ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিতেই আটকে গেল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সেমিতেই আটকে গেল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব দলের জন্য পয়মন্তই বলতে হয়। ২০০৪ সালে যখন বাংলাদেশে যুব বিশ্বকাপ হয়, তখনও ফাইনালে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারও ফাইনালে খেলছে। এবার স্বাগতিক বাংলাদেশকেই সেমিফাইনালে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়েছে। কত স্বপ্ন, কত আশা; অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ যুব দল। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ হচ্ছে। চ্যাম্পিয়নও হবে বাংলাদেশ! সব স্বপ্ন, আশা মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। সেমিফাইনালেই আটকে গেল বাংলাদেশ। ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশার আর কোন স্থানই থাকল না। গ্রুপ পর্বে এত ভাল খেলার পর যখন কোয়ার্টার ফাইনালেও জয় মিলল, আশা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও হারানোর। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থ ব্যাটিংয়ে ডুবল বাংলাদেশ। ৫০ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে ২২৬ রানের বেশি করতে পারল না। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ ৬০ রান করলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ অনেক শক্তিশালী। তা জানা ছিল সবার। সেই পেস আক্রমণ দিয়েই বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পেসার কিমো পল ৩, চেমার হোল্ডার ও শামার স্প্রিঙ্গার ২টি করে উইকেট নেয়। জবাব দিতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৮.৪ ওভারে ২৩০ রান করে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ারের (৬০) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর কঠিন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরে ম্যাচ জেতান ৮৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৬২ রান করা স্প্রিঙ্গার। সালেহ আহমেদ শাওন ৩ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি উইকেট নেন। রবিবার ভারত যুব দলের বিপক্ষে মিরপুরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব দল। আগেরদিন শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা যুব দলের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ যুব দল। কেন এমনটি হলো? আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, মনোবলে চাঙ্গা থাকা বাংলাদেশ দলটিকে এমন হতাশায় ডুবতে হলো কেন? সবার মনে এ প্রশ্নগুলোই উঁকিঝুঁকি দিয়েছে। উত্তর মিলেছে, একটিই। বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তটিই ছিল ভুল। সকালে কুয়াশায় ঢাকা ছিল আকাশ। এমন পরিস্থিতিতে যে দলই টস জিতত, আগে ফিল্ডিংই করত। বোলারদের কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব অলআউট করে দিয়ে অথবা কম রানে আটকে রেখে তা অতিক্রম করার ভাবনাই থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ দল নিল ব্যাটিং! তাও ব্যাট হাতে ব্যাটসম্যানরা ভাল কিছু করতে পারলে হতো। দুই ওপেনার পিনাক ঘোষ ও সাইফ হাসান আবারও ব্যর্থ হলেন। জয়রাজ শেখ ৩৫ রান করলেও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত (১১) ও জাকির হাসান (২৪) বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে যেতে পারলেন না। ১১৩ রানের মধ্যে যখন পিনাক, সাইফ, শান্ত, জয়রাজ ও জাকিরের মতো ব্যাটসম্যানদের হারাল বাংলাদেশ, খাদের কিনারায় পড়ে গেল। সেখান থেকে দলকে একাই টেনে তোলার চেষ্টা করলেন মিরাজ। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (৩৬) সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করলেন মিরাজকে। কিন্তু ১৯৮ রানে গিয়ে দুইজনই আউট হয়ে গেলেন। এরপর খুড়িয়ে খুড়িয়ে ২২৬ রানে যাওয়া গেল। শেষে গিয়ে মোসাব্বেক হোসেন ১৪ ও মেহেদী হাসান রানা অপরাজিত ১০ রান করতে পারলেন। কিন্তু যে রান বাংলাদেশ করেছে, তা জয়ের জন্য যে যথেষ্ট নয় ইনিংস শেষ হতেই বোঝা গেল। এরপরও মাঝে মাঝে জয়ের আশা জাগে। শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকা টেবিন ইমলাচ (১৪) ও গিডরন পোপকে (৩৮) ৫৬ রানের মধ্যে আউট করে দিয়ে আশা জাগান মিরাজ। সেই আশাও হতাশায় পরিণত হতে থাকে যখন অধিনায়ক হেটমায়ার ও কিচি কার্টি বড় জুটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তৃতীয় উইকেটে দুইজন মিলে ৬২ রানের জুটি গড়েন। এ জুটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় পাওয়ার আশা জাগিয়ে দেয়। স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলা। যে কোন মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারে। তা বুঝেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাই মাথায় রাখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। তাতে সাফল্যও মিলে যায়। ১১৮ রানে কার্টি (২২) আউট হলেও হেটমায়ার ঠিকই এগিয়ে যেতে থাকেন। তার সঙ্গে স্প্রিঙ্গার যোগ দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের সম্ভাবনা যেন আরও বেড়ে যায়। ১৪৭ রানে হেটমায়ার আউট হয়ে গেলে আবার বাংলাদেশের আশা জাগে। তখন মনে হয়েছিল, এবার বুঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়বেন। কিন্তু স্প্রিঙ্গার ও জিড গুলি মিলে আবারও দলকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। গুলি একদিকে উইকেট আঁকড়ে ধরে খেললেন। আরেকদিকে স্প্রিঙ্গার রান তুলতে থাকলেন। ১৭৭ রানে গিয়ে যখন গুলি আউট হলেন, তার আগে ৩৩ বলে মাত্র ৯ রান করেন। ততক্ষণে জয়ের অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৮ বলে ৫০ রানের প্রয়োজন থাকে। হাতে থাকে ৬ উইকেট। এমন সময়ও খানিক আশা দেখা হয়। যদি স্প্রিঙ্গারকে আউট করা যেত। কিন্তু সেটিই করা গেল না। শেষপর্যন্ত আরও ৩ উইকেট তুলে নেয়া গেলেও স্প্রিঙ্গার অপরাজিত ৬২ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন। ৯ বলে জিততে যখন ১ রান প্রয়োজন, বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে নাচতেও থাকলেন স্প্রিঙ্গার। তাতেই বোঝা গেছে, কী আনন্দই না পেয়েছেন এ অলরাউন্ডার। ড্রেসিংরুমের সামনে থেকে দৌঁড়ে এসে স্প্রিঙ্গারকে জড়িয়ে যে উৎসব করতে লাগল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা, তাতে সবার আনন্দই চোখে পড়ল। আর হতাশায় মাঠেই বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা বসে পড়লেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের হাল ধরে জেতানোয় ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন স্প্রিঙ্গারই। যা করতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, তা করে দেখালেন স্প্রিঙ্গার। দলকে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালেও তুললেন। এ অর্জনও বাংলাদেশের মাটিতেই মিলল। আর সেমিফাইনালেই আটকে গেল বাংলাদেশ।
×