনা ম্যাটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আসনের অতিরিক্ত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে উপ-সচিব ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। চক্রটির বিরুদ্ধে অধস্তনদের ফাইল আটকানো, পদোন্নতির ফাইল না ছাড়াসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। উপ-সচিব ২০০৮ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেন। অথচ গত বছরের ১০ অক্টোবর এক প্রেসক্রিপশনের প্যাডে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ বলে লেখা রয়েছে। এ ছাড়া তার নামের সঙ্গে ডিগ্রী হিসেবে এফসিপিএস ফাইনাল পার্ট ও এমএস পার্ট-২ (শিশু) লেখা রয়েছে। এসব ডিগ্রী তিনি প্রেসক্রিপশন করার সময়কালে অর্জন করেননি। এক্ষেত্রে তিনি আইন অমান্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার কর্তৃক ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারে এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত নয় এমন কোন নাম, পদ, পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিবরণ ইত্যাদি বিএমএ্যান্ডডিসি থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোন চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক ব্যবহার করতে পারবেন না। কেননা এ সমস্ত ডিগ্রী/পদবি ব্যবহারে কারও অতিরিক্ত পেশাগত শিক্ষাযোগ্যতা আছে বলিয়া জনসাধারণ মনে করতে পারেন এবং প্রতারিত হতে পারেন। কোন কোন চিকিৎসক নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ডে বা প্রেসক্রিপশন প্যাডে বা ভিজিটিং কার্ডে এ সমস্ত যোগ্যতা লিখছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এমন অভিযোগ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ব্যক্তি নানা অভিযোগে উপ-সচিবকে অভিযুক্ত করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছেন। শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ করেছেন ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল টেকনোলজি, টাঙ্গাইলের চেয়ারম্যান বায়েজিদ হোসেনও। তিনি টাঙ্গাইলে যমুনা ম্যাটসে ১৫ শিক্ষার্থীকে বেআইনীভাবে রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। এমন অভিযোগের বিষয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এসব অভিযোগ তিন দফায় তদন্ত হয়েছে। তদন্তে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টগুলো গোপনীয় রয়েছে। তা দেখানো সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন। অভিযোগ সম্পর্কে উপ-সচিব ডাঃ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। অভিযোগগুলো তিন দফায় তদন্ত হয়েছে। তদন্তে আমরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। অভিযোগগুলোও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
×