ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জোরালো ভূমিকা রাখে সিলেটের পত্রপত্রিকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জোরালো ভূমিকা রাখে সিলেটের পত্রপত্রিকা

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সোচ্চার ছিল তৎকালীন সময়ে সিলেট থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো। এসব গণমাধ্যম অনেক ঝুঁকি নিয়ে সেসময় সংবাদ ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করে। এমনকি সম্পাদকীয়তেও বাংলা ভাষার পক্ষে পত্রিকার মতামত তুলে ধরা হয়। নগরীর দরগাহ গেট এলাকায় অবস্থিত সিলেট মুসলিম সাহিত্য সংসদকে কেন্দ্র করেই সিলেট অঞ্চলে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। মুসলিম সাহিত্য সংসদের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় ‘আল ইসলাহ’। আর এ মাসিক সাহিত্যপত্রটি প্রকাশের গুরুদায়িত্ব পালন করেন শিক্ষক নূরুল হক। ১৯৪৭ সালের আগস্ট সংখ্যায় নূরুল হক সম্পাদিত আল-ইসলাহর সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়- ‘বাংলার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হউক ইহা কখনো সমর্থন করিতে পারি না।’ এদিকে পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র দু’মাস পর ৯ নবেম্বর অনুষ্ঠিত কেমুসাসের সাহিত্য সভার মূল আলোচ্য ছিল রাষ্ট্রভাষা। সভায় লেখক মুসলিম চৌধুরী তার পঠিত প্রবন্ধে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেন- যা আল ইসলাহ নবেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। মুসলিম চৌধুরীর এ প্রবন্ধই ছিল পূর্ব পাকিস্তানে বাংলার পক্ষে প্রথম পর্যায়ের কোন দালিলিক উপস্থাপনা। পরবর্তীতে নূরুল হক সিলেটের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ৩০ নবেম্বর আলিয়া মাদ্রাসা হলে সুধী সমাবেশের আয়োজন করেন। সভাপতিত্ব করেন রস-সাহিত্যিক, অনুবাদক মতিন-উদ-দীন আহমদ। প্রধান বক্তা ছিলেন বহু ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, পর্যটক ড. সৈয়দ মুজতবা আলী। ঐদিন সমাবেশে প্রায় দুই হাজার লোকের সমাবেশ হয়। একপর্যায়ে উর্দু সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রধান বক্তা তার বক্তব্য সমাপ্ত করতে পারেননি। পরে অবশ্য কলকাতার চতুরঙ্গ এবং আল ইসলাহ পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সেটাই ছিল প্রথম সমাবেশ। আর একই দাবিতে তমুদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে প্রথম সভা হয়েছিল ’৪৭-এর ৬ ডিসেম্বর। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কিছুদিন পরই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি সিলেটেও সময়ের সঙ্গে চরম রূপ ধারণ করে এ আন্দোলন। মুসলিম সাহিত্য সংসদের মাসিক মুখপত্র আল ইসলাহতে সম্পাদকীয় ছাপার মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। সে সময় আল ইসলাহ ছাড়াও সিলেট থেকে প্রকাশিত অন্যান্য পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ‘নওবেলাল’ ও সাপ্তাহিক ‘জনশক্তি’ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যে ভূমিকা করেছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘জনশক্তি’ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষার যোগ্যতা নিয়ে তৎকালীন সময়ে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবেদন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সম্পাদকীয় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। বিনোদ বিহারী চক্রবর্তীর সম্পাদনায় প্রকাশিত এ পত্রিকাটি কখনও এ ব্যাপারে পিছুটান দেয়নি। ১৯৪৮ সালের শুরুতে দেশে দৈনিক পত্রিকার অভাব ছিল। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেওয়ান মুহম্মদ আজরফের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সপ্তাহিক ‘নওবেলাল’। এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন রাজনীতিবিদ মাহমুদ আলী। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বাংলার পক্ষে এ পত্রিকাটিও ছিল সোচ্চার। সম্পাদকীয়র পাশাপাশি পত্রিকাটিতে প্রায় সময় ছাপা হতো বাংলাপ্রেমী প্রবন্ধ-নিবন্ধ। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল ঐ দিনগুলো সিলেট থেকে আরও প্রকাশিত হতো মাওলানা সাখাওয়াতুল আম্বিয়া সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘আনছার’ এবং এমএ বারি সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘আযান’। এ পত্রিকাগুলো বাংলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছাপে বিভিন্ন প্রতিবেদনের পাশাপাশি প্রবন্ধ-নিবন্ধ। Ñসালাম মশরুর, সিলেট থেকে
×