ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুসাইন মিঠু

ভাল লাগা-ভালবাসার ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভাল লাগা-ভালবাসার ক্যাম্পাস

জীবনের বিশটি ফাগুন পেরিয়ে গেছে নীরবে। কিন্তু এবার বসন্তবরণে প্রিয় মুখের আনাগোনায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। তাই প্রিয় ঋতু, প্রিয় মানুষ আর বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে তার বর্ণিল পরিকল্পনা। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ রাফিদের কথা। ভালবাসা দিবসে ভালবাসার মানুষকে খুশি করতে বিস্তর পরিকল্পনা তার। দুজনে মিলে কিনেছে পলাশ রাঙ্গা পাঞ্জাবি আর আবির ছাপে রঙ্গিন শাড়ি। সকালে হল থেকে বেরিয়ে রাফিদের গন্তব্য তার বান্ধবী শেফার আবাসস্থল রোকেয়া হল। হাতে একুশটি লাল গোলাপ আর প্রিয় মানুষের জন্য উপহার রিনিঝিনি শব্দে বেজে ওঠা নূপুর। সূর্যোদয় থেকে শুরু হয়ে মতিহারের হরিৎ অরণ্যে দেখা মেলে অফুরান ভালবাসার। আর পড়ন্ত বিকেলে পদ্মাপাড়ে সোনালি আলোয় পূর্ণতা পায় ভালবাসা দিবসে ডানা মেলা স্বপ্নিল মনগুলো। ভালবাসা দিবসের গল্পে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহিন শিমু বলেন, আসলে আমাদের জীবনে সবকিছুই আছে, তারপরও বিশেষ একজনের প্রয়োজন হয়। আর আমি মনে করি, এই ভালবাসা দিবসটিও বিশেষ মানুষটির জন্যই বিশেষ গুরুত্বের। আসলে পরস্পরের প্রতি ভালবাসার জন্য চাই অকুণ্ঠ সমর্থন, যা না থাকলে কখনই ভালবাসা হতে পারে না। ভালবাসার অর্থটা যেন মনের বিশ্বাসের আবেদন। প্রতিটি মানুষ তার ভালবাসার অর্থ খুঁজতে কখনও কার্পণ্য করে না। আর যখন ভালবাসার জন্য বিশেষ দিবস থাকে তখন তো ভালবাসার মাত্রাটা আরও বেড়ে যায়। প্রতিটি দিনই তো ভালবাসার দিন, তবে বিশেষ মানুষগুলোকে ভালবাসার জন্যই এই ভালবাসা দিবসের আয়োজন। ভালবাসা দিবস কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মইনুল হোসেন। কথা হয় সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আক্তার জেনির সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি মনে করি না এই দিবস শুধুমাত্র তরুণ-তরুণীর জন্য। এই দিন প্রিয় মানুষগুলোকে একসঙ্গে কাছে পাওয়ার অন্যতম দিন। তাই একটু পুরনো স্মৃতির পাতায় ঢেউ খেলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, এই দিনটাতে যদি প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়া যায় তবেই তা অর্থবহ হয়। তাই ভালবাসা খুঁজে পায় নিসর্গ প্রেমে গহনচারীর নির্মল ভালবাসার স্বপ্নগুলোকে। এমনকি অভিমানে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কও নতুন করে দানাবেঁধে অঙ্কুর ঘটায় অমলিন ভালবাসার। কিছুদিন আগেও ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ ছিলেন শামীম রহমান। পড়াশোনা শেষে জীবিকার তাগিদে গত ডিসেম্বরে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকায়। ফেলে গেছেন অসংখ্য স্মৃতির ডালি। সেই সঙ্গে একটি প্রিয় মুখ। দুই বছর যাকে একদিনের জন্যও না দেখে থাকেননি। প্রেমিকা চতুর্থ বর্ষে পড়ায় রাবিতে থাকতে হবে আরও কিছুদিন। গত ভালবাসা দিবসেও দুজনে দুজনার হয়ে সময় কাটিয়েছিলেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। মুঠোফোনে কথা হলো তার সঙ্গে। বললেন, ‘দিনটি আমাদের জন্য ছিল অন্যদিনের থেকে আলাদা। আমি পাঞ্জাবি আর ও শাড়ি পরে দুজনে মিলে বেড়িয়েছিলাম সারাদিন। কিন্তু এ বছর সে সুযোগ আর হবে না। তাতে কী, কথা হবে মুঠোফোনে। মনটা থাকবে প্রিয় ক্যাম্পাসে।’ তবে শুধু এদিনেই নয়, বছরের প্রতিটি দিনই হোক ভালবাসাময়- এমনটিই আশা তার। আরেক শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের লিপিকা বিশ্বাস বলেন, ‘ভালবাসার ভিত্তিই হলো বিশ্বাস। যদি ভালবাসায় একে অপরের প্রতি বিশ্বাস না থাকে তবে সেটা ভালবাসা নয়। শর্তারোপ করে কখনও ভালবাসার অর্থ বোঝা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। প্রত্যেক বছর এই দিনটাতে সবাই একটু ভিন্নভাবেই প্রিয়জনকে কাছে পেতে চায়। আমারও এই দিনটাতে বিশেষ পরিকল্পনা আছে।’ মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। কথা শেষে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, ‘প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বললাম। আসলে ভালবাসা প্রতিটি মুহূর্তের, এটা কোন দিবসের গ-িতে অনুভব করা যায় না। তবে এই দিনটা প্রিয় মানুষকে একটু ভিন্নভাবে কাছে পাওয়ার দিন। এই ভালবাসা দিবসেই প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে চমকে দেয়া যায়। একটু বাইরেও ঘুরতে যাওয়া যায়। সত্যিই এই দিনটাকে একটু আলাদাভাবেই প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো যায়।’ অজস্র রক্ত রাঙ্গা গোলাপ আর হাসনাহেনার সুবাসে ভরপুর থাকে রাবির শহীদ মিনার চত্বর। সেখানে দিনভর চলে প্রেমিক-প্রেমিকার আড্ডা। বাগানের এক কোনায় হাতে হাত রেখে গল্প করছে রাজ আর অর্পিতা। ভালবাসা দিবস নিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞাসা করতেই এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে দুজনের ঠোঁটের কোনায়। আর এই হাসির কারণ ব্যাখ্যা করেন অর্পিতা নিজেই। বলেন, ‘গত বছরের শুরুতে ফেসবুকে পরিচয় হয় আমাদের দুজনের। এরপর মোবাইলে কথা। ওর হাবভাবে বুঝতাম ও আমাকে পছন্দ করে, কিন্তু দুজনই মুখ খুলতাম না। এভাবে এক মাস পার হতেই না বলা কথাটিকে বলার বাধ্যবাধকতায় নিয়ে যায় ভালবাসা দিবস। বিকেলে দেখা, এরপর ফোনে কথা আর পরে এসএমএসে সে জানায় যে আমাকে ভালবাসে। আমিও আর বেশি সময় না নিয়ে মনের কথাটিকে খুদেবার্তায় পাঠিয়ে দিই প্রিয় মানুষটিকে। তাই আমাদের জীবনে প্রতিটি ভালবাসা দিবস থাকবে প্রথম ভালবাসার স্মৃতি হয়ে। এরপর থেকে এক বছর হলো দুজনে একই পথে হাঁটছি আর ভবিষ্যতেও হাঁটব।’ তবে ভালবাসা দিবস শুধু প্রেমিক যুগলের- এ কথা মানতে নারাজ অনেকেই। তাদের মতে এটা সর্বজনীন ভালবাসার দিন। তাই অনেক সময় বন্ধুরা আবার বিভিন্ন সংগঠন মিলে আয়োজন করছে নানা অনুষ্ঠানের। তাপসী রাবেয়া হলের শিক্ষার্থী কেয়া, জয়ি, তৃষা- তিন বান্ধবী মিলে ভালবাসা দিবসে পরিকল্পনা করেছেন পিকনিক করার। সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নার কাজ আগে শেষ করবেন তারা। রান্না করবেন তিনজনের পছন্দের কিছু খাবার। এরপর হলের ভেতরে পুকুরে গোসল করবেন, সাঁতার কাটবেন বান্ধবীরা মিলে। গোসল শেষে হলের মাঠে রোদে বসে একসঙ্গে খাওয়া সেরে ঘুরতে বেরোবেন ক্যাম্পাসে। আর পছন্দের জায়গাগুলোতে ছবি তুলে বাঁধিয়ে রাখবেন স্মৃতির মণিকোঠায়। এগুলো সাক্ষী হয়ে থাকবে তাদের টক-ঝাল-মিষ্টি বন্ধুত্বের। ভালবাসা দিবসে সবাই মিলে মজা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবনের সংগঠনগুলো মিলে আয়োজন করছে চড়ুইভাতির। অল্প করে চাঁদা, সবাই মিলে রান্না আর বিস্তর গান-গল্পের আড্ডার পরিকল্পনা এঁটেছেন তারা। প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে অনেকেই ছুটে এসেছেন এই ক্যাম্পাসে। শত ক্রোশ দূরত্ব অতিক্রম করে তারা ছুটে এসেছেন বিশেষ দিনে জীবনের কাক্সিক্ষত মানুষটিকে একবার দেখতে। হাজারো মনের চাওয়া-পাওয়া প্রজাপতি ডানায় ভর করে রং ছড়ায় অনন্ত যৌবনা এই ক্যাম্পাসে। তাই প্রতিনিয়ত হরিৎ অরণ্যে রঙ্গিন ভালবাসার জাল বুনে চলে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।
×