কথাটি তুললে তিনি আবার কষ্ট পেয়ে বসেন কিনা- প্রশ্নকর্তা যখন এমন ভাবনাচিন্তা করছেন, তখন রিয়াজই অনুক্ত প্রসঙ্গকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে চোখ রাখতে হবে ফ্ল্যাশব্যাকে। জানা থাকতে হবে, নবেম্বর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আসতে কী নিদারুণ পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে!
ঘটনা গত ১৯ নবেম্বরের। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির শূটিংয়ে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে তখন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সংলাপ বলতে গিয়ে টের পেলেন, শরীর দমে আসছে। ঘাম ঝরছে অস্বাভাবিকভাবে। প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি তিনি। প্রচ- গরম, শরীরের ওপরেও ধকল গেছে বেশ, ক্লান্তি আসতেই পারে- ভেবেছিলেন এমনটা। তারপর যখন ঢলে পড়লেন ফ্লোরে, প্রায় অচেতন, সবাই ধরাধরি করে হাসপাতাল পর্যন্ত নেয়ার পর প্রথমে চিকিৎসক জানালেন, পরবর্তীতে জানাজানি হলো, হার্ট এ্যাটাক। চারটি ব্লক। একটিতে রিং। ঠাঁই সিসিইউতে।
এরপর অনেকদিন শূটিং বন্ধ রাখলেন ছবির পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন। হাসপাতালের বিছানায়, বাড়িতে শুয়ে একটা লম্বা সময় কাটানোর পর, খানিকটা সুস্থ হয়ে রিয়াজ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ শেষ করলেন ঠিকই। তবে নতুন কোন কাজ নিলেন না হাতে। কি নিয়ে ছিলেন তিনি এ ক’টা মাস?
উত্তর পাওয়া গেল জানুয়ারিতে। অভিনয় থেকে মন-মগজ খানিকটা সরিয়ে রেখে রিয়াজ ঝুঁকেছেন ব্যবসায়। খাবারের ব্যবসা, ‘ফুড টোয়েন্টিফোর সেভেন’ তার রেস্তোরাঁর নাম, ৯ জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে। নবেম্বর থেকে জানুয়ারি- এ কয়েকমাস রিয়াজ শুধু ব্যবসার পরিকল্পনাতেই কাটিয়েছেন।
ফ্লাশব্যাকে যা কিছু বলা দরকার ছিল, শেষ আপাতত। এবার ফেরা যাক প্রসঙ্গে। যে প্রশ্নটি রিয়াজকে করার ইচ্ছে ছিল, এবং যেটা না করলেও, তিনি আগ বাড়িয়ে উত্তর দিয়ে দিয়েছেন- ‘প্রায় মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে ফিরেই কি চিন্তা হলো পরিবারের জন্য তেমন কোন অবলম্বন তৈরি করা হয়নি? সেজন্যই কি হঠাৎ ব্যবসায় ঝোঁক?’ রিয়াজ প্রশ্নটি খুব স্বাভাবিকভাবেই নিলেন। শরীর এলিয়ে দিয়ে নড়েচড়ে বসলেন একটু, যেন নিরাপদ বোধ করছেন খুব! শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘সুস্থ হওয়ার পর কেবল একটা কথাই মনে হয়েছে- যদি মরে যেতাম, আমার স্ত্রী সন্তানের কী হতো! অভিনয় থেকে উপার্জিত অর্থ শেষ হয়ে গেলে কী করত তারা! তাদের জন্য তো তেমন কিছু রেখে যাইনি, যা দিয়ে আমার পরিবার আমি না থাকলেও টিকে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বে না। তখন থেকেই বিকল্প আয় নিয়ে ভেবেছি খুব।’ আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভাল, রেস্তোরাঁটির মালিকানা তিনি নিজে রাখেননি। দিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী মুশফিকা খান তিনাকে।
রিয়াজ আগাগোড়াই শক্ত মনের মানুষ। বিরূপ পরিস্থিতিতে সংগ্রামকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়ে টিকে থাকা মানুষ। ফলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন না ঠিকই, কিন্তু স্বর নরম হয়ে এলো পরের বাক্য বলতে গিয়ে, ‘আমরা যারা শিল্পী, তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে তাদের জন্য বর্তমানে শুধু নাটক বা সিনেমা করে টিকে থাকা কঠিন।’
এই ‘বাস্তবতাবোধ’ থেকেই অভিনেতা রিয়াজ এখন ব্যবসায়ী। এই যখন অবস্থা তখন স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েই যায়, ‘তাহলে আর করবেন না অভিনয়?’ রিয়াজ হতাশ করেন না, ‘করব। কিছু নাটকের কাজ করব সুযোগ পেলে। আর সিনেমা করলে, অনেক সময় নিয়ে, বুঝে শুনে।’ সিনেমা কিন্তু একটা আসছে, সামনের মাসেই। ১২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যা সিনহা মিমকে নিয়ে বড়পর্দায় দেখা দেবেন রিয়াজ, বহুদিন পর। যদিও এতে তিনি অত দীর্ঘ সময় জুড়ে দেখা দেবেন না, কিন্তু তাতে কী! রিয়াজ তো রিয়াজই! ওয়াজেদ আলি সুমন পরিচালিত ‘সুইটহার্ট’-এর গান বেরিয়ে গেছে। বহুদিন পর এমন রোমান্টিক গানে তাকে দেখতে পেরে উচ্ছ্বসিত দর্শক। এখন শুধু অপেক্ষা আগামীকালের, অপেক্ষা ‘সুইটহার্ট’ রিয়াজের।
শীর্ষ সংবাদ: