ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু ও পান্থ আফজাল

বসন্তের হাওয়ায়, ভালবাসার দোলায়

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বসন্তের হাওয়ায়, ভালবাসার দোলায়

শীতের ঝড়াপাতাগুলোর মর্মর শব্দ ছাপিয়ে বৃক্ষপল্লবে নতুন পাতা উঁকি দেয়ার দৃশ্য; সত্যি অন্য সব দৃশ্যকে যেন হার মানায়। সেই সঙ্গে সোনাভরা রোদের ঝিলিক যদি আছড়ে পড়ে, তা হলে তো কথাই নেই। দূর থেকে প্রতিটি গাছকে মণিমুক্তার ভা-ার মনে হয়। প্রকৃতির এ অপরূপ লীলা বুঝি বসন্তেই সম্ভব। পাখির কলতান, ফুলের সমাহার মনকে আন্দোলিত করে তোলে। প্রকৃতি স্বরূপে বিকশিত হয়ে জানান দেয়, সময় এখন ঋতুরাজ বসন্তের। প্রকৃতির পালাবদল মনকে দোলা দিয়ে যায়। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে এ দেশকে। ষড়ঋতুম-িত এ দেশ সত্যিকার অর্থেই অপরূপ। একেক ঋতু একেক রূপ নিয়ে ধরা দেয় আমাদের মাঝে। পালাবদলের পরিক্রমায় ঘটে যায় নানা ঘটনা। কখনও প্রকৃতি রুদ্র মূর্তি ধারণ করে কখনও বা স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয়। দিন বদলায় সময় বদলায় বদলে যায় মন। সব বদল যেন প্রকৃতির নিয়মেই ঘুরপাক খায়। যতই দিন গড়াচ্ছে মানুষ ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ নিজেকে ব্যস্ত রাখছে নিজ নিজ কাজে। ঋতুর এ পরিবর্তন ব্যস্ত মানুষগুলোর যেন চোখ এড়িয়ে যায়। তারপরেও কিছু কিছু ঋতু চাইলেও চোখ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। অপূর্ব শোভা নিয়ে ধরা দেয় নিমিষেই। তেমনি এক ঋতু বসন্ত। প্রকৃতির পালাবদলে বইছে মৃদু মন্দ হাওয়া। এ যেন এক মন মাতানো পরিবেশ। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালীর মনেও লাগবে দোলা। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙালী মন। বাঙালী জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালীর স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালী মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালীর জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়ে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য উৎসব। বসন্তের হলুদ রাঙা দিনের সঙ্গে দ্রোহী তারুণ্যের বাঁধ ভাঙ্গা আবেগের জোয়ার মিশে একাকার বসন্তের প্রথম সকাল। তরুণীরা নব বসন্ত রঙে নিজকে রাঙাতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পোশাকে বসন্তকে ফুটিয়ে তুলতে মেয়েরা পরে বাসন্তী রঙের শাড়ি। সেই সঙ্গে খোঁপায় থাকে হলুদ ফুলের বেণী। ছেলেদের পরনে দেখা যায় হলুদ পাঞ্জাবি। বসন্ত নিয়ে কবি, লেখক, শিল্পীদের মাতামাতি ফুটে ওঠে কবিতার ছন্দে আর গানে গানে। আবেগী কবি, লেখক, শিল্পীদের বসন্ত বন্দনায় ধ্বনিত হয় গণমানুষের হৃদয়ের প্রতিধ্বনি। প্রকৃতির উচ্ছলতা দেখেই বোঝা যায় বসন্তের আগমনি বার্তা। একদিন যদি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায়, ক্ষতি কি। আর এ কারণেই হয়ত পহেলা ফাল্গুনের দিন ঢাকায় যত উদ্যান আছে সেখানে লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। আর এ ধরনের উৎসবে নিজেকে যদি রাঙানই না যায় তাহলে উৎসবটাই যেন বৃথা। বারো মাসে তেরো পার্বনে অভ্যস্ত বাঙালী শুধু উৎসব উদ্যাপনে ব্যস্তÑএ কথা অতীত হয়েছে অনেক আগেই। বাঙালী এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে ফ্যাশন সচেতন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পাওয়া যায় ফ্যাশনের ছোঁয়া। চলমান এ ধারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিটি উৎসবে-আমেজে ফ্যাশনের প্রভাব বিদ্যমান। আর সারা বিশ্বে উৎসবমুখর জাতি হিসেবে বাঙালীর আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে। যে কোন উৎসবে নিজেদের মেলে ধরতে কার্পণ্য করে না। উৎসবের রঙে রঙিন করে তোলে উৎসবের আকাশকে। আর এ যেন অন্য রকম এক বসন্ত। ভাল লাগার মাত্রা টা আরও বেশি হয়ে ধরা দেয়, কারন পহেলা ফাল্গুনের পরের দিনটিই হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন ডে অর্থাৎ ভালবাসা দিবস। আর এ দিনটি এখন আমাদের দেশে বেশ ঘটা করেই পালিত হয়ে থাকে। বসন্তের হাওয়ায় উড়ে আসছে ভালবাসা দিবস। ফাল্গুন ও বসন্ত তরুণ-তরুণীদের মন ভালবাসার দিবসটিকে আরও রঙিন করে তুলবে। বাংলাদেশে বসন্ত ঋতুর ক্ষণগণনা শুরু হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে, যার একদিন পর অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে। একদিন আগে পরে এ দুইটি দিন উদযাপিত হওয়ায় আমাদের দেশের যুবক-যুবতীদের উৎসব সংস্কৃতিতে মহোৎসবের রূপ পেয়েছে ভ্যালেন্টাইনস ডে। আর আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার যুবক-যুবতীদের কাছে এ দিনটি আরও উৎসবের আমেজ পায় চলমান অমর একুশের বইমেলার কারণে। মোবাইল ফোন বা অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে যোগাযোগের বিষয়টি সহজলভ্য হলেও পাল্টে যাচ্ছে ভালবাসার ধরন ও সংজ্ঞা। বসন্তবরণ উৎসব ও ভ্যালেন্টাইন ডে এদেশের তরুণ-তরুণীর জীবনে বিস্ময়কর প্রভাব রেখে চলেছে। বাসন্তী রঙের শাড়িতে পাঞ্জাবিতে বসন্তবরণ শহরকেন্দ্রিক এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত সবখানেই সেদিনই বসন্তের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। এটা কেবলই ভালবাসার এক উৎসব যা জীবনের অন্য কোনখানে এর আবেদন থাকে না। ভ্যালেন্টাইন ডে বিশ্বব্যাপী সর্বস্তরের মানুষকে ভালবাসার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা নিত্যনতুন সাজে মুখর করে রাখে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ভরপুর থাকে দিনের কার্যক্রম। কার্ড বিতরণ শুভেচ্ছা বিনিময় উপহার দেয়া-নেয়ায় দিনটি কাটে পরম আনন্দে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসার কোন আদর্শ সম্ভবত প্রভাবিত করে না কারও মন। তাই দিনটা একতরফা আনন্দের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে বাঙালীর জীবন ধারায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে চলেছে। উচ্ছল তরুণ-তরুণীরা অবশ্য আনন্দ ছাড়া দিনটির অন্য কোন তাৎপর্য খুঁজে পেতে চায় না। ফলে ভালেন্টাইনস ডে দেশে এক নির্ভেজাল আনন্দের প্রতীক হয়ে আছে। একটা সময় ছিল যখন ভালবাসা প্রকাশে যেমন অনেক ইতস্ততা ছিল তেমনি সামাজিকভাবে ব্যাপারটি এড়িয়ে চলাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে মনের কথা বলতে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দ্বিধাবোধ করে না। ব্যাপারটা এমন, অন্য সব কিছুকে পিছু হটিয়ে ভালবাসার পেছনে ছুটতে প্রস্তুত। আর এ ব্যাকুলতা থেকেই বোধ হয় ভালবাসা দিবসের উৎপত্তি; যা আজ আমাদের দেশে রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব ভালবাসা দিবস, যদিও আমাদের অর্থাৎ বাঙালীর নিজস্ব কোন উৎসব নয়; তারপরও আড়ম্বরপূর্ণভাবেই পালিত হয় দিবসটি। ভালবাসার নির্দিষ্ট কোন সীমা-পরিসীমা নেই, নেই কোন বয়স। তাছাড়া ভালবাসা বলতে শুধু প্রেমিক যুগলের ভালবাসাকেই বোঝানো হয়, তা কিন্ত নয়। বাবা-মায়ের ভালবাসা সন্তানের প্রতি, বড়দের ভালবাসা ছোটদের প্রতি, স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসাÑ সবই এর আওতাভুক্ত। তবে সব কিছুই ছাপিয়ে প্রেমিক যুগলের ভালবাসাই যেন ঠাঁই পায় ডায়েরির পাতায়। তরুণ-তরুণীর প্রেমকাহিনীই যেন ইতিহাস হয়ে ধরা দেয়। সেই প্রাচীন যুগ হতে আজ পর্যন্ত ভালবাসার যে আবেদন, তা অপরিবর্তিত। হয়ত কালের প্রবহমানতায় পাল্টেছে এর ধরন। যারা ভালবাসেন, ভালবাসা তাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী, চিন্তা ও মননে সর্বক্ষেত্রেই এক ধরনের মোহ তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। প্রেম-ভালবাসা তার নিজস্ব গতিপথ অনুযায়ী চলে। কখন কার ওপর ভর করে বসে ঠিক নেই। তারপরও এই আসক্তি আমাদের সবারই প্রিয়। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে প্রেম, ভালবাসার স্মারক হয়ে আছে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র উৎসব। ভ্যালেন্টাইনস ডে বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে হৃদয় আকৃতির মাঝে পাখাযুক্ত শিশুর চেহারার গ্রিক প্রেমের দেবতা কিউপিডের ছবি। আজকের এই ভালবাসার দিনটির শুরুর ইতিহাস অনেক পেছনের। আবার এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক কাহিনীও। ঐতিহাসিকরা বলছেন, ৩৮১ সালেও এ উৎসব চালু ছিল। তখন জেরুজালেমে চালু ছিল এ উৎসব। পরবর্তীতে ৪৯৬ সালে পোপ প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টানস ডে হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন। এবং সেই থেকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন উৎসব চালু হয়। ১৭১২ সালের একটি সুইডিশ ক্যালেন্ডারে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টানস ডে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে ভালবাসা- ও উর্বরতার সম্পর্কের ইতিহাসও অনেক পুরনো। উনিশ শতকেই উত্তর আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইনস ডে পালিত হয় ব্রিটিশ অভিবাসীদের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক হারে ভ্যালেন্টাইন কার্ড বিনিময় শুরু হয় ১৮৪৭ সালে ম্যাসাসুয়েটসের অরকেস্টারে। ইতিহাসবিদদের ভাষায়, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এই উৎসবের সূত্রপাত। চীনে ভালবাসা প্রকাশের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের আগে তারা বছরের দুই দিন পালন করত ভালবাসা দিবস। এখন তো চীনে ব্যাপক হারে দিবসটি পালিত হয়। পশ্চিমা ধাঁচে ১৪ ফেব্রুয়ারিই তারা ভালবাসা দিবস পালন করে। ইউরোপের সব দেশেই মহাসমারোহে তরুণ-তরুণীরা এ দিবস পালন করে। মার্কিনীদের মধ্যে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের হার বেশি। জরিপে দেখা গেছে, চার মার্কিনীর মধ্যে তিনজনই দিবসটি পালন করে। আমেরিকায় এ দিনে ১৬ কোটি কার্ড, ১৩ কোটি গোলাপ বিনিময় হয়। ভারতেও ভালবাসা দিবস পালিত হয় উৎসবের আমেজে। তবে আমাদের দেশের মতো ভারতেও তরুণ-তরুণীরা এ দিবস পালন করে বেশি। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের কাছেই ধরা দেয় প্রেমের বারতা। এই পৃথিবীতে প্রেমের এমন কিছু নিদর্শন রয়েছে যা আটপৌরে সাধারণ গতানুগতিক জীবনের গ-িকে ছাড়িয়ে সব মানুষের মুখে মুখে ফেরে প্রেমের অমর গাথা হয়ে। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম গাথা যুগে যুগে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলকে অনুপ্রাণিত করেছে, প্রেমের জন্য ত্যাগ স্বীকারে সাহস যুগিয়েছে। প্রেম-ভালবাসা তার নিজস্ব গতিপথ অনুযায়ী চলে। কখন কার ওপর ভর করে বসে তার ঠিক নেই। তবে এ কথা সত্যি যে, ভালবাসার প্রতি সবার আকর্ষণ তীব্র, সবার ভীষণ প্রিয় একটি বিষয় হলো ভালবাসা। যারা ভালবাসে না কিংবা যারা ভালবাসে, তাদের প্রত্যেকেরই মধ্যে ভালবাসার বসবাস থাকে। যার বসবাসের মধ্যেই রচিত হয় ভালবাসার স্বপ্ন গাথা। ভালবাসার এমন কিছু ভাবনা থাকে যা সময়ের দোলচালে কখনও কখনও মানুষের অনুভূতিকে থমকে দেয়। সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতার দেয়ালও ভালবাসার গতিকে রুদ্ধ করতে পারে না। আসলে দুটি মনকে এক সুতোয় বাঁধার জন্য প্রয়োজন কিছু সরল বিশ্বাসের। প্রেম মানেই লুকোচুরির গল্প। প্রেম যে যতই লুকোতে চায় ততই তা নানাভাবে অন্যের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায়। প্রতিদিনই আমরা চারপাশে তেমন অনেক ঘটনাই দেখি। প্রেম এমন এক ধরনের আগুন যা ইচ্ছা করলেই লাগানো যায় না। আবার ইচ্ছা করলেই ভালবাসার আগুন নেভানো যায় না। একবার যদি তা জ্বলে ওঠে তা তখন শুধুই জ্বলতেই থাকে। আবার নিভে গেলে হাজারো চেষ্টা করেও তা জ্বালানো যায় না। গালিবের এই উক্তি নিয়ে বিতর্ক চলে না। কেননা ভালবাসার পাঠসূত্র মেনে রোমান্সের উড়াল ঘুড়ির ওড়াওড়িতে বাধা নেই, তেমনিভাবে ভালবাসার বিরামহীন পথচলারও শেষ নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে এই পৃথিবীতে কেউ ভালবাসে না। ভালবাসার সঠিক কোন সংবিধান নেই যা মেনে কাউকে ভালবাসা যায়। ভালবাসা হিসাব কষে করা যায় না। এখানে কার্পণ্যের কোন অবকাশ নেই, বেহিসেবী হতে হয় ভালবাসলে। সময় পাল্টে গেছে। বর্তমানে মনের কথা বলতে এক রকম ব্যাকুল থাকে তরুণ প্রজন্ম। তাই তো আজকাল বেশ ঘটা করেই পালিত হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে অর্থাৎ ভালবাসা দিবস। জগতের সবকিছুকে পেছনে ফেলে মানুষ এখনও ভালবাসার পেছনে ছুটতে প্রস্তুত। এবারের ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে ভালবাসার উৎসবে মেতে উঠবে সবাই আবারও। ভালবাসার মানুষটিকে চমকে দিতে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে দিতে পুরো মুহূর্তকে রোমান্সের নানা রঙে রাঙিয়ে দিতে কত কিছুর আয়োজন করবে তার কোন হিসাব নেই। এখন আমাদের জীবনযাপন পুরোপুরি যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। এত যান্ত্রিকতার মাঝেও ভালবাসার বিচিত্র আনুষ্ঠানিকতায় মেতে উঠবে অনেক রোমান্টিক জুটি। দিনটিকে বর্ণাঢ্য, মিষ্টি অনুভূতিতে জড়ানো এবং স্মরণীয় করে তুলতে দু’জনে মিলে কত বিচিত্র পরিকল্পনা করেছেন হয়তবা, ভ্যালেন্টাইনস ডে’র একটি দিনের মধ্যে ভালবাসার আনুষ্ঠানিকতার ডামাডোলে হৃদয়ের একান্ত আবেগ অনুভূতিগুলোকে সীমাবদ্ধ করে ফেলার কোন মানে হয় না। একটি দিন নয়, বছরের সব দিনেই ভালবাসার রঙে রাঙিয়ে তোলা উচিত প্রত্যেকের জীবন। নির্দিষ্ট একটি দিনেই ভালবাসার উৎসবে মেতে থাকার পর যদি ভালবাসার মধুর মুহূর্তগুলো থেকে দূরে সরে যারা প্রেমহীন যান্ত্রিক জীবনে ডুবে যায় তাহলে সেই জীবনের কোন মূল্য নেই। ভালবাসা বলতে আমরা সাধারণত শুধু প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের সম্পর্ককেই বুঝে থাকি। আসলে কিন্তু তা নয়, এই পৃথিবীতে যে কাউকেই ভালবাসা যায়। সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালবাসা, ভাইবোনের ভালবাসা, মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসা ইত্যাদিতে ভালবাসা বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে ভালবাসা দিবস পালনের রীতি খুব বেশি দিনের নয়। মূলত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দিবসটি ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। বসন্তের প্রথম দিন এর পরেই ভালবাসার দিন। দুটি দিনই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আনন্দের, উৎসবের। শুধু তারুণ্যই নয়, প্রৌঢ় থেকে শুরু করে শিশু, কিশোর, মধ্যবয়সীদের মধ্যে ছড়িড়ে পড়ে এর আবহ। আমাদের দেশে বিগত প্রায় দেড় দশক আগে এ দিবস পালনের সূচনা হয়। তবে বাঙালী সংস্কৃতিতে বসন্ত উৎসব সেই অনাদিকাল থেকেই যাপিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাচারীরা দোলযাত্রা, বাসন্তী পূজা, হোলি উৎসবে প্রণয়কে মুখ্য করে রেখেছিল, তরুণ-তরুণীর ভালবাসাকে আপন করেছিল। আর এখন ভ্যালেন্টাইন ডে এ দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যেন অন্য রকম উন্মাদনা বিরাজ করে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ‘ভালবাসা দিবস’ উপলক্ষে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মোবাইল টেক্সট মেসেজ আদান প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কার্ড বা চকোলেটের দিন শেষ। টেলিফোন বা মোবাইলই হয়ে উঠছে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র প্রধান অনুষঙ্গ। ফাগুনের প্রথম দিনে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে পথে নামে তন্বী-তরুণীরা। নতুন ফুলে খোঁপা সাজায়। অসংখ্য রমণীর বাসন্তী রঙে রঙিন হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বরসহ পুরো রাজধানী। তরুণরাও আজ পরবে বাসন্তী রঙের পোশাক। প্রকৃতির ছোঁয়া নিতে তারাও বেরিয়ে পড়বে। বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিণত হবে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মিলনমেলায়। একে অন্যের হাতে তুলে দেবে প্রিয় কোন কবির কবিতার বই কিংবা ভালবাসার গল্প। অসাম্প্রদায়িক উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়বে সারা শহরে। পাশ্চাত্যের হাত ধরে বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ হওয়া উৎসবগুলোর মধ্যে প্রথম সারির দিবসটির নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। ইংরেজীতে সেন্ট বা ওয়ার্ল্ড ভ্যালেন্টাইনস ডে। যে নামেই ডাকি না কেন, দিনটি এখন বাঙালী তরুণ-তরুণীদের আকাক্সক্ষা পূরণের অন্যতম দিবসে পরিণত হয়েছে। হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুলপ্রায় প্রেমপিয়াসীরা এই দিনকে বেছে নেয় রঙের ছটায়, গোলাপের শুভেচ্ছা জানাবে মনের মানুষকে। যদিও ইতিহাসের পাতা ওল্টালে বাংলার ১৪ ফেব্রুয়ারি এক বেদনাময় দিন হিসাবে দেখা যায়। ভেসে ওঠে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো। বিশ্ব কাঁপানো সেই শহীদী আত্মদান ভ্যালেন্টাইনস ডের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে অনেকটা। যদিও বরাবরই ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, বসন্ত আগমনেই আসল ভ্যালেন্টাইনস ডে বলে এসেছে বাঙালীরা। হলুদ শাড়ির জড়তা, আড়চোখের দুষ্টুমিতে প্রেমের আলাদাই আমেজ তৈরি হয় যেন। বিশেষত বয়স যাদের মধ্যগগনে, তাদের কাছে স্মৃতিমধুর বসন্ত মানেই বাসন্তীদের নিয়ে বসন্তদের মেতে ওঠা। আসুন আমরা কামনা করি যে, একটি বা দুটি দিন বা প্রেমিক-প্রেমিকা, বা তরুণ-তরুণীর সীমাবদ্ধতা ভেঙ্গে, ভালবাসা বিস্তৃত হোক পরিবার, বাবা-মা, ভাই বোন, বন্ধু প্রতিবেশী সকলের মাঝে বছরব্যাপী। এই বসন্তে ভালবাসার স্বর্গীয় আভা ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীর আনাচে কানাচে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে দৃঢ় হোক ভালবাসার বন্ধন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি এগিয়ে যাক ভালবাসাময় হাত। ছবি : সৈয়দ রাসেল, মডেল : আশিক চৌধুরী ও ভাবনা ড্রেস : ভাসাভী ইউএসএ, কোরিওগ্রাফি : বিডি মিজু
×