ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন দুই লাখ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন দুই লাখ

বিকাশ দত্ত ॥ দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের মামলার জটও বেড়ে যাচ্ছে। দুই লাখ মামলার বোঝা নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোর কার্যক্রম চলছে মন্থর গতিতে। এসব ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় লোকবলেরও তীব্র সঙ্কট রয়েছে। পর্যাপ্ত বিচারক এবং লোকবল না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। বিচারকের স্বল্পতার কারণে এ সমস্ত মামলা জট হচ্ছে বলে জানা গেছে। সারাদেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রায় দুই লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনেও মামলার জট লেগেছে। বর্তমানে ৬১টি জেলায় মোট ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮৭৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ১৯৫০ এর ১৪৫ অ(১) ধারার আলোকে বাংলাদেশে মোট ৪২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সারাদেশে ৪২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হলেও এর বিপরীতে ১৩টি যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকের পদ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ট্রাইব্যুনালে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদায় ১২ জন বিচারকের পদায়ন করা হয়েছে। অন্য ৫২টি জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারের জন্য কোন বিচারক নেই। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে মোট ২ লাখ ২৪ হাজার ৮২৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৭৯০২টি, জামালপুরে ১৭৯১৭, সাতক্ষীরায় ৪৯৫৯, গোপালগঞ্জে ৪৮৪০, নোয়াখালীতে ৪৪৩৯, বাগেরহাটে ৪২৮৭, গাইবান্ধায় ৭৩০, মৌলভীবাজারে ৭২৭, চাঁদপুরে ৮৩৮১, সুনামগঞ্জে ১০৬, নেত্রকোনায় ২১৯১০, বরিশালে ২৮৪৫, সিরাজগঞ্জে ১০২১, টাঙ্গাইলে ৯০৪৫, কিশোরগঞ্জে ৪৩৯৬৫, রংপুরে ১৫৯৬, জয়পুরহাটে ১০৩০, নীলফামারীতে ১৬৪, শেরপুরে ৬৫৩১, মাগুরায় ১৭২১, খুলনায় ৪৩২৪, বগুড়ায় ৪০৮৬, যশোরে ৩৫৪৮, কুড়িগ্রামে ৫২০, পিরোজপুরে ১৯২১, লালমনিরহাটে ১৯৮, নড়াইলে ৩৬৬, হবিগঞ্জে ১৯১৯, সিলেটে ১১৯০, ময়মনসিংহে ৩১৬৫৯, ফরিদপুরে ২১৭৬, বরগুনায় ৬২২৬, লক্ষ্মীপুরে ৩০৯৭, কুমিল্লায় ৩৫২৪, ঝালকাঠিতে ১৪৯৬, ভোলায় ৫৭১, শরীয়তপুরে ১৫০৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৪৫৪, ঝিনাইদহে ৬৫৫ এবং পাবনায় ৪০৮৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সাল থেকে বিআরএস জরিপ শুরু হয়েছে। এখনও সারাদেশে এই জরিপ শেষ হয়নি। জরিপের পর্চা আর ম্যাপে হাজার হাজার ভুল। কারও জমি পর্চায় আছে তো ম্যাপে নেই; ম্যাপে আছে তো পর্চায় নেই। আবার ম্যাপে থাকলেও শত বছর ধরে যে চৌহদ্দিতে মালিক সম্পত্তি ভোগ-দখল করে আসছেন, সেভাবে নেই। এভাবে দেখা দিয়েছে নানা ত্রুটি। যার ফলে নতুন নতুন মামলা সৃষ্টি হচ্ছে। ময়মনসিংহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রায় ২৬ হাজার মামলার জট তৈরি হয়েছে। ভূমি রেকর্ড সংশোধনের জন্য ২০১২ সালের আগস্টে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রথম এক বছর মামলা কম থাকায় কোনরকমে চলেছে ট্রাইব্যুনালের কাজ। কিন্তু ২০১৩ সালের আগস্টে বিচারক বদলিজনিত কারণে চলে যাওয়ার পর গত ১১ মাসে এই ট্রাইব্যুনালে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করেছেন নয়জন বিচারক। ঘন ঘন বিচারক পরিবর্তন এবং লোকবল কম থাকায় মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা কমে যাওয়ায় ট্রাইব্যুনালে সৃষ্টি হয়েছে মামলাজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে প্রতিবছরই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে মামলা আছে প্রায় ২৬ হাজার। ১১ মাসে ৫০টিরও কম মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রতিদিনই বাড়ছে মামলার সংখ্যা। গত ৩০ জুন পর্যন্ত এ আদালতে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯২৬টি। এছাড়া আদালতটিতে গড়ে প্রতিদিন নতুন করে ১৫-২০টি মামলা যুক্ত হচ্ছে। ফলে আদালতটির একজন বিচারক পাহাড়সম এ মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) রেকর্ডে ছোট-বড় ভুল-ত্রুটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এসব জমি ক্রয়-বিক্রয়, দান কিংবা ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জমির মালিকরা। খুলনায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ১২ আগস্ট। দুই লাখ মামলার বোঝা নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোর কার্যক্রম চলছে মন্থর গতিতে। এসব ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয় লোকবলেরও তীব্র সঙ্কট রয়েছে। পর্যাপ্ত বিচারক এবং লোকবল না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে জানা যায়, স্টেট এ্যাকুইজিশন এ্যান্ড টেনান্সি এ্যাক্ট-১৯৫০ (সংশোধিত-২০০৪)-এ ল্যান্ড সার্ভে আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা গঠন না করায় চলতি বছরের ৪ মার্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। আইন সচিব ও ভূমি সচিবকে এ বিষয়ে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে এই দুই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ল্যান্ড সার্ভে আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০১১ সালে সংশোধনীর পর প্রায় ৯ লাখ মামলা ইতোমধ্যে দায়ের হয়েছে। ২০১৪ সালে মোকদ্দমার বিবরণীতে দেখা যায় যে, ১ জানুয়ারি মোকদ্দমা ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৭টি। নতুন দায়ের হয়েছে ৫৪ হাজার ৫২৫টি। সর্বমোট ৩ লাখ ৬৩২টি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬টি এবং বিচারাধীন রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০২টি। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন কার্যকর হলেও এ আইনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ বিচার নিষ্পত্তির জন্য কোন বিচারকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বিদ্যমান আদালতগুলোতে কর্মরত যুগ্ম জেলা জজ ও সিনিয়র সহকারী জজগণ তাদের সাধারণ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে উক্ত মামলাগুলো পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজগণ নিজ দায়িত্বে অতিরিক্ত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ মামলা হিসেবে দেখা যায়Ñ ঢাকায় ৮৮৬৩টি, জামালপুরে ২৮৮, সাতক্ষীরায় ৭০১০, মানিকগঞ্জে ১৮৯৮, গোপালগঞ্জে ৩৩৮৯, নোয়াখালীতে ২২৩৮, বাগেরহাটে ৪১৬৭, নাটোরে ১০৭১, গাইবান্ধায় ২৩৬, মৌলভীবাজারে ২০২৩, চাঁদপুরে ১০৮২, চট্টগ্রামে ১০২৬৭, কক্সবাজারে ২৫৮, মেহেরপুরে ১২৭, সুনামগঞ্জে ১৬৭৬, নেত্রকোনায় ১৩৯১, বরিশালে ৫১৮৭, সিরাজগঞ্জে ২৯০৩, পটুয়াখালীতে ৮৯১, টাঙ্গাইলে ১৪১৪, কিশোরগঞ্জে ৬৯৮, নারায়ণগঞ্জে ২৫৮২, রংপুর ১৭৭, মুন্সীগঞ্জে ২৮২৫, জয়পুরহাটে ৩৮৯, নীলফামারীতে ৪৩৯, শেরপুরে ১৫২২, মাগুরায় ১৮০, রাজবাড়ীতে ১৪৭২, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪২, খুলনায় ৬৬৮১, বগুড়ায় ১২০৭, নওগাঁয় ১৯০২, রাজশাহীতে ৫২৬, যশোরে ২৫৬৪, পঞ্চগড়ে ৪৪১, কুড়িগ্রামে ১০৭৮, পিরোজপুরে ২৬১৮, লালমনিরহাটে ১১৫, দিনাজপুরে ১৫৪৮, নড়াইলে ১৬২৫, হবিগঞ্জে ৪০২৭, চুয়াডাঙ্গায় ১৪৬, সিলেটে ১১৯০, ময়মনসিংহে ৩১৬৫৯, ফরিদপুরে ২১৭৬, বরগুনায় ৬২২৬, লক্ষ্মীপুরে ৩০৯৭, কুমিল্লায় ৩৫২৪, ঝালকাঠিতে ১৪৯৬, ভোলায় ৫৭১, শরীয়তপুরে ৩১৫২, মাদারীপুরে ১৫০৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৪৫৪, ঝিনাইদহে ৬৫৫ এবং পাবনায় ৪০৮৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
×