ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জাপুরে ধসে যাচ্ছে অবকাঠামো

নদীর মাটি চুরির হিড়িক

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নদীর মাটি চুরির হিড়িক

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, ১১ ফেব্রুয়ারি ॥ মির্জাপুরে ড্রেজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু ও মাটি চুরির হিড়িক চলছে। ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে অবাধে নদী থেকে মাটি কাটার ফলে একদিকে ভেঙ্গে যাচ্ছে ফসলি জমি, অপরদিকে ধ্বংস হচ্ছে নদীর অবকাঠামো। এই মাটি চুরির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদী ও নদীর তীর থেকে কোটি কোটি টাকার মাটি উত্তোলন করলেও সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। এছাড়া নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি উত্তোলন করায় প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত থলপাড়া ও চাঁনপুর ব্রিজ দুটি এবং কুর্ণী ফতেপুর সড়কের বৈলানপুর সড়করক্ষা বাঁধটি বর্ষায় হুমকির মুখে পড়বে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন। বুধবার মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া ও বৈলানপুর এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বংশাই নদীতে (ঝিনাই) ৬টি ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অবাধে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই এলাকার বিএনপি নেতা প্রিন্স, ইব্রাহীম, নাদু মিয়া, শহীদুর মৃধা ও জাহিদ প্রায় দেড় মাস যাবত অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন। নদী সংলগ্ন এলাকায় স্তূপকরা বালি ও মাটির মূল্যমান প্রায় ৩ কোটি টাকা হবে বলে জানা গেছে। বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ইব্রাহীম মিয়া জানান, তিনি গত কয়েক সপ্তাহে ২ লাখ ঘনফুট বালু ১০ টাকা ঘনফুট দরে বিক্রি করেছেন। এছাড়া আরও প্রায় ২ লাখ ঘনফুট বালু মজুদ রয়েছে বলে তিনি জানান। অবৈধভাবে নদী থেকে ভেকু ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা বালু লুটেরারা কামিয়ে নিলেও সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না বলে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আহমেদ জানিয়েছেন। এছাড়া গোড়াই ইউনিয়নের চাঁনপুর, খামারপাড়া, রশিদ দেওহাটা, ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ইচাইল, দুল্যা বেগম, পৌর এলাকার বাইমহাটী, পাহাড়পুর, জামুর্কী ইউনিয়নের গুনটিয়া, আজগানা ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গায় ভেকু মেশিন দিয়ে নদী থেকে প্রতিদিন একইভাবে লাখ লাখ টাকার মাটি চুরি হচ্ছে। ফতেপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আজম খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এলাকার বিএনপির নেতারা অবাধে ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করায় আমাদের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এবং বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙ্গনের ফলে বৈলানপুর সড়করক্ষা বাঁধ এবং থলপাড়া ব্রিজ হুমকির মুখে পড়বে। বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে ইউএনও ও ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আহমেদ জানান, জনবলের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। একাধিকবার অভিযান চালালেও বালু উত্তোলন এলাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সরকার এখান থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছে না বলেও তিনি জানান। সোনারগাঁয়ে ফসলি জমির সংবাদদাতা, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, সোনারগাঁয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। মাটিখেকোরা জোর করে দিন-রাত শক্তিশালী ভেকু বা এক্সকেভেটর দিয়ে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে ইটভাঁটিতে। উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বস্তল, সিংরাব, পাকুন্ডা এলাকায় শত শত কৃষকের ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খননের মহোৎসবে হুমকির মুখে পড়েছে সোনারগাঁ উত্তর অঞ্চলের ফসলি জমি। সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুর খনন ও অবৈধ ইটভাঁটির ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বিপর্যয় ঘটছে ফসলের। জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এ বছরও উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বস্তল, পাকুন্ডা, সিংরাব, পেরাব এলাকায় এক মাস ধরে সিন্ডিকেট করে সন্ত্রাসীরা কিছু নিরীহ কৃষকের মাটি নামমাত্র দামে কিনে ২৫ থেকে ২৭ ফুট গভীর করে কেটে নিচ্ছে। গভীর করার ফলে পাশের জমির ভেঙ্গে পড়ছে। এ কাজে কেউ প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশসহ নানাভাবে হুমকি প্রদান করে। ফসলি জমির মাটি কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামপুর ইউনিয়নের পাকুন্ডা গ্রামের সালাম শিকদার, হাবিবুর ভূঁইয়া, হামিম শিকদার শিবলু, বস্তল এলাকার সাইদুর চৌধুরীর ভাই সাগর চৌধুরী, জিসানসহ রয়েছে ২০ থেকে ৩০ জনের একটি সিন্ডিকেট। বস্তুল ও পাকুন্ডা গ্রামের কৃষক রাজ্জাক, সোনা মিয়া, আঃ খালেক, রহিম জানান, যদি তাদের কথামতো মাটি বিক্রি না করি তাহলে রাতের আঁধারে আমাদের ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাঁটিতে বিক্রি করে দেয়। এসব কাজে বাধা দিতে গেলে তাদের সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট আমাদের ওপর হামলা-মামলাসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ হানিফ জানান, ফসলি জমির মাটি কাটার ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। এসব কাজে বাধা দিতে গেলে জড়িতরা আমাকেও প্রাণনাশসহ যে কোন বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে তার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট রয়েছে। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এসএম, জাকারিয়া জানান, মাটি কাটার বিষয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। যে কোন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ঘাটাইলে সড়ক কেটে নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল থেকে জানান, ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের দত্তগ্রাম রাজা মিয়ার বাড়ি থেকে রাজু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ৫০০ ফুট উন্নয়নকৃত গ্রামীণ সড়ক কেটে একটি মহল চাষাবাদের জমিতে পরিণত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে কুচক্রী মহলটি ওই সড়কের ৩০০ ফুট কেটে ফেলেছে। জানা গেছে, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচীর (কাবিখা) আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ওই সড়কটি সংস্কার করা হয়। সংস্কারের সময় কেউ সড়কটির জায়গা নিজেদের দাবি করেনি। অথচ পরে সড়কের কিছু অংশ নিজেদের দাবি করে একই ইউনিয়নের বেংরোয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রী হাসমত আরা বেগম, শাহ আলম সিদ্দিকীর ছেলে আসাদুল আলম সিদ্দিকী শ্যামল ও নৈয়ম উদ্দিন সিদ্দিকীর ছেলে আব্দুল বারি সিদ্দিকী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক বেগম আঞ্জুমান আরা জনস্বার্থ বিবেচনা ও অভিযোগ পক্ষ সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন না করায় মামলাটি খারিজ করে দেন। বিষয়টির এখানেই সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু সম্প্রতি প্রভাবশালী নুরজাহান, চন্দন, আসাদুল আলম সিদ্দিকী শ্যামল, সজিব, সংগ্রাম, আসাদুজ্জামান খান একজোট হয়ে জনস্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে রাতের আঁধারে সড়কটির প্রায় ৩০০ ফুট কেটে জমিতে পরিণত করে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী সহস্রাধিক লোক ও এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় তমিজ উদ্দিন সিদ্দিকীর ছেলে আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছমা আরা বেগম বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঘাটাইল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। সরকারী সড়ক কেটে জমিতে পরিণত করার অধিকার কারও নেই, এটি ফৌজদারি অপরাধ।
×